• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ওর কথা শুনে থমকে যাই, এক সঙ্গে! ও আর আমি! সম্ভব?


সোনালীনিউজ ডেস্ক জুলাই ৫, ২০১৯, ০৯:৩০ পিএম
ওর কথা শুনে থমকে যাই, এক সঙ্গে! ও আর আমি! সম্ভব?

মাকসুদা আক্তার প্রিয়তী। বাংলাদেশী মেয়ে। বড় হয়েছেন ঢাকায়। পড়াশোনার জন্য পাড়ি জমান আয়ারল্যান্ডে। পড়াশোনার সঙ্গে জড়ান মডেলিং-এ। নিজের চেষ্টা আর সাধনায় অর্জন করেন মিস আয়ারল্যান্ড হওয়ার গৌরব। নিজের চেষ্টায়ই বিমান চালনা শিখেছেন। ঘর সংসার পেতেছেন আয়ারল্যান্ডেই।

নানা উত্থান পতন আর ঝড় বয়ে গেছে। নিজের বেড়ে উঠা, প্রেম, বিবাহ বিচ্ছেদ, মডেলিং, ক্যারিয়ার, প্রতারণা সব মিলিয়ে টালমাটাল এক পথ। প্রিয়তি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে বন্ধুর পথ পাড়ি দেয়ার নানা বিষয় নিয়ে প্রকাশ করেছেন আত্মজীবনী-‘প্রিয়তীর আয়না’। বইটিতে খোলামেলাভাবে নিজের বেড়ে ওঠা আর বেঁচে থাকার লড়াইয়ের নানা দিক তুলে ধরেছেন। এ বইয়ের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো সোনালীনিউজ এর পাঠকদের জন্য। আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব-

আয়ারল্যান্ডে আমার প্রথম চাকরি ছিল মাইক্রোসফট কোম্পানি। সবাই নিশ্চয় চেনেন এই প্রতিষ্ঠানকে। সত্যিকার অর্থে ওটা আমার জন্য একটা দারুণ চাকরি ছিল। আসলে চাকরির কল্যাণেই বলি আর যে কারণেই বলি ওই সময়টাতে আমার জীবনটা একটু স্থির হয়েছিল। তুমুল ঢেউয়ের ধাক্কা সামলাতে সামলাতে হঠাৎ কিছুদিনের জন্য গভীর সমুদ্র যেমন শান্ত হয় অনেকটা সে রকম শান্ত হয়েছিল আমার চারপাশ। এই শান্ত থাকার কারণেই আমি আরেকটা চাকরি করার সুযোগ পাই। সুযোগ বলা যাবে না, বরং বলতে হবে সময়টুকু পাই। সপ্তাহের একদিন মানে রোববার কাজ করতাম ডাবলিংয়ের একটা রেস্তোরাঁয়। ওইদিন একটু কষ্ট হতো। কিন্তু বাকি ছয় দিনই ভালো যেত। সঙ্গে চলত পড়াশোনা। আসলে বিদেশের মাটিতে পড়াশোনা করা কতটা কঠিন ও ঝক্কির সেটা দেশ থেকে মানুষ আন্দাজ করতে পারে না। এখানে তেজপাতার মতো টাকা খরচ করতে হয়। দেশে পড়ে থাকা মা সেই খরচের কতটাই বা বহন করতে পারবে বা পারত তার খবর একটু রাখার সুযোগ পেতাম না। ছুটির দিনে কাজ করলে যা হয়, নিজেকে সময় দেওয়া যায় না। মোটকথা ব্যস্ততা আমাকে দেয় না অবসর।

এই ব্যস্ততার মধ্যেই একজন অবশ্য রয়ে যায় আমার জন্য। যার জন্য তুমুল ব্যস্ততার মধ্যে থেকেও আমাকে একটু ফুরসত বের করতে হয়। আমি বিবেকের কথা বলছি। আমাদের দেখা একটু কম হলেও সপ্তাহে একদিন ঠিকই দেখা হয়।
বুঝতে পারি দিন দিন বিবেকের দাবি তৈরি হচ্ছে আমার ওপর। দিনে দিনে সেই দাবি বড়ও হচ্ছে। অধিকার জন্ম নিচ্ছে। আমি টের পাই। অনেক কিছু না বুঝেও এরকমটা মনে হয়। অথবা আমিই সম্ভবত চাইছিলাম আমাকে কেউ অধিকার করুক। কেউ একজন আমার ভেতরটা পড়–ক। সেই অধিকারের জোরে আমার সকল কাজের সাক্ষী হয়ে উঠছে ও। আমার মনে হচ্ছে একজন নির্ভরতার মানুষ পেলাম। যাকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া যাবে হয়তো। অথবা নাও যাওয়া যেতে পারে। সেই বাসা বদলের সাক্ষী হয়ে থাকল একমাত্র বিবেক। সাক্ষী না শুধু, আমার যাবতীয় কিছু নিয়ে নতুন বাসা অবধি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিল সে। দায়িত্ব ঠিকঠাক পালনও করেছে। একটুও অবহেলা করেনি। শুধু তাই নয়, সময়ের আগেই আমাকে পৌঁছে দিয়েছে জায়গা মতো। আর বেচারা শুধু পৌঁছে দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেনি। আমাকে গুছিয়েও দিয়ে গিয়েছে।

