• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মুখে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ


বিশেষ প্রতিবেদক অক্টোবর ২৯, ২০১৮, ০৫:৩৬ পিএম
ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মুখে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ

ঢাকা : আওয়ামী লীগ আর বিএনপি দেশের রাজনীতিতে দু’টি দুই মেরুর দল। আদর্শগত পার্থক্য আকাশ আর মাটির মতো। দুই দলের মধ্যকার সম্পর্ক ‘দা কুমড়ার’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দল আওয়ামী লীগ বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনীতির কথা। জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বিএনপি বলে জাতীয়বাদী আদর্শের কথা। এই দুই নেতার আদর্শকে কেন্দ্র করে দুই দলের মধ্যে রয়েছে হিংসাত্মক বিদ্বেষপূর্ণ অবস্থান।

সম্প্রতি বিএনপির সম্পৃক্ততায় গঠিত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক জোট ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’, যে জোটের প্রধান নেতাই হলেন বঙ্গবন্ধুর একজন ঘনিষ্ঠ সহচর, তার মন্ত্রিসভার সদস্য, স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। শুধু তাই নয়, জেএসডির আ স ম আব্দুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর প্রমুখ প্রায় সকলেই নিজেদেরকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী হিসেবে পরিচিত করান এবং সেভাবেই কথা বলেন।

ড. কামাল হোসেন প্রথম থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করেই ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু করেন। গত ২৪ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সিলেটের জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাজার হাজার জনতার উপস্থিতিতেও ড. কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের কথা বলেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সত্যিকার আদর্শ বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চাই।

দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে চাই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, দেশের মালিকানা দেশের মানুষের। এই মালিকানা মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। আমি সেটাই বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন করে যেতে চাচ্ছি। তাছাড়া সিলেটে গণফোরামের মহাসচিব মোস্তফা মহসীন মন্টু তো তার বক্তব্য শেষই করলেন ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলেই। এক সময়কার আওয়ামী নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর তো শরীর থেকে মুজিব কোটই খোলেন না। বিএনপির সঙ্গে জনসভাতেও মুজিব কোট পরে বক্তব্য রাখছেন। বক্তব্য শেষে বলছেন, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’।

বিএনপি যেখানে পাকিস্তান ঘেষা স্লোগান ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদে’ বিশ্বাস করে এবং জিয়াউর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নে প্রত্যয়দীপ্ত। সেখানে একই প্ল্যাটফর্মে বসেই ঐক্যের নেতাদের মুখে আবার ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’র স্লোগান এবং দেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের বক্তব্য কীভাবে গ্রহণ করছে দলটি?

‘ঐক্যফ্রন্ট-বঙ্গবন্ধুর আদর্শ-বিএনপি’- এ বিষয়ে একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা।
 
বিএনপির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান এবং যিনি নিয়মিত বিএনপির হয়ে টক-শোতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান। আর তার মতে, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ কোনো আদর্শিক জোট নয়। এটি একটি রাজনৈতিক জোট। এখানে যে যার যার আদর্শের কথা বলতেই পারেন। কিন্তু একটি ‘কমন গোল’ নিয়ে এই ঐক্য গড়ে উঠেছে। আর সেটি হলো, মুক্তিযুদ্ধের যে লক্ষ্য ছিল, গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। এটাই আমাদের আন্দোলন।’

আহমদ আজম খান আরও বলেন, ‘এই আন্দোলনটি আমাদের দীর্ঘকালের। আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছি ভোটাধিকার এবং গণতন্ত্রের জন্য। এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকারের জন্য। এটাও তেমনই একটি ব্যাপার। এখন বিএনপিসহ বাম গণতান্ত্রিক জোট যারা আছে, যেমন কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদসহ অন্যান্য সবার একটিই কথা, যে রাজনৈতিক আদর্শেরই থাকুক না কেন, সব রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রহীন এই সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তারা চায় মানুষের ভোটাধিকার এবং গণতন্ত্রের অধিকারের জন্য সকলে একমত হয়ে কাজ করবে। সেখানে নানা দলের নানা আদর্শ আছে। সেটা থাকতেই পারে।’

