• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কক্সবাজারে বিলীন হচ্ছে ঝাউবন আর বালিয়াড়ি


কক্সবাজার প্রতিনিধি আগস্ট ২৫, ২০২০, ০১:২৬ পিএম
কক্সবাজারে বিলীন হচ্ছে ঝাউবন আর বালিয়াড়ি

কক্সবাজার : বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য্য বর্ধনকারী পরিবেশ বান্ধব সবুজ বেষ্টনীর ঝাউ বাগান দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বনবিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢেউয়ের ধাক্কাসহ বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায় ৩০০ হেক্টর ঝাউ বাগান ইতিমধ্যে সমুদ্র গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

এছাড়া গেল কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে সৈকতের বালিয়াড়ী’র ভাঙ্গনও তীব্র আকার ধারণ করেছে। কয়েকদিনের জোয়ারে ঢেউয়ের ধাক্কায় ভাঙ্গন আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জিওব্যাগ দিয়েও ভয়াবহ এ ভাঙ্গন ঠেকানো যাচ্ছে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, যেসব স্থানে ভাঙ্গন চলমান রয়েছে সে সব স্থানে প্রতিরক্ষামুলক কাজ বাস্তবায়ন করে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। গেল বছর ১ হাজার ২০০ মিটার জিওব্যাগ স্থাপন করা হয়েছে। চলতি বর্ষায় আরো ৪৩০ মিটার জিওব্যাগ স্থাপন করা হচ্ছে। সব মিলে এই বছর ১৬৩০ মিটার জিওব্যাগ থাকছে ভাঙ্গনরোধে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের সমুদ্রের পাড়ের নাজিরারটেক, ডায়বেটিক পয়েন্ট, কবিতা চত্তর, সৈবাল পয়েন্টসহ বিভিন্ন পয়েন্টে বিলিন হয়ে গেছে ঝাউগাছ।

এছাড়া একইভাবে সমুদ্র সৈকতের ঐতিহ্যবাহী লাবনী পয়েন্টসহ বিভিন্ন পয়েন্টের বালিয়াড়ীতে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে ঢেউয়ের ধাক্কায়। কোথাও কোথাও জিওব্যাগসহ নষ্ট হয়ে গেছে ঢেউয়ের ধাক্কায়।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়,  জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২-৭৩ সালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ীতে ঝাউবাগান সৃজন শুরু হয়। এ সময় প্রায় ৫০০ হেক্টর বালিয়াড়ীতে সাড়ে ১২ লাখেরও ঝাউ গাছ রোপন করে বনবিভাগ। পরবর্তিতে বনবিভাগ আরো ১৭০ হেক্টর ঝাউ বাগান বৃদ্ধি করে। এ সবুজ বেষ্টনী ঝাউ বাগান বিশ্বের দ্বীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগে জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। কিন্তু জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। সমুদ্রের ঢেউয়ের ধাক্কায় গেল কয়েক বছর ধরে প্রতি বর্ষা মৌসুমে সৈকতের বালিয়াড়ী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করে। এতে ঝাউ বাগানে নেমে আসে মহা বিপর্যয়।

বালিয়াড়ির ও ঝাউবাগান সাগরে বিলীন হওয়ায় বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত সৌন্দর্য হারাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র, মারাত্মক পরিবেশ বিপর্য়য়ের মুখে পড়ছে পর্যটন শহর।

এ ব্যাপারে বিভাগিয় বন কর্মকতা (কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ) মো: হুমায়ুন কবির জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২-৭৩ অর্থ বছর থেকে এ পর্যন্ত ৬৭০ হেক্টর সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ীতে ঝাউবাগান সৃজন করা হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে প্রায় ৩০০ হেক্টর ঝাউ বাগান ইতোমধ্যে বিলিন হয়ে গেছে। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প গ্রহন করে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কাজ করছে বলেও জানান বনবিভাগের এ কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানানন, বর্ষাকালে সমুদ্র উপকূলে একটি প্রবাহ সৃষ্টি হয়। এই প্রবাহের কারণে গত কয়েক বছর ধরে ভাঙ্গন দেখা যাচ্ছে। এ বছর সৈকতের বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। যেসব স্থানে ভাঙ্গন চলমান রয়েছে সে সব স্থানে প্রতিরক্ষামুলক কাজ বাস্তবায়ন করে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। গেল বছর ১ হাজার ২০০ মিটার জিওব্যাগ স্থাপন করা হয়েছে। চলতি বর্ষায় আরো ৪৩০ মিটার জিওব্যাগ স্থাপন করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন জানান, এবছর প্রবল জোয়ার ও পানির স্রোতে খুবই ভয়ংকর। যে কারনে সমুদ্র তীর প্রচন্ড ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। এতে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ঝাউ বাগানের বেশকিছু সাগরের জোয়ারের ঢেউয়ে তলিয়ে গেছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড জিওব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধে চেষ্টা করছে। ভাঙ্গন রোধের পাশাপাশি আরো ঝাউ বাগান সৃজনে প্রয়োজনিয় সব পদক্ষেপ নেয়া হবে।

বালিয়াড়ির ও ঝাউবাগান সাগরে বিলীন হওয়ায় বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত সৌন্দর্য হারাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র, মারাত্মক পরিবেশ বিপর্য়য়ের মুখে পড়ছে পর্যটন শহর। তাই স্থায়ীভাবে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ সহ যথাযথ উদ্যোগ গ্রহনের মাধ্যমে সরকার কক্সবাজারবাসীকে এ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করবেন এমনটাই প্রত্যাশা জেলাবাসীর।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!