• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এবার মনোনয়ন বঞ্চিত হচ্ছেন আ.লীগের ১০০ মন্ত্রী ও এমপি!


বিশেষ প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৮, ০৮:৫০ পিএম
এবার মনোনয়ন বঞ্চিত হচ্ছেন আ.লীগের ১০০ মন্ত্রী ও এমপি!

ঢাকা : টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। এই সময়ে দলটির সাংসদদের কেউ কেউ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন। কারও বয়স হয়েছে। কেউ কেউ দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিতর্কিত হয়েছেন। অনেকের বিরুদ্ধে আছে দুর্নীতি ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ।

তাছাড়া আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, এবারের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে। এ কারণে বিএনপি নির্বাচনে না আসায় গতবার ভোটে জেতা আওয়ামী লীগের জন্য যতটা সহজ ছিল, এবার জয়লাভ করা ঠিক ততটাই কঠিন হবে। এসব কারণে বর্তমান সংসদের সরকারদলীয় অনেক সাংসদের মনোনয়নই ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

তবে দলের দায়িত্বশীল নেতারা এও বলছেন, স্থানীয় বা জাতীয়ভাবে সুখ্যাতি না থাকলেও দলের প্রয়োজনে বেশ কয়েকজন বিতর্কিত ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন-দৌড়ে টিকে যেতে পারেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের একজন সদস্য বলেছেন, তৃণমূল থেকে আসা নামের ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়া হবে। তবে দলীয় প্রধান বিভিন্ন উৎস থেকে একটা ধারণা নিয়ে রেখেছেন।

সেখানে সংসদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি সাংসদ, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী স্থানীয়ভাবে দলে ও সাধারণ মানুষের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন বলে ধারণা পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, এ কারণে প্রধানমন্ত্রী সাংসদদের স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়তা প্রমাণের জন্য মৌখিকভাবে বলে দিয়েছেন। নয়তো এঁরা মনোনয়ন পাবেন না।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের একজন সদস্য বলেন, তাঁদের দল ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। স্বাভাবিকভাবেই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে নিয়েই বেশি সমালোচনা হবে। এ কারণে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব চাইছে প্রার্থী বাছাইয়ে অন্য দলগুলোর চেয়ে নিজেদের এগিয়ে রেখে ভোটের শুরুতেই মানুষকে চমক দেওয়া। সাধারণ মানুষকে এই বার্তা দেওয়া যে আওয়ামী লীগের যাঁরা জনবিচ্ছিন্ন, যাঁদের সম্পর্কে জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে নেতিবাচক ধারণা আছে, আওয়ামী লীগ তাঁদের পছন্দ করছে না।

ওই নেতা বলেন, এবার মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান মাপকাঠি ধরা হয়েছে স্থানীয়ভাবে প্রার্থীর ‘জনপ্রিয়তা’কে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় কিছু পেশাজীবীকে মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। আর বিএনপি ভোটে এলে জোটের শরিকদের জন্য বেশ কিছু আসন ছাড়তে হবে। এ কারণে ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ভোট করে জিতে আসা প্রার্থীদের মধ্যে অন্তত ৮০ জন আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না। বাদ পড়ার তালিকায় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীও থাকবেন বেশ কয়েকজন।

