• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
বিএনপিতে সঙ্কট আরো বাড়ছে

ঐক্যফ্রন্টের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায়


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ১, ২০১৯, ০৯:৩৬ পিএম
ঐক্যফ্রন্টের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায়

ঢাকা : ক্ষমতায় ফেরা অথবা শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে আগামীর জন্য একটি ক্ষেত্র প্রস্তুতের আশা নিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। এর ছিটেফোঁটাও পূরণ না হওয়ায় সঙ্কট আরো বাড়ছে দলটিতে।

অন্যদিকে নির্বাচনের এই ফলাফলে সন্দেহ, অবিশ্বাস ও আঁতাতের গন্ধ খোঁজা শুরু হয়েছে বিএনপি জোট ও ঐক্যফ্রন্টে। কোন প্রেক্ষাপটে ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল এবং নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে কার কী ভূমিকা ছিল, তা নিয়ে আলোচনা চলছে রাজনৈতিক এই জোটে। সঙ্গত কারণেই জাতীয় ঐক্যফ্র্রন্টের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে, এমনও মনে করছেন অনেকে।

সোমবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকাল পর্যন্ত বিএনপির কোনো নেতাই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা বলেননি। তবে হতাশা ও ক্ষোভ নিয়ে অনেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিক ও বিভিন্ন মহলে কথা বলেছেন। বিএনপির উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলের আশু সঙ্কট নিয়ে তারা বেশি চিন্তিত।

সঙ্কটের ধরন প্রসঙ্গে এসব নেতা বলেন, নির্বাচনের এই ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি অনিশ্চিত এবং তারেক রহমানের দেশে ফেরা আরো দীর্ঘায়িত হলো। মামলার কারণে বিদেশে পালিয়ে থাকা নেতাদের ফিরে আসার বিষয়টিও অনিশ্চয়তায় পড়ল। নেতাদের ব্যবসা-বাণিজ্য আরো ঝুঁকিতে পড়ল। কারারুদ্ধ নেতাদের মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হলো।

শীর্ষ নেতৃত্বের অনুপস্থিতিতে দলের চেইন অব কমান্ড এবং দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় দলের কর্মী ধরে রাখা কঠিন হওয়ার পাশাপাশি ভাঙন ঠেকানো কঠিন হতে পারে। আর সাংগঠনিক দুর্বলতার মধ্যে এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংগঠনকে বিধ্বস্ত অবস্থার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে মত অনেক নেতার। সব মিলিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বড় সঙ্কটে পড়ল।

সোমবার (৩১ ডিসেম্বর) দিনভর দলের বিভিন্ন মহলের মধ্যে প্রশ্ন ছিল কেন এমন হলো? নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কি সঠিক ছিল? নির্বাচনকে আন্দোলন বলা হলেও কেন তা হলো না? এই পরিস্থিতির জন্য কারা দায়ী? অনেকের মনেই সন্দেহ, দলের ভেতর থেকে কেউ কি বিশ্বাঘাতকতা করল? অথবা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেউ এই আঁতাতের সঙ্গে যুক্ত কি না?

দলটির প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে আসে বিএনপি। কিন্তু আন্দোলনের জন্য যে প্রস্তুতি থাকা দরকার তা দলটির ছিল না। কেন্দ্র পাহারা দেওয়ার আহ্বানের মধ্যেই তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু কীভাবে কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে তা জানানো হয়নি। সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা ছিল না। ছিল না সমন্বয়ও। বরং একটি পর্যায়ে প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা থাকবে এমন কথা বলে কর্মীদের বিভ্রান্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছিল অনেক গোছানো।

সম্পাদক পর্যায়ের এই নেতার মতে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের নেতিবাচক বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্যকরভাবে তুলে ধরার কোনো উদ্যোগ ছিল না। প্রশাসনে বিএনপি ঘরানার কারো সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।

বিএনপির সূত্র মতে, দলের উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন নেতা নির্বাচনের দুয়েক দিন বাকি থাকতেই আন্দোলনের কৌশল ঠিক করার জন্য বসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা আর হয়নি। পরিকল্পনা ছিল প্রচারণায় বাধা পেলে একযোগে সব আসনের প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের সামনে বসে পড়বেন। তা সম্ভব না হলে নির্বাচনের আগের রাতে বর্জনের ঘোষণার কথাও বলেছিলেন অনেক প্রার্থী।

এ নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও আলোচনা করেছিলেন দলের একাধিক সিনিয়র নেতা। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আপত্তি না থাকলেও বিএনপি মহাসচিবসহ ঐক্যফ্রন্টের অনেক নেতা এই প্রস্তাবে আগ্রহ দেখাননি।

সূত্র মতে, পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে গতকাল সোমবার স্থায়ী কমিটি, ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকের আগেই অনেক নেতা নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের শপথ না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে ঐক্যফ্রন্টের অনেকেই এই প্রস্তাবে রাজি নন। কেউ কেউ ফিরছেন রাজনীতির নিজ ঘরে। সঙ্গত কারণে ঐক্যফ্রন্টে অচিরেই বিভক্তি দেখা দিতে পারে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!