• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এফিডেভিট করে বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন মেয়ে


নওগাঁ প্রতিনিধি আগস্ট ১৯, ২০১৯, ০২:৩৭ পিএম
এফিডেভিট করে বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন মেয়ে

নওগাঁ: নওগাঁয় এফিডেভিট করে বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন রজনী আক্তার (২১) নামে এক কলেজছাত্রী। তিনি বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার ছাতনী মাতোপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম এবং মৃত জুলেখা বানুর মেয়ে। রজনী সান্তাহার সরকারি কলেজের ডিগ্রী দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।

রোববার নওগাঁ জজ কোর্টের আইনজীবী হারুন অর রশীদ এবং নোটারি পাবলিক মো. সোলাইমান আলী চৌধূরী স্বাক্ষরিত ৩শ টাকার দলিলে এফিডেভিটের মাধ্যমে বাবার সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন তিনি।

এফিডেভিট সূত্রে জানা যায়, রজনী আক্তারের মা জুলেখা বানু গত ২০০৭ সালে মারা যান। তারা ৩ ভাই-বোন। তিনি সবার বড়। মা মারা যাওয়ার পর ছোটবোন জান্নাতুন তার চাচার কাছে পালিত হচ্ছে। ছোট ভাই বিজয় মুরগির ফিডের একটি দোকানে থাকে। আর বাবা জাহাঙ্গীর আলম নতুন করে বিয়ে করে সংসার করছেন।

রজনী আক্তার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশুনা করা অবস্থায় তার বাবা লেখাপড়ার সব খরচ বন্ধ করে দেন। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় পড়াশুনা করে এসএসতিতে জিপিএ-৫ পান। টিউশনি করে নিজের খরচ চালান। সেইসঙ্গে বাবাকে সহযোগিতা করেন। কিন্তু তার বাবার টাকার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবাসী ছেলেদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চাপ প্রয়োগ করেন তাকে। এতে রাজী না হওয়ায় তার ওপর চলত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।

এমন অবস্থায় ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর নওগাঁ সদর উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের প্রবাসী সৈকত আলীর (৫৫) সঙ্গে দুদিন রজনীকে একটি ঘরে আটকে রাখেন তার বাবা। এরপর ২৭ অক্টোবর ওই বৃদ্ধের কাছ থেকে দু’দফায় ৭০ হাজার টাকা নিয়ে জোর করে তার সঙ্গে রজনীর বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পর থেকে বাবা জাহাঙ্গীর আলম তার জামাইয়ের কাছে বিভিন্ন সময় টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে স্বামী তাকে গালিগালাজ ও মারপিট করতেন। ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষাও দিতে দেননি।

Naogaon-Rajoni-Pic_02

রজনীর স্বামী সৈকত আলী একাধিক বিয়ে করেছেন। তার ছেলে ও মেয়ে আছে।

অপরদিকে টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় একাধিক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে মেয়ের সংসার ভেঙে দেয়ার হুমকিও দেন রজনীর বাবা। এমনকি গোপনে মেয়ের নগ্ন ছবি সংগ্রহ করে ব্ল্যাকমেইল করতে চান ওই লোভী বাবা।

এসবের মধ্যেই গত বছরের ৯ নভেম্বর মালয়েশিয়া যান স্বামী সৈকত আলী। এরপর থেকে রজনী আক্তার তার নানার বাড়িতে মামাদের আশ্রয়ে রয়েছেন। প্রায় একমাস হলো সৈকত আলী বাড়িতে এসেছেন এবং রজনী আক্তারকে নিতে চান। কিন্তু তিনি আর বৃদ্ধ স্বামীর সংসার করতে চান না। একইসঙ্গে বাবার অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।

এ বিষয়ে রজনী আক্তারের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার মেয়েকে কোনো প্রকার নির্যাতন করিনি। টাকা নিয়েও প্রবাসীর সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়নি। মেয়ে নিজে থেকেই বিয়ে করেছে। গত চারমাস থেকে মেয়ের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। এখন যদি এফিডেভিট করে আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাহলে আর কী করার।

রজনী আক্তারের স্বামী সৈকত আলী বলেন, মেয়ের বাড়িতে ঘটক পাঠিয়ে প্রস্তাব দিয়ে বিয়ে করেছি। বিয়েতে ১ লাখ টাকা মোহরানা দেয়া হয়েছিল। আমি বিদেশ যাওয়ার পর চিকিৎসার নাম করে স্ত্রী রজনী আক্তার বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। দেশে এসেছি প্রায় একমাস হলো। স্ত্রীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নাই। এখন স্ত্রী যদি চায় তাকে গ্রহণে আমার কোনো আপত্তি নাই। তবে মেয়ের বাবা চিটার প্রকৃতির মানুষ বলেই জানি।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!