আহমদ আজম খান বলেন, ‘গণতন্ত্র এবং মানুষের অধিকারের বিষয়ে তো কারো কোনো দ্বিমত নেই। যদি গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকারই না থাকে তাহলে তো এই দেশের মালিকানাই জনগণের হাত থেকে চলে গেল। অতএব দেশের মালিকানা জনগণের হাতে থাকতে হবে। তার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এটা কোনো দলীয় আদর্শের ঐক্য না। এটা একটি পলিটিক্যাল ঐক্য। কমন প্ল্যাটফর্ম। ধরুন, গোটা দেশে ডাকাত পড়েছে। ডাকাত তাড়াতে গ্রামবাসী কে কোন মানসিকতার, সম্প্রদায়, আদর্শের তা দেখার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হলো- ডাকাত তাড়াতে হবে। এটাই লক্ষ্য।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন আদর্শের জোট থাকতেই পারে। ঐক্য হতে পারে। যেমন ২০ দলীয় জোটে জামায়াতও আছে। এছাড়া আরো রাজনৈতিক দল আছে। তাই বলে তো আমরা আর জামায়াতের আদর্শ অনুসরণ করছি না। তেমনই এটা দলমত নির্বিশেষে ঐক্য। একটি কমন গোলের জন্য নিজ নিজ দলের আদর্শের চিন্তা নিয়ে আমরা এক হয়েছি। এই দেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন আত্মসাৎ করা হয়েছে। গণতন্ত্রকে একেবারে অদৃশ্য করা হয়েছে। এগুলো ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য দলমত নির্বিশেষে এক হয়েছি। এটাই হলো জাতীয় ঐক্য।’

বিএনপির অন্যতম যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল অবশ্য ভিন্ন কথা বললেন। তিনি ব্যাখ্যা দিলেন এভাবে- ‘প্রথম কথা হলো যে, শেখ মুজিবুর রহমান এবং জিয়াউর রহমনের আদর্শ সম্পূর্ণ বিপরীত এটি সত্য নয়। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল একই মানুষের অধিকার, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর বাকশাল কায়েম করেন, যার উত্তরাধিকারী হলো বর্তমান আওয়ামী লীগ। কিন্তু এই দলটি নতুন করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জিয়াউর রহমানের সময়। তাহলে তো আওয়ামী লীগের রাজনীতি এবং পুনর্বাসন জিয়াউর রহমানর হাত ধরে হয়েছে। না হলে তো আজকে বাকশাল হিসেবেই আওয়ামী লীগ পরিচিত হতো।

সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দ্বিতীয় কথা হলো, আমরা তো ১৯৭২ এর সংবিধানের বিরোধী না। এই সংবিধানে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মনের কথাগুলো ছিল। সেই সংবিধানের বাস্তবায়ন যদি পুরোপুরি হয় তাহলে তো দেশে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, হানাহানি এতগুলো থাকে না। কিন্তু সেই সংবিধানটিকে চতুর্থ সংশোধনী করে গিয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমান জীবিত থাকা অবস্থায়।

যার মধ্য দিয়ে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সব হরণ করা হয়েছে। সেই ইতিহাস আওয়ামী লীগ ভুলে গেছে। যদি স্মরণ রাখত, ড. জাফরউল্লাহ চৌধুরীর মতো মানুষকে এভাবে হেনস্থা করত না।

ড. জাফরউল্লাহ চৌধুরীকে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রথম ফিল্ড হসপিটাল প্রতিষ্ঠায় ২৩ একর জমি দান করে গিয়েছিলেন মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান। আর সেখানে তার অনুসারীরা ভাঙচুর চালাচ্ছে। তার মানে শেখ মুজিবুর রহমানকে অপদস্থ কি তারা করছে নাকি অন্যরা করছে?’

সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আরও বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবুর রহমানকে পদে পদে অপদস্থ করছে। সেই জন্য তার এক সময়কার সহচর ড. কামাল হোসেন, আ স ম রব, মোস্তফা মহসিন মন্টু এবং অন্য যারা আছেন তারা বলছেন যে, বঙ্গবন্ধুর যে মূল আদর্শ ছিল সেটি তারা বাস্তবায়ন করতে চান। ভালো তো। অসুবিধা কী? আমাদের এতে দ্বিমত থাকবে কেন? আমরা তো শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতীয় নেতা মানি।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!