একটা কথা বলা হয়নি, যেদিন বিবেক প্রথম শোনে আমি বাসা বদল করছি সেদিন সে কি তার কান্না! একটা ছেলে এই ভাবে কাঁদতে পারে আমার জানা ছিল না। ছোটবেলা থেকে শুধু ছেলেদের পৌরুষত্ব আর হুঙ্কার দেখে এসেছি। সেটা যেমন আমার ভাইদের দেখেছি তেমনি বাইরের ছেলেদেরও। কিন্তু! কান্না আজ অবধি দেখা হয়নি। তাই আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি। নিজেও কখন ওর কান্নার সঙ্গে মিশে গিয়েছি বুঝতেই পারিনি। যখন পেরেছি তখন আমার চোখ ভিজে গিয়েছে। হৃদয় ভিজে গিয়েছে। প্রশ্ন করতে পারেন ওই ছেলেটি কেন কাঁদল কিংবা আমি? আমি তো আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিংয়েই আছি। একই শহরে আছি। বিচ্ছেদ তো হয়নি, শুধু বাসাটাই বদল করছি।

কান্না থামার পর বুঝতে পারলাম আসল রহস্য। আগে বিবেক আর আমার বাসা ছিল হাঁটা পথের দূরত্ব। কিন্তু এখন হয়ে যাচ্ছে অনেক দূর। বাংলাদেশের হিসাবে ফার্মগেট থেকে উত্তরা। এই দূরত্বটুকু সে মেনে নিতে পারছে না। আগে চাইলে হুট করে দেখা করতে পারত। কিন্তু এখন চাইলে সেটা সম্ভব না। এখন চাইলেই এই একটু বের হও তো কফি খাই, বলা যাবে না। অল্প সময়ের ব্যবধানেই দুজন একে অপরকে দেখতে পেতাম। কাজ শেষ করে এসেই দাঁড়িয়ে থাকা যেত। কিন্তু এখন তো সেটা হবে না। হয়তো সপ্তাহের ছুটির দিনে দেখা করা যাবে। সে দেখায় কি আমাদের মনের তেষ্টা মিটবে। কিসের সেই বাঁধন? মায়ার, নাকি অন্য কিছু?

দ্বিতীয় দফায় বিবেক আবারো কাঁদল, কান্নাকাটি শেষ করে ওই আমাকে নতুন বাসায় তুলে দিল। কিন্তু নতুন বাসায় উঠে বুঝলাম কি ঘটনাটাই না ঘটতে যাচ্ছে আমার জীবনে। অনেক দিন কারও সঙ্গে আমার ঘর বা বিছানা শেয়ার করা হয়নি। কিন্তু এখন থেকে করতে হবে। এটা ভাবতেই কেমন অদ্ভুত অনুভূতি শুরু হলো। কিন্তু কিছু করার নেই। শুরু করলাম যৌথবাস। তাও বাঙালি কারও সঙ্গে না, একেবারে মালয়েশিয়ান একটা মেয়ের সঙ্গে।

মেয়েটি ভালো। এক জায়গায় কাজ (রেস্তোরাঁ) করার কারণে সম্পর্কটাও সহজ। কিন্তু ভয়ঙ্কর রকমের নাক ডাকার অভ্যাস আছে। প্রতি রাতে আমার ঘুমের ১২টা বাজিয়ে দিয়ে সে ঠিকই দিব্যি ঘুমিয়ে থাকে। কিন্তু আমি পারি না। সারারাত জেগে থাকি। মাঝ রাতে একটু ঘুম হলেও সেটা পরিপূর্ণ হয় না। মেয়েটি একদিন আমাকে বলল, ‘তুমি যে ঘুমাতে পারো না নাক ডাকার কারণে, তাহলে বিয়ের পর কি করবে স্বামী যদি নাক ডাকে, বিয়ে করো না সারাজীবন তাহলে, হা হা হা।’ ঝুঁকে এসে আমি তাকে বললাম, ‘স্বামী আর ওই মালয়েশিয়ান মেয়ে কি এক জিনিস হলো।’ ও হেসে মাথা কাত করে বলল, তা ঠিক, তা ঠিক!

