• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এবার ডিসির সহযোগীতায় যৌনকর্মীর জানাযা হল দৌলতদিয়ায়


রাজবাড়ী প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২০, ০৬:৫৭ পিএম
এবার ডিসির সহযোগীতায় যৌনকর্মীর জানাযা হল দৌলতদিয়ায়

 রাজবাড়ী: আবারো যৌনকর্মীর জানাযা নামাজ পড়ানো হয়েছে। পরে তাকে নির্দিষ্ট কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পতীতাপল্লীতে এই ঘটনা ঘটলো।

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত দশ টার দিকে দৌলতদিয়া ইউনিয়নের যৌনপল্লি সংলগ্ন গোরস্থানের মাঠে রিনা বেগমের (৫৫) জানাজার নামাজ হয়। পরে তাকে মুসলিম ধর্মীয় রীতিতে দাফন করা হয়। রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম বারের উদ্যোগে গোয়ালন্দ থানা জামে মসজিদের ইমাম আবু বক্কর সিদ্দিক এ জানাযা নামাজ পড়ান।

জানাজায় অংশ নেন রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসক ও অপরাধ) মো. সালাউদ্দিন,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ হেডকোয়াটার্স) মো. ফজলুল করিম,গোয়ালন্দ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুন, দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমানসহ স্থানীয় অনেকে।

মসজিদের ইমাম মো. আবু বক্কার সিদ্দিকি বলেন,ধর্মীয় রীতে প্রত্যেক নর-নারীর মৃত্যুর পর জানায়া দেয়া বা দোয়া করা বৈধ।

রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, ‘ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মো. হাবিবুর রহমান স্যার দৌলতদিয়া যৌনপল্লির মানুষের মানবিক দিকগুলো গুরুত্বের সাথে দেখার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা মোতাবেক রাজবাড়ী জেলা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। ধর্মীয় বিষয়টি কারও ওপর চাপানো ঠিক নয়, তাই গোয়ালন্দ ঘাট থানা মসজিদের ইমামকে দিয়ে এইবারের জানাজার নামাজ পড়ানো হয়েছে। আগামীতে ধর্মীয় রীতি মেনে এই জানাজা ও দাফনের কাজ অব্যাহত থাকবে।’

তিনি বলেন, আল্লাহ সর্ব শক্তিমান, আল্লাহ ক্ষমাশীল। একজন মানুষের শেষকৃত্য হওয়ার যে সুযোগ সামাজিক কারণে সেটি যদি না দেই, তাহলে মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি অবিচার করা হবে। সেই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয়বারের মতো যৌনকর্মীর জানাযার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আশিকুর রহমানের উদ্যোগে এক যৌনকর্মীর জানাজা ও দাফন হয়। এর আগে এতকাল যৌনকর্মীদের মৃত্যুর পর তাদের লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া বা মাটি চাপা দেয়ার প্রথা ছিল। সেই প্রথা ভেঙে প্রথমবারের মতো যৌনকর্মী হামিদা বেগমের জানাজা ও দাফন হয়। তবে ইসলাম ধর্মের রীতি মেনে যৌনকর্মী হামিদা বেগমের জানাজার নামাজ পড়ানো নিয়ে স্থানীয়ভাবে দ্বিমত হওয়ায় দৌলতদিয়া রেলষ্ট্রেশন মসজিদের ইমাম গোলাম মোস্তফা এবার রিনা বেগমের জানাজার নামাজ পড়াননি।

দৌলতদিয়া পূর্বপাড়া যৌনপল্লীর ‘অসহায় নারী ঐক্য সংগঠন’ এর সভানেত্রী ঝুমুর বেগম বলেন, ‘আমরা যারা দৌলতদিয়া যৌনপল্লির বাসিন্দা, আমরাও তো সমাজের অন্য মানুষের মতোই মানুষ। আমাদেরও আছে অধিকার। আগে এখানে কেউ মারা গেলে তাকে নদীতে ভাসানো বা মাটিচাপা দেয়া হতো। আমরা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানিয়েছিলাম আমাদের এই পল্লির বেশিরভাগ নারীই মুসলিম। আমরা মারা গেলে যেন আমাদের জানাজা আর দাফন হয়। সেই দাবি মেনে এখন আমাদের জানাজার ব্যবস্থা হয়েছে, এটি ভাগ্যের ব্যাপার। আমরা যে কেউ মারা গেলে থানায় খবর দেই। আমাদের কেউ মারা গেলে এখন প্রশাসনের সহযোগিতায় ধর্মীয়ভাবে দাফনের ব্যবস্থা করা হবে। এসব কাজে এগিয়ে এসেছেন ওসি আশিকুর রহমান। তাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।’

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মো. আশিকুর রহমান জানান, এখন থেকে ধর্মীয়ভাবেই যৌনকর্মীদের দাফন ও সৎকারের ব্যবস্থা করা হবে। পুলিশ এব্যাপারে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।

জানাগেছে, আজ ২০ ফেব্রুয়ারী বিকালে রিনা বেগম নামের এক যৌনকর্মীর মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি রাজবাড়ী পুলিশ সুপারের দৃষ্টিতে আসে এবং তাৎক্ষনিক তিনি ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী ওই যৌনকর্মীর জানাযা নামাজের উদ্দ্যোগ নেন। কিন্তু যৌনকর্মী বলে স্থানীয় কোনো ইমাম তার জানাযা পড়াতে রাজি হননি। তাই গোয়ালন্দ ঘাট থানা মসজিদের ইমামকে সাথে নিয়ে জানাযা নামাজ পড়ানোর ব্যবস্থা করেন।

আরও জানাগেছে, দেশের বৃহৎ পতীতাপল্লী রাজবাড়ী গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া। এখানে প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার বাসিন্দার বসবাস এবং প্রাপ্ত বয়স্কা যৌনকর্মী প্রায় ১২০০।

যৌনকর্মী বা পতীতাপল্লীর বাসীন্দা বলে এদেরকে মৃত্যুর পর কোনো ইমাম জানাযা পড়াতে রাজি হতো না। যে কারণে মৃত্যুর তাদেরকে কলসি বেঁধে পদ্মায় ডুবিয়ে অথবা মাটি চাপা দেয়া হতো। আর এ রেওয়াজ ভেঙ্গে চলতি মাসের ২ ফেব্রুয়ারী প্রথম কোন যৌনকর্মীর জানাযা পড়ানোর মাধ্যমে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমান। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে দ্বিতীয় বারের মত জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।

সোনালীনিউজ/টিআই

Wordbridge School
Link copied!