• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এসএটিভির কার্যালয়ের সামনে চাকরিচ্যুতদের অবস্থান কর্মসূচি কাল


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৪, ২০১৯, ০৬:১০ পিএম
এসএটিভির কার্যালয়ের সামনে চাকরিচ্যুতদের অবস্থান কর্মসূচি কাল

ঢাকা: এসএটিভি থেকে অবৈধভাবে ৮ সাংবাদিক এবং কর্মী ছাঁটাইয়ের সূত্র ধরে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সময় দিয়েও শেষ পর্যন্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় না বসায় অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন ডিইউজে নেতারা। 

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেল ৩ টায় এসএটিভি কার্যালয়ের সামনে এই কর্মসূচি পালিত হবে।

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠান বিভাগের ১০ জনকে ছাঁটাইয়ের পর ৮ সংবাদকর্মীকে কর্মবিরতি দেয়ার জের ধরে আবারও এসএটিভিতে এসে বাধার মুখে পড়েছেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা। এসএটিভি কার্যালয়ে আসেন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সুর্যসহ অন্যান্য নেতার। কিন্ত শেষ পর্যন্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় না বসায় অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন ডিইউজে নেতারা। 

এর আগে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে গুলশানে এসএটিভি কার্যালয়ে আসেন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সুর্য্, সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, সহ-সভাপতি খন্দকার মোজাম্মেল হক, যুগ্ম সম্পাদক আকতার হোসেন, কোষাধ্যক্ষ উম্মুল ওয়ারা সুইটি, সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল এবং জাহিদুর রহমান জিহাদ।

 

কিন্তু গেটেই তাদের আটকে দেয়া হয়। দফায়-দফায় প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তারা এসে সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে যান। পুলিশের কিছু সংখ্যক সদস্যও সেখানে এসে হাজির হন। তারাও সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। গণমাধ্যমকর্মীদের ন্যায্য দাবি-দাওয়ার বিষয়ে তাদেরও ছিল নরম সুর। দীর্ঘক্ষণ সাংবাদিক নেতারা গেটের বাইরে অবস্থান করায় পুলিশ সদস্যরাও বিব্রত হতে থাকে। এরইমাঝে তাদের এসএটিভি কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়া হয়। তাদের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা খ ম হারুন। 

তবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাহউদ্দিন আহমেদ কার্যালয়ে ছিলেন না। পরে জানিয়ে দেয়া হয়, বুধবার বিকেল ৩টায় তিনি সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। এই আলোচনায় অনুষ্ঠান বিভাগের ১০ জনকে ছাঁটাইয়ের পর ৮ সংবাদকর্মীকে কর্মবিরতি দেয়ার বিষয়টি যেমন নিষ্পত্তি হবে। তেমনি প্রতিষ্ঠানটির শতাধিক গণমাধ্যমকর্মীকে চাকরিচ্যুত করার চক্রান্ত এবং নানাভাবে নাজেহাল করার প্রধান হোতা হেড অব নিউজ মাহমুদ আল ফয়সালের বিষয়টিও সুরাহা হবে বলে আশা করছেন গণমাধ্যমকর্মীরা।

এরআগে, ১৪ সেপ্টেম্বর শনিবার সন্ধ্যা ৭টার নিউজে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্কের একটি প্যাকেজ নিউজে বিশেষ কারণে একজন ক্লিনারকে দিয়ে ভয়েজ দেয়ান হেড অব নিউজ মাহমুদ আল ফয়সাল। এরপর দ্বিতীয় দফায় তিনি এসএটিভিতে নতুন করে আলোচনায় আসেন। এছাড়া ছাঁটাই তালিকা এবং বারবার সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত করার চক্রান্তের কারণে পুরো অফিসের গণমাধ্যমকর্মী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তোপের মুখে আছেন এই ফয়সাল। দু’বছর আগেও এসএটিভিতে যোগদান করেছিলেন মাহমুদ আল ফয়সাল। সেসময় তার বিরুদ্ধে গাজীপুর থেকে ৩০ লাখ টাকা চাঁদাবাজিসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে। চ্যানেলটির সংবাদকর্মীরা এমডির সামনে মাহমুদ আল ফয়সালের অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন তার উপস্থিতিতেই। তিনি অভিযোগের জবাব দিতে ব্যর্থ হলে কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। 

এছাড়া চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গঠিত কমিটিকে তাগিদ দেয়া হয়। সেই কমিটির তদন্তে তার দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ২০১৭ সালের ৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাতে অব্যাহতি দেয় এসএটিভি কর্তৃপক্ষ। এরপর ওই রাতেই নিজের প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিয়ে অফিস ত্যাগ করেন মাহমুদ আল ফয়সাল। চ্যানেলটিতে যোগদানের এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই সেসময় তিনি চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন। পরে হেড অব নিউজে কক্ষ তল্লাশি করে চার বোতল বিদেশী মদ ও বিপুল সংখ্যক যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।

দ্বিতীয় দফায় মাহমুদ আল ফয়সাল এসএটিভিতে যোগদানের পর প্রথম দফায় সাতজনকে চাকরিচ্যুত করান। পরে গেল ৭ অক্টোবর ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতাদের হস্তক্ষেপে তারা চাকরি ফিরে পান এবং নিয়মিত বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেয়ার বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করা হয়। তবে এই চুক্তি বাস্তবায়ন না করেই গত ২৯ নভেম্বর কর্মবিরতি দেয়া হয়- স্টাফ রিপোর্টার মো. জুনায়েদ আলী (সাকী), পিএম বিটের স্টাফ রিপোর্টার এস এম মাহমুদুল হাসান, স্টাফ রিপোর্টার মাহমুদুল হক সরকার, স্পোর্টসের স্টাফ রিপোর্টার মো. আরিফ হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার মঞ্জুরুল হাসান মিলন, স্টাফ রিপোর্টার মো. মুহসীন কবীর, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর খালিদ বিন আনিস এবং ক্যামেরাম্যান মো. আনোয়ার হোসেনকে। ১ ডিসেম্বর তাদের অফিসে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়। 

এরপর আবারও এসএটিভিতে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। বিষয়টি গড়ায় থানা পর্যন্ত। ২ ডিসেম্বর গুলশান থানায় সাধারণ ডায়রী করেন সাংবাদিকরা। এরপর এসএটিভির অ্যাডমিন অ্যান্ড এইচ আরের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মাহমুদ আল মোজাহিদ ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাহউদ্দিন আহমেদের বরাত দিয়ে পুরো অফিসে জানিয়ে দেন, কর্মবিরতি দেয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ বা কথা বলা হলেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর পরদিনই ৩ ডিসেম্বর সাংবাদিক নেতা আসেন এসএটিভিতে। তারাও নাজেহালের শিকার হন।

অবশেষে সাংবাদিক-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত, কর্মক্ষেত্রে নাজেহাল-হয়রানি, বকেয়া বেতন আদায়সহ চলমান সংকট নিরসনে ৪ ডিসেম্বর বুধবার বিকেল ৩টায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এসএটিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাহউদ্দিন আহমেদ। এসএটিভির গুলশান কার্যালয়ে এ বৈঠকে উপস্থিত থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের সংবাদ সংগ্রহ করাসহ ভুক্তভোগিদের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন সাংবাদিক-কর্মচারীবৃন্দ।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!