এই বাড়িতে আরও একটা ঝামেলা বুঝতে পারলাম ওঠার কয়েক দিনের মধ্যেই। আমার কলিগের মানে যে মেয়েটার সঙ্গে উঠেছি তার বড় বোন ও দুলাইভাই আমাদের সঙ্গেই থাকেন। দুলাভাইটা আবার বাংলাদেশি। অনেক বছর আগে এ দেশে এসে মালয়েশিয়ান মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করেছে। দুলাভাই ও তাঁর স্ত্রী খুবই পরহেজগার। নামাজ, রোজা এমনকি যাবতীয় ধর্মীয় আচার-আচরণে তারা সিদ্ধহস্ত। কিন্তু সমস্যা একটাই। দুলাভাই প্রায় রাতেই তাঁর স্ত্রীকে মারধর করেন। ছোটখাটো ভুল হলেই দুলাভাইয়ের হাত আর বোনের পিঠ এক জায়গায় হয়ে যায়। কঠিন অবস্থা। এটা প্রতিদিন সহ্য করা যায় না। দু’একদিন হলে মেনে নেওয়া যেত সম্ভবত। আমিও নিতে পারি না। ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো হাজার মার খেয়েও স্ত্রী কোনো প্রতিবাদ করে না। আমি যে মেয়েটির সঙ্গে এক বিছানায় ঘুমাই সেও দেখি নীরব। কি তাজ্জব ব্যাপার। এত পতিভক্ত নারী আমি আগে দেখিনি। ব্যাপারটা এমন, বিয়ের সঙ্গে সঙ্গে বউ পেটানোর একটা লাইসেন্স পেয়েছে ভদ্রলোক। তাই যখন খুশি তখন পেটানো যায়। আমার খুব অস্বস্তি লাগে। কি করা যায় ভাবতে থাকি। 

একদিন বিবেকের সঙ্গে আলাপ করি এসব নিয়ে।
এখানে মনে হয় বেশিদিন থাকতে পারব না?
কেন?
ও খুবই চিন্তাযুক্ত চোখে তাকায়।
একটা মানুষ এত বউ পেটাতে পারে যে, ওই বাসায় না থাকলে জানতাম না। মানে কি?
ভদ্রলোক প্রতিদিন বউকে মারে। সেই মার আর বউয়ের চিৎকার কোনোটাই আমি নিতে পারব না। খুব কষ্ট হয় আমার। কিছু বলতেও পারি না। সহ্যও করতে পারি না। কিন্তু ওই মারধর যে আমাকে আমার পুরনো প্রেমিকের কথা মনে করিয়ে দেয় তাও মুখ ফুটে বলতে পারছি না।

