• ঢাকা
  • বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যান্টি-ভাইরাসের প্রতিষ্ঠাতা ম্যাকএ্যাফি গ্রেফতার


আন্তর্জাতিক ডেস্ক অক্টোবর ৭, ২০২০, ০১:২৫ পিএম
এ্যান্টি-ভাইরাসের প্রতিষ্ঠাতা ম্যাকএ্যাফি গ্রেফতার

ঢাকা: সুপরিচিত এ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার কোম্পানির কর্ণধার জন ম্যাকএ্যাফিকে সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) স্পেনে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি কর ফাঁকির এক মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন এবং তাকে বিচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে।

প্রসিকিউটররা বলছেন, তিনি চার বছর ধরে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেননি। এর মধ্যে তিনি পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করে, বক্তৃতা দিয়ে, ক্রিপটোকারেন্সির ব্যবসা করে এবং তার জীবনী প্রকাশের কপিরাইট বিক্রি করে লাখ লাখ ডলার আয় করেছেন।

এসব আয়ের সাথে অবশ্য তার নিজের নামে তৈরি ম্যাকএ্যাফি এ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের কোনও সম্পর্ক নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ এক বিবৃতিতে বলেছে, ম্যাকএ্যাফি তার নিজের আয় তার মনোনীত অন্য লোকদের নানা অ্যাকাউন্টে জমা দিয়েছিলেন। ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তিনি কর দেওয়ার দলিল জমা দেননি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বেনামে থাকা প্রমোদতরী ও বাড়ি-জমির মতো সম্পদ গোপন করার অভিযোগ আছে।

জন ম্যাকএ্যাফি এসব অভিযোগের ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার ৩০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

বিতর্কিত ব্যক্তি

প্রযুক্তির জগতে ম্যাকএ্যাফি একজন বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তিনি সবার নজর কাড়েন ১৯৮০-এর দশকে। তখন ম্যাকএ্যাফি ভাইরাসস্ক্যান নামে প্রথম বাণিজ্যিক এ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার বাজারে ছাড়েন তিনি। পরে এটি শত শত কোটি ডলারের এক শিল্পে পরিণত হয়।

ম্যাকএ্যাফি অবশ্য পরে সেই ব্যবসা ইনটেল কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেন। তবে তিনি এখনো তার নিজের উদ্যোগে বিভিন্ন সাইবার-সিকিউরিটি পণ্য তৈরি করছেন। তিনি নিজে বহুবার ট্যাক্স দেওয়ার ব্যাপারে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তার মতে, ট্যাক্স জিনিসটাই অবৈধ।

বিচিত্র কর্মকাণ্ড

ম্যাকএ্যাফির নানা বিচিত্র কর্মকাণ্ড বিভিন্ন সময় খবর হয়েছে। মধ্য আমেরিকার দেশ বেলিজে ২০১২ সালে তার প্রতিবেশীকে গুলিবিদ্ধ এবং মৃত অবস্থায় পাওয়া যাবার পর তিনি ছদ্মবেশ ধরে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তবে বিবিসিকে তিনি বলেছিলেন - ওই মৃত্যুর সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই।

তার প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, তরুণী মেয়ে 'বন্ধু'রা তার উল্কি আঁকা খালি গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ডমিনিকান রিপাবলিকে তাকে একবার কিছু সময়ের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছিল - দেশটিতে অস্ত্র নিয়ে আসার অভিযোগে।

২০১৬ ও ২০২০ সালে ম্যাকএ্যাফি লিবার্টারিয়ান পার্টি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

কেউ কেউ মনে করেন তিনি একজন বিকারগ্রস্ত উন্মাদ মানসিকতার লোক। একজন সাংবাদিক - যিনি বহুবার তার সাক্ষাতকার নিয়েছেন - বর্ণনা করেন যে ম্যাকএ্যাফি মিথ্যে বলেন, প্রতারণা করেন এবং পরিস্থিতিকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে ওস্তাদ।

ম্যাকএ্যাফি নিজে স্বীকার করেন যে তাকে 'সন্দেহবাতিকগ্রস্ত, স্কিৎসোফ্রেনিক এবং সিলিকন ভ্যালির বন্য শিশু' বলা হয়েছে। তবে তার মতে, তিনি আসলে একজন উদ্যোক্তা, কৌতুহলী এবং সমস্যা সমাধান করতে ভালোবাসেন।

ম্যাকএ্যাফির জন্ম যুক্তরাজ্যে। তার মা ইংরেজ এবং বাবা ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনে থাকা একজন আমেরিকান সেনা। তার বাবা পরে এ্যালকোহল-আসক্ত এবং অত্যাচারী হয়ে পড়েন এবং নিজের গুলিতে আত্মহত্যা করেন।

ম্যাকএ্যাফির বয়স তখন ১৫। তিনি নিজেও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এ্যালকোহল এবং মাদকে আসক্ত হন। পড়াশোনায় ভালো ছিলেন, তবে অন্য একজন ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক যৌন সম্পর্কের জেরে তার পিএইচডি বাতিল করা হয়।

পরে তিনি বেশ কিছু বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিতে চাকরি করেন। সঙ্গে চলছিল নেশা করা। তিনি বলেন, কিছু প্রতিষ্ঠানের বসরাও মাদক নিতেন। কিছু কোম্পানিতে দুপুরের খাবার সময় খোলাখুলি মাদক গ্রহণ করা হতো।

পরে লকহিড মার্টিন কোম্পানিতে কাজ করার সময় তিনি প্রথম কম্পিউটার ভাইরাসের সঙ্গে পরিচিত হন। বের করেন কম্পিউটারগুলোকে ভাইরাসমুক্ত করার এক পদ্ধতি। তিনি নিজের নামে কোম্পানি চালু করে এর ব্যবসা শুরু করেন। পরে তিনি এই কোম্পানি ইনটেলের কাছে বিক্রি করে দেন ৭৬০ কোটি ডলারে। তার কোম্পানি এ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার বিক্রি করলেও ম্যাকএ্যাফি বলেন, তিনি নিজে কখনও তার পণ্য ব্যবহার করেননি।

তিনি বলেন, ‘আমি সবসময়ই আক্রান্ত হচ্ছি, কিন্তু আমি কোনও সফটওয়ার সুরক্ষা ব্যবহার করি না। আমি সব সময় আমার আইপি ঠিকানা পরিবর্তন করতে থাকি। কোনও ডিভাইসে আমার নাম দেই না এবং ভাইরাস ঢুকতে পারে এমন কোন সাইটে আমি যাই না। আমি নিরাপদ কম্পিউটিং করি। কেউ আমাকে ই-মেইল করলে তাকে ফোন করে জেনে নেই তিনি আমাকে ই-মেইল করেছেন কিনা - তার আগে সেই মেইল খুলি না।‌‌’ সূত্র: বিবিসি।

সোনালীনিউজ/টিআই

Wordbridge School
Link copied!