• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঐতিহাসিক কারাকোরাম মহাসড়ক


আন্তর্জাতিক ডেস্ক সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৬, ০৭:০০ পিএম
ঐতিহাসিক কারাকোরাম মহাসড়ক

১৯৭৯ সালে গত শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক কারিগরি নিদর্শন সাড়া ফেলে দিয়েছিল চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে কারাকোরাম মহসড়ক উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে।

পাকিস্তান সেনা বাহিনীর প্রকৌশলীরাই পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে পথ কেটে বানিয়েছিলেন এই রাস্তা। সমুদ্রপৃষ্ঠ  থেকে অনেক ওপরে দুর্গম পাহাড়েরর মধ্যে দিয়ে তেরশ কিলোমিটারের এই পথ পশ্চিম চীনের কাশগরের সঙ্গে যুক্ত করেছিল পাকিস্তানের ইসলামাবাদকে।

কারাকোরাম মহাসড়কের আরেক নাম চীনে ফ্রেন্ডশিপ হাইওয়ে। ১৯৫৯ সালে শুরু হয়েছিল এই সড়ক তৈরির কাজ। খাড়া পাহাড় এবং দুর্গম পাহাড়ে কাজের কঠিন পরিবেশের মধ্যে এই পথ নির্মাণের কারণে কখনও কখনও একে বলা হয় বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য।

কারাকোরাম পর্বতমালার মতো দুর্গম এলাকা বিশ্বে আর  নেই বললেই চলে। এই পাহাড়ের ৬০টি শৃঙ্গ আছে। এগুলোর উচ্চতা গড়ে প্রায় ৬ হাজার ৬০০ মিটার। বিবিসি জানায় পাকিস্তান সেনা বাহিনীর কারিগরি শাখার  সে সময় ২৮ বছর বয়স্ক প্রকৌশলী পারভেজ আকমল বলেন ভূতাত্ত্বিকদের জন্য এই পাহাড় একটা স্বর্গ, কিন্তু সড়ক নির্মাতাদের জন্য এ ধরনের এলাকা একটা বিভীষিকা।

কারাকোরাম মহাসড়ক জনগণের ব্যবহারের জন্য খুলে  দেবার মাত্র এক বছর আগে একশ কিলোমিটার পথ  তৈরির দায়িত্ব দেওয়া মি. আলমকে।
দুর্গম এই পাহাড়ে পথ তৈরি ছিল ১৯৬০-৭০এর দশকে বিরাট এক চ্যালেঞ্জ।

তিনি সড়ক ব্যবস্থাপনা ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। শুধু ১০০ কিলোমিটারের ওপর রাস্তা বানানোর দায়িত্বই তার ওপর ছিল না, দায়িত্বে থাকাকালীন ওই রাস্তার রক্ষণাবেক্ষনের ভারও তার ওপরে ছিল। এছাড়াও খঞ্জোরাব গিরিপথ পর্যন্ত গিয়ে রাস্তা তৈরির কাজ কেমন এগোচ্ছে তা তাকে  দেখতে হতো।

কারাকোরাম পর্বতে ৪৭০০ মিটার উচ্চতায় খঞ্জোরাব গিরিপথ পাকিস্তান ও চীন সীমান্তের খুবই কাছে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জšে§র পর থেকেই চীনের সঙ্গে সংযোগের একটি পথের প্রয়োজনীয়তা সবাই অনুভব করলেও ১৯৫৯ সালের আগে এই পথ তৈরির কাজ শুরু হতে পারেনি।

আলম বলেন, দেশ-ভাগের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ভারত কাশ্মীরের একটা বড় অংশ নিজের অর্ন্তভুক্ত করে  নেয়। ফলে সে সময় পাহাড় দিয়ে চলাচলের যে রাস্তাটা ছিল তা বন্ধ হয়ে যায। একমাত্র যাতায়াতের পথ হয়ে ওঠে কাঘান উপত্যকা দিয়ে। কিন্তু ওই পথে একটা সমস্যা ছিল। ওই রাস্তাটা বছরে মাত্র তিন মাস  খোলা থাকত। ১৯৫৮ সালে যখন জেনারেল আইয়ুব খান ক্ষমতায় আসেন প্রেসিডেন্ট হয়ে- তিনি তখন গিলগিট  কারুড়া পথটি তৈরির নির্দেশ দেন।

মেজর আকমল বলছেন এই রাস্তা তৈরির দক্ষতা তখন পাকিস্তানের ছিল না। পাথরস্খলন- ভূমিধস, পাহাড়ি উচ্চতায় কাজ করা এসব দিক দিয়ে পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের অভিজ্ঞতা ও সম্পদের দারুণ অভাব ছিল।

সৈনিকদের মাঠে যেভাবে কঠিন জীবন কাটাতে হয়, প্রত্যেক প্রকোশলীকে ঠিক সেভাবে কষ্ট সহ্য করে থাকতে হতো।

‘সেখানে আবহাওয়া ও পরিবেশ এমন ছিল যে কোথাও প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় তুষারে বরফে তাদের শরীরে ক্ষত তৈরি হত। আবার একইসঙ্গে প্রচণ্ড কড়া সূর্যের তাপে তাদের চামড়া ঝলসে যেত। কাজেই প্রতিকূল আবহাওয়া সময়ে না নেওয়া পর্যন্ত খঞ্জোরাব পৌঁছে কাজ শুরু করা তাদের জন্য অসম্ভব ছিল। আবহাওয়া, উচ্চতা, সইয়ে নেবার সুযোগ আমাদের দেওয় হয়নি। কোনো সাহায্য ছিল না, ফলে বিষয়টা খুবই কঠিন হয়েছিল আমাদের জন্য।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

 

Wordbridge School
Link copied!