সে উল্টো জানতে চায়, আমি কিছু বলি কিনা। তার দাবি ওই ভদ্রলোকও তো বাংলাদেশি।
আমি বলেছিলাম। ওই ভদ্রলোক উত্তর দিয়েছে, আমার বউ আমি পেটাই তাতে কার কী! অন্য কারও বউ তো আর পেটাই না। আপনি আপনার নিজের কাজ করেন। তাই তো! কি করবে এখন? উত্তর দেয় ও।
বুঝতে পারছি না। মাত্র উঠলাম। এখনই ছেড়ে দেওয়াটা কেমন দেখায়। 
-সেটাও তো ঠিক। কি করব বুঝতে পারছি না। নতুন বাসা দেখব?
-দেখ, বাট বাসা পাওয়া তো কঠিন। আশপাশে হলে ভালো হয়।
-আমি বলি কি...। না থাক।
-কি বলুন। শুনি। (আমি তখনও বিবেককে আপনি করে সম্বোধন করি) 
-না থাক আরেক দিন বলব। আজ যাই দেখ আর দু’একদিন। বেশি সমস্যা হলে থাকার দরকার নাই।
-কি যেন বলতে চাইলেন, বলুন।
আজ না কাল বলব।
বিবেক উঠে চলে যায়। ও একটু এরকমই, সেটা আমি জানি। হুট করে কিছু বলতে চেয়ে বলবে না। আবার মনে করে পরদিন ঠিকই বলবে। এ কারণে বিবেকের ওপর অত জোর খাটাই না। আমি জানি যে ও বলবেই। বিবেককে বিদায় দিয়ে আমি বাসায় আসি। এসে দেখি একই অবস্থা। সেদিন কোনো রকম খেয়ে শুয়ে পড়ি। আজি আগেই শুয়ে পড়লাম। না মানে, শুয়ে পড়ার ভান ধরলাম।
আমার ছুটির দিন, বিবেকের সাথে দেখা করার কথা, সমুদ্র দেখতে যাব এক সাথে। ওইদিন আমার প্রথম সমুদ্র দেখা। কী অদ্ভুত, শহরের এত কাছে সমুদ্র। কিন্তু এতদিন আসা হয়নি। নিজেকে খুব বোকা বোকা লাগে আমার। বিবেক আমার হাত ধরে। দুজন সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়াই। কী যে ভালো লাগে। মনে হয় আমাদের কোনো দুঃখ নেই, কোনো কষ্ট নেই, কোনো ক্লান্তি নেই। আমরা যুগ যুগ ধরে এই সাগরের পাড়ে বসে আছি। আছি তো আছিই। মনে হয় আমরা দু’জন আমাদের যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট ফেলে দিয়ে যাচ্ছি সমুদ্রের অতল জলে। মিশে যাচ্ছে সাগরের নোনা জলের সঙ্গে। অনেকক্ষণ হাত ধরে বসে থাকি দু’জন। এর মধ্যে সমুদ্রে ডুবে যায় লাল সূর্য।
ফিরতে হবে আমাদের। ফেরার আগে বিবেক আমার সঙ্গে বাসার বিষয়টি নিয়ে কথা বলে।
আচ্ছা, কিছু ভাবলে?
কিসের?
বাড়ি ছাড়ার।
ছেড়ে দিয়ে কোথায় উঠব। এখনও তো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না।
একটা কাজ করলে কেমন হয়?
কি?
চলো আমরা দু’জন এক সঙ্গে থাকা শুরু করি। এখানে তো অনেকেই থাকে।
ওর কথা শুনে থমকে যাই। এক সঙ্গে! ও আর আমি! সম্ভব?
কি উত্তর দেব? কি বলব। ওর সঙ্গে থাকলে তো ভালোই হয়। আমি আমাকে কেয়ার করার মতো কাউকে পেতাম। আমাকে ভালোবাসার মানুষটা সারাক্ষণ পেলাম। আমি হ্যাঁ-না কিছুই বলি না। আমার নীরবতা দেখে ও চুপচাপ হয়ে যায়। এই প্রস্তাবের পর এবং সারা বিকেল আমাদের খুব বেশি কথা হয় না। বাসায় চলে আসি।
সেই রাতে সারা রাত আমার ঘুম হয় না। বিছানায় এপাশ-ওপাশ করি। দুই চোখের পাতা এক করতে পারি না। আমার ভেতরটা এলোমেলো হয়ে যায়। সারারাত আমার মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরপাক খায়। সম্ভব? কোনো ঝামেলা হবে না তো? ততক্ষণে আমার ছোট মাথাটা একটু কুয়ো হয়ে যায়। সেই কুয়োর মধ্যে বালতি ফেলে দেওয়ার মতো চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়েছেও। আমরা কি একসঙ্গে থাকব তাহলে? কি হবে থাকলে? আমাকে যতটা কেয়ার করে প্রতিদিন সেটা করবে তো সকাল সন্ধ্যা? সব ভালোবাসা এক জায়গায় বন্দি করে আমার সামনে মেলে ধরবে তো? এসব ভাবতে ভাবতে মধ্যরাতের দিকে আমি ঘুড়িয়ে পড়ি।
আমি ঘুম থেকে উঠেই মেয়েটিকে জানিয়ে দেই যে, আমি আর আগামী মাস থেকে এখানে কন্টিনিউ করব না। নতুন বাসায় উঠব। আই অ্যাম ভেরি সরি।

