• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কখনও সময়মতো কাউন্সিল করতে পারেনি বিএনপি


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ১২, ২০১৯, ০২:৩১ পিএম
কখনও সময়মতো কাউন্সিল করতে পারেনি বিএনপি

ঢাকা : দল গঠনের পর থেকে কখনও সময়মতো কাউন্সিলের আয়োজন করতে পারেনি বিএনপি। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। কাউন্সিলের নির্ধারিত সময় পার হলেও বিএনপি এখন পর্যন্ত তা করতে পারেনি। এমনকি কাউন্সিল করার সম্ভাব্য দিনক্ষণও বলতে পারছেন না দলটির নেতারা। তাদের মতে, দলীয় প্রধান কারাগারে থাকায় সহসাই দলের সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।

বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের নির্বাহী কমিটির মেয়াদ ৩ বছর। দলটির সর্বশেষ ষষ্ঠ কাউন্সিল হয়েছিল নির্ধারিত সময়ের ৬ বছর পরে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর দলের স্থায়ী কমিটির দুই সদস্যের বক্তব্যে দলের পুনর্গঠনের বিষয়টি আসার পরে নেতাকর্মীদের আশা ছিল এবার হয়তো নির্ধারিত সময়ে কাউন্সিল হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত কাউন্সিল নিয়ে বিএনপির হাইকমান্ডের কোনও চিন্তা নেই বলে জানা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘কাউন্সিল কবে হবে তার নির্ধারিত তারিখ বলা যাচ্ছে না। তবে এরই মধ্যে জেলা কমিটি ও অঙ্গ-সংগঠনের কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘কাউন্সিল তো করতেই হবে। সময়-সুযোগ করে আমরা কববো। তবে দেশের এই দুর্যোগ মুহূর্তে কাউন্সিলের নির্দিষ্ট দিনক্ষণ বলা কঠিন।’

দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কাউন্সিলের কিছু প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ম্যাডাম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় এবং কাউন্সিলের জন্য যে রকম সাংগঠনিক শক্তির দরকার তা না থাকায় নির্ধারিত সময়ে কাউন্সিল করা যায়নি। তবে কাউন্সিলের কিছু কিছু কাজ চলছে।’

বিএনপির কাউন্সিলের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দলটির প্রথম কাউন্সিল হয় ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বরে। ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী হন প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব। দ্বিতীয় কাউন্সিল হয় চার বছর পর ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি। সেই কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব হন সাবেক বিচারপতি আবদুস সাত্তার ও ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী। সাত বছর পর ১৯৮৯ সালের মার্চে হয় তৃতীয় কাউন্সিল। ওই কাউন্সিলে খালেদা জিয়া চেয়ারপারসন এবং সালাম তালুকদার মহাসচিব হন।

এরপর চার বছর বিরতি দিয়ে ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বরে চতুর্থ কাউন্সিলে খালেদা জিয়া চেয়ারপারসন এবং আবদুল মান্নান ভূঁইয়া মহাসচিব হন। এরপর ১৬ বছর পর ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর পঞ্চম কাউন্সিলে খালেদা জিয়া চেয়ারপারসন এবং খন্দকার দেলওয়ার হোসেন মহাসচিব হন। সর্বশেষ ৬ বছর পর ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলটির ষষ্ঠ কাউন্সিলে তৃতীয়বার খালেদা জিয়া চেয়ারপারসন এবং ভারপ্রাপ্ত থেকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর ৩ বছর পরপর কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল। তবে বিভিন্ন সময়ে নানা সঙ্কটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে তা হয়নি এটা ঠিক।’
একাদশ সংসদ নির্বাচনের ব্যর্থতা থেকে বেরিয়ে আসতে বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য কাউন্সিল ও দল পুনর্গঠনের কথা বলেছেন নেতারা। পুনর্গঠন শুরুও হয়েছে। দলের বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের আহ্বায়ক কমিটি গঠন হয়েছে। গত ২ মাসে অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের মধ্যে ওলামা দল, তাঁতী দল, কৃষক দল, ড্যাব, শ্রমিক দল আহ্বায়ক কমিটি হয়েছে।

গত ১৮ জানুয়ারি জিয়াউর রহমানের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদেরকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে দল পুনর্গঠন করতে হবে। যারা প্রার্থী ছিলেন তাদেরকে নিজ নিজ এলাকার নেতাকর্মীদের মামলা থেকে পরিত্রাণ করা এবং জেল থেকে মুক্ত করাতে হবে। যেসব এলাকায় আমাদের প্রার্থী ছিল না সেখানের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করতে হবে। কাউন্সিলের মাধ্যমে দলকে পুনর্গঠন করতে হবে। নির্বাচনে পরীক্ষিতদের সামনে আনতে হবে।’

একই সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘দলের ত্যাগী নেতাদের সামনে এনে দলকে পুনর্গঠন করতে হবে। দরকার হলে আমরা সামনে থেকে সরে যাবো। তারপরও দলকে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পুনর্গঠন করতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘বিভিন্ন সময় যেসব নেতা দলের কাউন্সিল ও পুনর্গঠনের কথা বলেছেন সেগুলো তাদের নিজস্ব বক্তব্য। কোনোটা তৃণমূলের জন্য সান্ত¡না দেওয়ার বক্তব্য ছিল।’

বিএনপি নেতারা বলছেন, এখন দলের মূল টার্গেট অঙ্গ-সংগঠনগুলো শক্তিশালী করে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলকে জোরদার করা। ফলে এখন কাউন্সিল করতে গেলে সেই অবস্থান থেকে সরে যেতে হবে। খালেদা জিয়াকে করাগারে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে লন্ডনে রেখে কাউন্সিল করা সম্ভব নয়। এছাড়া দলীয় প্রধানকে কারাগারে রেখে কাউন্সিল হলে সরকারও সমালোচনা করার একটা জায়গা পাবে। তারা বলবে, খালেদা জিয়া ছাড়া বিএনপি ভালো চলছে। দলে তার আবেদন নেই।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে কাউন্সিল করার চিন্তা নেই আমাদের। এখন দলের মূল এজেন্ডা তার মুক্তি আন্দোলন জোরদার করা। তার মুক্তির পরে কাউন্সিল নিয়ে আমরা ভাববো।’

তিনি আরও বলেন, ‘দলের যেসব অঙ্গ-সংগঠনের আহ্বায়ক কমিটি হয়েছে তা নির্ধারিত সময়ে কাউন্সিল করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হবে আগে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!