• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
৯০তম জন্মদিনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

এটাই হয়তো আমার জীবনের শেষ বক্তব্য


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২০, ২০১৯, ০৭:৩১ পিএম
এটাই হয়তো আমার জীবনের শেষ বক্তব্য

ঢাকা : আজ (২০ মার্চ) নিজের ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে দলের নেতাকর্মী ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে নিয়ে ৯০ পাউন্ডের এক বিশালাকৃতির কেক কাটেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের।

বুধবার (২০ মার্চ) দুপুরে গুলশানের ইমানুয়েল কনভেনশন সেন্টারে তার জন্মদিন পালন করা হয়। ৬৫ হাজার টাকার বিশালাকৃতির কেকটি মি. বেকারের বনানী শাখায় অর্ডার দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

কেকের ওপর লেখা ছিল, ‘জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু এরশাদের শুভ দিনে অনেক ভালোবাসা।’

অনুষ্ঠানে হুইল চেয়ারে চড়ে উপস্থিত হন এরশাদ। এসময় দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান।

এসময় নিজেকে নির্যাতিত-নিপীড়িত দাবি করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বলেছেন, এটাই হয়তো আমার জীবনের শেষ বক্তব্য।

জন্মদিনের অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বলেন, আমার মতো নির্যাতিত, নিপীড়িত নেতা বাংলাদেশে আর একজনও নেই। এটাই হয়তো আমার জীবনের শেষ বক্তব্য।

তিনি আরো বলেন, স্ব-ইচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পর পাঁচদিনের মাথায় আমাকে জেলে যেতে হয়েছে। আমার ওপর নানারকম অত্যাচার নির্যাতন চালানো হয়েছে। মনে জোর ছিল বলে টিকে আছি। কেউ আমাকে দমাতে পারেনি।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে এরশাদ বলেন, আমার শেষ কথা জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করুন। দলকে আগামীতে ক্ষমতায় আনুন।

এদিকে এরশাদের ৯০তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তার চিকিৎসা নিয়ে হট্টগোল হয়। এতে বলা হয় দেশে নয় বিদেশে এরশাদকে ভুল চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

সেখানে এরশাদের স্ত্রী ও দলের কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ তার বক্তব্যের শুরুতে বলেন, ‘শারীরিকভাবে পল্লীবন্ধু এরশাদ কিছুটা অসুস্থ আছেন। আমরা সবাই তার জন্য দোয়া করলে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।’ তখন জাতীয় যুব পার্টির নেতা মাহমুদ আলম বলেন, ‘সিএমএইচে এরশাদকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’ এসময় মঞ্চের সামনের সারিতে বসা অন্য নেতারাও একই অভিযোগ করে হট্টগোল শুরু করেন।

এ অবস্থায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে রওশন এরশাদ বলেন, ‘তাদের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে কথা বলা অন্যায়। আর্মিদের নিয়ে খারাপ কথা বলবেন না। আমি সিএমএইচের ডাক্তারদের জিজ্ঞাসা করেছি, তারা বলেছেন, এখানে ভুল চিকিৎসা দেওয়া হয় না। ডাক্তারদের দোষ দেবেন না।’

রওশন এরশাদ আরও বলেন, ‘এরশাদকে ভুল চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, এটা শুনে সিএমএইচের ডাক্তাররা ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। তার ভুল চিকিৎসা হয় নাই।’ তবে দোয়া মাহফিল শেষে দলটির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশে নয়, সিঙ্গাপুরে এরশাদের ভুল চিকিৎসা হয়েছে।’

অনুষ্ঠানের শেষে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশে বা সিএমএইচে কোথাও এরশাদের ভুল চিকিৎসা হয় নাই। তিনি এখনও অসুস্থা বোধ করলে রাতে ১২টা বাজলেও সিএমএইচে চিকিৎসা নিতে যান।’

তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুর এরশাদের ভুল চিকিৎসা হয়েছে। সেখানে তার বাইপাস সার্জারি ভুল হয়েছে। তারপর তারা সেটা বুঝতে পেরে ওষুধ পরিবর্তন করে দেন। এখন তিনি আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠছেন।’

এরশাদের জন্মদিনের এ অনুষ্ঠানে দলটির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। দলের পক্ষ থেকে বড় একটি কেক কেটে তার জন্মদিন উৎযাপন করা হয়।

প্রসঙ্গত, ১৯৮২ সালে বিচারপতি সাত্তারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতি হন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ক্ষমতায় থেকেই প্রতিষ্ঠা করেন তার দল জাতীয় পার্টি। সম্মিলিত বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন এই স্বৈরশাসক।

পরে বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এরশাদকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নেয়। এরপর ক্ষমতায় আসেন খালেদা জিয়া। পতনের পর এরশাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে ৪২টি মামলা হয়।

তিনটি মামলায় তার সাজার আদেশ হয় এবং একটিতে সাজা ভোগ করেন। খালেদা সরকারের মেয়াদের পুরোটাই জেল খাটতে হয় এরশাদকে। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ১৯৯৭ সালের জানুয়ারিতে কারামুক্ত হন তিনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!