আরে, সরি বলার কিছু নেই। না থাকলে সমস্যা নেই। একটা কথা বলি?
আমি খুব উৎসুক চোখে তাকাই। বলো,
তুমি খুবভালো একটা মেয়ে। খুব ভালো। তোমাদের দেশের সবাই যদি এমন হতো?
আমি কি বলব বুঝতে পারি না। কিছু একটা বলা উচিত। থ্যাংকু বা এই জাতীয় কিছু।
কিন্তু আমার বলা হয় না। এই ক’দিনে এত সমস্যার মধ্যেও মেয়েটিকে আমার ভালো লেগেছে। গত কয়েক মাস ধরে বিছানা শেয়ার করার কারণেই আরও বেশি ভালো লেগেছে। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে এ ক’দিনে কথা বলেছে। গল্প করেছে। এই মেয়েটিকে ছেড়ে যেতেও আমার খারাপ লাগছে। আর এত সুন্দর করে কেউ কখনও আমাকে বলেনি, তুমি খুব ভালো একটা মেয়ে। মা বলেছিল বোধ হয় দু’একবার। তবে সেটা মেয়ে ভোলানো ছিল কি না জানি না। কিন্তু আজ এই অনাত্মীয় মেয়েটি কী অসাধারণ করে বলল, তুমি অনেক ভালো একটা মেয়ে।

প্রশংসা শুনতে সবারই ভালো লাগে। আমি মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরি। মনে হয়, বহুদিন পর আমার বোনকে জড়িয়ে ধরেছি। আমি বলি, তুমিও অনেক ভালো ও লক্ষ্মী একটা মেয়ে।

পরের সপ্তাহে বিবেকের সাথে দেখা হয়। বিবেককে আমার সিদ্ধান্তের কথা জানাই। আগামী মাস থেকে আপনার সঙ্গে উঠব। ও একটা লাফ দেয় খুশিতে। ওর খুশি খুশি মুখটা দেখে ভালো লাগে। তখনই অনলাইনে ও বাসা খোঁজা শুরু করে। আমি শুধু বলি, যেখানে বাংলাদেশিরা নেই এমন জায়গায় থাকতে চাই। যেখানে আমাদের কেউ চিনবে না। জানবে না এক জোড়া কবুতর বাসা বেঁধেছে। এই দেশে মানুষদের আমার ভয় নেই। ভয় ওই বাংলাদেশিদের। তারা যদি কোনো কারণে জানতে পারে আমরা একসঙ্গে আছি তাহলে সেটা বাংলাদেশ অবধি পৌঁছাতে এক ঘণ্টাও সময় লাগবে না। বিবেক একমত হয় আমার সঙ্গে। বলে, অবশ্যই। আমরা শহরের এক প্রান্তে বাসা নেব তাহলে। আমি হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দেই, তথাস্তু।

আমার বারবারই মনে হয়, আচ্ছা এই ছেলেটাকে কি আমি ভালোবাসি? বাসলে সেটা কতটা? নাকি এটা শুধুই মায়া। আমি ঠিক জানি না। আমি ভাবনার অতলে ডুবতে থাকি।

কিন্তু আদৌ কি বুঝতে পারব আমি তাঁকে ভালোবাসি কি না? নাকি এই মায়ার নামই ভালোবাসা। আরও একটা প্রশ্ন মনে আসে, আচ্ছা বিবেক কি আমাকে ভালোবাসে? আমরা তো কখনই একে অপরকে বলিনি আমরা ভালোবাসি। বৃষ্টিধারার মতো শুধু আমাদের আবেগটাই ঝরে গেছে। আমরা সেই আবেগে ভিজেছি মাত্র। ঠিক জানিও না ভালোবাসলে একে অপরকে বলতে হয় কিনা। নাকি শুধুই বুঝে নিতে হয়। আমার মাথাটা এলোমেলো হয়ে যায়। শুধু এতটুকু বুঝি, আমার একটা নির্ভরতা লাগবে। একটা আশ্রয় খুব জরুরি। সঙ্গে নিরাপত্তা। সব মিলিয়ে মনে হয়, এই ছেলেটি আমার জন্য পারফেক্ট। যাকে আসলে বিশ্বাস করা যায়। নির্ভর করা যায়। বিবেক আস্তে আস্তে আমার জীবনটা বদলে দিতে শুরু করেছে। যেভাবে একটা সাপ ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে।

এক সঙ্গে থাকা শুরু করছি। হয়তো বাকি জীবনটা কাটাব। এরই মাঝে পড়াশোনা শুরু করেছি অনার্স বিজনেস ম্যানেজমেন্টে। ভালো রেজাল্ট এবং ভালো জায়গায় পড়াশোনা করার কারণে পড়াশোনা করা অবস্থায়ই আমি একটি মাল্টিন্যাশনাল স্টক ব্রকিং কোম্পানিতে চাকরি পেয়ে যাই।
চলতে থাকে আমাদের জীবন। সেটা অন্যরকম অনুভূতি। নিজেকে বদলানোর অনুভূতি।

‘প্রিয়তির আয়না’ বই থেকে নেয়া 

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!