বর্তমান সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংসদ ২৩৩ জন। অন্যরা জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, তরিকত ফেডারেশন, বিএনএফ ও স্বতন্ত্র সাংসদ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সচিবালয়ের সাংবাদিকদের বলেছেন, আগামী নির্বাচনে শরিকদের জন্য ৭০টির মতো আসনে ছাড় দেওয়া হবে। আর মনোনয়ন দেওয়ার মাপকাঠি হবে প্রার্থীরা জয়ের সম্ভাবনা কতটুকু বা তাঁর জনপ্রিয়তা কেমন তার ওপর। গত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে আসা প্রার্থীদের অনেকেই থাকবেন বেশি ঝুঁকিতে। অর্থাৎ মনোনয়ন না পাওয়ার তালিকায় এঁদের সংখ্যাই বেশি হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সাংসদ হয়েছেন—এমন ৮০ থেকে ১০০ জন নেতা একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাবেন না। এই তালিকায় বর্তমানে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার অনেকে আছেন। তাঁদের বাদ পড়ার মূল কারণ হতে পারে তাঁরা এলাকা এবং জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। এলাকার জনগণের মধ্যে তাঁদের বিষয়ে বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছে। এই নেতারা দলীয় এবং সরকারি কাজের চেয়ে ‘নিজেদের দিকে’ নজর দিয়েছেন বেশি, যার কারণে তাঁরা এবার মনোনয়নবঞ্চিত হতে পারেন। এ ছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সাংসদদের নিজেদের সক্ষমতার পরীক্ষা দিতে হবে বলেও তাঁরা জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে সভাপতিমণ্ডলীর ওই সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিটি নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার সময় বিভিন্ন ধরনের মানদণ্ড থাকে। যে প্রার্থী নির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণ করতে পারেননি, তাঁদের বদলে নতুন প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও সে রকম হতে পারে।

তিনি বলেন, এবার নির্বাচনে বেশ কিছু তরুণকে প্রার্থী করা হবে। যাঁরা এবারই প্রথম ভোট করবেন। পাশাপাশি বিভিন্ন পেশার জনপ্রিয় ব্যক্তিদের আনা হবে। তা ছাড়া বিএনপি ভোটে এলে জোটের আকার বাড়িয়ে শরিকদের জন্য কিছুটা ছাড় দিতে হতে পারে।

সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য বলছেন, যাঁদের পজিশন খারাপ হয়েছে, যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে, তাঁদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এটিই মোটামুটি সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, এলাকায় যাঁদের দুর্নাম আছে, জনগণের সমর্থন নেই, তাঁরা মনোনয়ন পাবেন না। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলেও তিনি মনে করেন। সে ক্ষেত্রে মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারেও অনেক বেশি হিসাব-নিকাশ হবে।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে আছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি না, সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট করেনি দলটি।

এ ছাড়া দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও সাজাপ্রাপ্ত। তিনি বর্তমানে লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে বসবাস করছেন। বিএনপির দুটি প্রধান গুরুত্বপূর্ণ পদের নেতা দলে না থাকলেও বিএনপির নেতারা নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক। এর আগে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে (ইসি) গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়ে এসেছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী প্রচারের কাজ অনেক আগেই শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বিভাগীয় ও জেলা শহর সফর করেছেন। এসব সফরে তিনি দলের হয়ে জনগণের কাছে ভোট চেয়েছেন এবং আওয়ামী লীগকে আরেকবার ক্ষমতায় আনার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগে উত্তরাঞ্চল সফরকে ‘নির্বাচনী যাত্রা’ বলেই উল্লেখ করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার কারণে বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ভেতরের বিভেদ অনেকটা প্রকাশ্য। কোনো কোনো জেলায় বিভেদ এত বেশি যে, সেসব জেলায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এ ছাড়া দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের এড়িয়ে সাংগঠনিক কাজ করা, দলের সিদ্ধান্ত না মেনে দলের বিপক্ষে কাজ করা, দলের চাওয়া অনুযায়ী কাজ না করে নিষ্ক্রিয় থাকা—এসব বিষয় সামনে রেখে আওয়ামী লীগ জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছে।

এর আগে বিভিন্ন সময়ে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, এবার নির্বাচনে তিনি কাউকে পার করিয়ে আনতে পারবেন না। এ ছাড়া অনেক নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও আছে। দুর্নীতির বিষয়ে আওয়ামী লীগ ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নেওয়ার কারণে এবার যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হবে, তাঁরাও আর মনোনয়ন পাবেন না।

২০১৭ সালে ৭ মে সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির ভোটের দায়দায়িত্ব তিনি নিয়েছিলেন। কিন্তু এবার নেবেন না। যারা আবার নির্বাচিত হতে চান তাদের নিজেদের যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। সূত্র: প্রথম আলো

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!