• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এসআই হয়েও আকবরের ক্ষমতা দেখাতো ওসিরও ওপরে


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১৪, ২০২০, ১০:৫২ এএম
এসআই হয়েও আকবরের ক্ষমতা দেখাতো ওসিরও ওপরে

সিলেট : সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে রায়হান উদ্দিনের (৩৫) মৃত্যুর ঘটনায় সাময়িক বরখাস্তকৃত বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ক্ষমতা দেখাতেন ওসির চেয়ে বেশি।

অভিযোগ আছে, সিলেটের প্রাণকেন্দ্র বন্দরবাজারের এই ফাঁড়িটি ক্বীনব্রিজ এলাকা ও হরিজন সম্প্রদায়ের আবাসস্থল কাষ্ঠঘরকে কেন্দ্র করে চালায় একটি বড় মাদক সিন্ডিকেট। তাই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হলেও এসআই আকবর হোসেন ভূইয়ার চালচলন ছিল ওসিরও ওপরে। পুলিশের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সুদর্শন এসআই আকবরকে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার নাটকেও অভিনয় করতে দেখা যায়। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িকে নিজের থানা হিসেবেই চালিয়ে নিতে তিনি। প্রতিদিনই টাকার ভাগভাটোয়ারা নিয়ে সালিস বসাতেন ফাঁড়িতেই। ফাঁড়ির ভেতরে একটি কক্ষ রয়েছে তার। সেই কক্ষকে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করতেন তিনি। তার হয়রানির ভয়ে কেউ মুখ খুলতেন না। নিজেকে মহানগর পুলিশের এক উপ কমিশনারের খাস মানুষ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন।

তদন্ত কমিটির একটি সূত্র জানায়, সোমবার (১২ অক্টোবর) বিকাল ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বন্দর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ সেসময় দায়িত্বে থাকা ৭ পুলিশ সদস্যকে। ইনচার্জ আকবর প্রথমে রায়হানকে ফাঁড়িতে নেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। তবে সিটি ক্যামেরার ফুটেজে তার মিথ্যাচার ধরা পড়লে চুপ করে যান।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বরখাস্ত ও প্রত্যাহার করা সাত পুলিশ সদস্যকে নিয়ে আরেক দফা তদন্ত চলছে। এই তদন্তের পর এদের মধ্যে থেকে রায়হান হত্যা মামলায় আসামি করা হতে পারে।

এদিকে সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত তদন্ত কমিটির সামনে হাজির থাকলেও এর পর এসআই আকবরকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) এলাকা না ছাড়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গত রাত থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে ধরতে বিভিন্ন স্থানে পুলিশের অভিযান চলছে।

আরো পড়ুন : এসআই আকবর হোসেনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না

ক্ষোভে উত্তাল সিলেট

পুলিশ হেফাজতে ও নির্যাতনে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে যুবক মৃত্যুর ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে সিলেট নগর। গত তিন দিন ধরে দায়ীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, মানবন্ধন ও ঘেরাও কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। 

ঘটনাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, রায়হান উদ্দিনকে অন্যায়ভাবে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যা এখন পরিষ্কার। এই বর্বর নির্যাতন ১৯৭১ সালের পাক হানাদারদের নির্যাতনকেও হারা মানিয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় যাদেরকে বরখাস্ত ও প্রত্যাহার করা হয়েছে তাদেরকে অনতিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হতে হবে।

মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) দিনভর নগরীর আখালিয়া, বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে বিভিন্ন সংগঠন। সাধারণ জনতা বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। এর আগে সোমবার রাতে নিহত রায়হানের বাসায় যান সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। সেখানে তারা ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জড়িতদের শাস্তির দাবি জনান।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!