• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কবুতর দিয়ে ইয়াবা পাচার!


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২০, ২০১৯, ০৮:৩১ পিএম
কবুতর দিয়ে ইয়াবা পাচার!

ঢাকা: দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে মাদক কারবারিরা। মাদক পাচার বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে সময় ধরা পড়ছে তারা। তবে এর মধ্যেও নির্বিঘ্নে নিষিদ্ধ মাদক ইয়াবা পাচার করছে কারবারিরা। ইয়াবা পাচারে জুতার ভেতর, পেটের ভেতর, পায়ূ পথের পর এবার নতুন কৌশল হিসেবে কবুতরকে ব্যবহার করছে মাদককারবারীরা।

প্রাচীনকালে কবুতর পালন করা হতো চিঠি আদান প্রদানের কাজে। শোনা যায় প্রাচীনকালে রাজা বাদশাহ তাদের বিভিন্ন ধরনের বার্তা প্রেরণের জন্য বেছে নিতেন কবুতরকে। এই পাখি নির্ভুলভাবে দিক নির্ণয় করে গন্তব্যে পৌঁছতে পারে। অনাদিকাল থেকেই শান্তির দূত হিসেবে কবুতর ভারতবর্ষে তথা বাংলার সর্বত্র খ্যাত। এ শান্তির দূতই এবার ইয়াবা পাচারের মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

অনুসন্ধান বলছে, একেকটি কবুতরের দুই পায়ে সর্বোচ্চ ৫০ গ্রামের মতো করে ইয়াবা বড়ি নিয়ে আসা যায় বলে জানিয়েছেন এই পাচারে জড়িত একজন। একেকটি ইয়াবা বড়ির ওজন ০.১ থেকে ০.২ গ্রাম। এই হিসাবে ২৫০ থেকে ৫০০টি বড়ি বয়ে নিতে পারে একেকটি কবুতর।

বাংলাদেশে ইয়াবা আসে মূলত মিয়ানমার থেকে। আর কক্সবাজার হয়েই তা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই জেলাটিকেও রেখেছে নজরদারিতে। ফলে সনাতন পদ্ধতি ছেড়ে পাচারকারীরাও নতুন নতুন কৌশল করতে ব্যস্ত।

কেবল কক্সবাজার থেকে ঢাকায় নয়, ঢাকাতেও এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় বড়ি পাঠাতে কবুতর ব্যবহার করা হয়। ইয়াবা পাচারের এই অভিনব উপায়ের তথ্য জেনে পুলিশও বিষয়টি নিয়ে মাঠে নেমেছে। একজন কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে।

অনুসন্ধান বলছে, ইয়াবা পাচারে ব্যবহার করা হয় গিরিবাজ নামে এক জাতের কবুতর। দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রেসার কবুতরে রূপ দেয়া হয় এই পাখিকে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতার জন্য ব্যবহার করা হয় থাইল্যান্ড ও পাকিস্তানের হুমা জাতের কবুতর।

রাজধানীর আদাবরের কবুতর পালনকারী কায়সার হাওলাদার বলেন, ছয় মাস প্রশিক্ষণ দিলে এসব কবুতর এক থেকে দেড়শো কিলোমিটার দূর থেকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। দূরত্ব বাড়লে প্রশিক্ষণের সময়ও বাড়াতে হয়।

তিনি জানান, ১৪ থেকে ১৮ মাস ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিলে এসব কবুতর তিন থেকে চারশ কিলোমিটার দূর থেকে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে।

কবুতর প্রশিক্ষক কায়সার হাওলাদার জানান, একটি রেসার কবুতরের পায়ে সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম ওজন নিজের পায়ে বেঁধে উড়তে পারে। তবে এর বেশি ওজন দেয়া হলে তারা উড়তে পারবে না।

মো. নয়ন নামের একজন কবুতর পালনকারী বলেন, প্রশিক্ষিত কবুতরের মাধ্যমে ওজনে হালকা এমন অনেক কিছুই হাতবদল করা যায়। প্রশিক্ষিত কবুতর ব্যবহার করে ইয়াবা পাচার করাটা অবাস্তব কিছু না। এর আগেও আমি বিষয়টা শুনেছি। কিন্তু সরাসরি দেখিনি।

কক্সবাজারের উখিয়ায় হোয়্যাইককং নামের স্থানে রেসার কবুতরের আধিক্য বেশি। তবে গত ছয় মাস আগেও এখানে কবুতরের আনাগোনা এখনকার চাইতে কম আছে। বর্তমানে হোয়্যাইককং থেকে ঢাকার উদ্দেশে কবুতর পাঠানো হয় বলে তথ্য মিলেছে।

এ ছাড়া কক্সবাজার সদরের কালুর দোকান এলাকা, কক্সবাজার বিমানবন্দর সংলগ্ন বাহারছড়া, কলাতলী, দড়িয়ানগর, বাংলাবাজার এলাকাতেও রেসার কবুতরের আনাগোনা আছে।

তথ্য বলছে, কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে ঢাকার মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প, হাজারীবাগ, বসিলা এলাকায় কবুতর পাঠানো হচ্ছে।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একজন মাদকসেবী জানান, মানবদেহের বিভিন্ন স্থানে, সাইকেলের টিউবে, মোটরসাইকেলের টুলবক্সে, সবজির মধ্যে করে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক পাচার করা হয়। প্রশাসনের তৎপরতায় মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের পদ্ধতি পাল্টাতে বাধ্য হয়।

রাজধানীর রায়ের বাজার এলাকার এই বাসিন্দা বলেন, কবুতর দিয়া, টোকাই পোলাপান দিয়া ইয়াবা পাঠানো সোজা। আর ধরাও পড়ে না। এই জন্য এমনে পাঠায়। পুলিশ তো আর কবুতরের পায়ের দিকে তাকাইয়া থাকব না। আর কেউ দেখলেও ধরতে পারব না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানা বলেন, কবুতর ব্যবহার করে ইয়াবা পাচারের এমন তথ্য আমাদের কাছে একেবারেই নতুন। ঘটনার সত্যতা যাচাই এবং তদন্তে এর মধ্যেই একজন অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

চলতি শতকের শুরু থেকেই মাদকের তালিকায় ইয়াবার নাম যুক্ত হয়। আর এখন মাদকাসক্তদের মধ্যে ৭০ শতাংশই এই বড়িতে আসক্ত বলে তথ্য মিলেছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে যাওয়ার পর গত বছরের মে মাস থেকে মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়। এই অভিযানে সন্দেহভাজন তিন শতাধিক মাদক কারবারি নিহত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে।

তবে এত প্রাণহানির পরও ইয়াবার কারবার বন্ধ হয়নি।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!