• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কম খরচে লাভ বেশি, সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের


নিউজ ডেস্ক জানুয়ারি ২৫, ২০২০, ০৯:২৭ এএম
কম খরচে লাভ বেশি, সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের

ঢাকা : অল্প খরচ ও শ্রমে অধিক ফলন হওয়ায় দিন দিন সরিষা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন লক্ষ্মীপুরের চাষিরা। ধান আবাদ করে লোকসানে এবং বাজারে সরিষার দাম ভালো পাওয়ায়ও এ ফসলের আবাদ বাড়ছে। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজু চৌধুরীর হাট এলাকার মেঘনা নদী উপকূলের চর রমনী মোহন ও ভবানীগঞ্জ এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে চাষ হয়েছে সরিষার। এখানকার কৃষকরা এখন অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষা চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

চর রমনী মোহন ও ভবানীগঞ্জ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে হলুদ আর হলুদ। দু’চোখ যেদিকে যায় সেদিকেই সরিষার হলুদ রঙের ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে সরিষা ক্ষেত। এক দিকে মেঘনা নদী অন্য দিকে সরিষা ফুলে হলুদের সমারোহ। মৌমাছি আর প্রজাপতির আনা-গোনায় সরিষা মাঠ গুলো হয়ে উঠেছে মনোমুগ্ধকর।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারি পরিচালক মো. আবুল হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৩৮৭ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। যা গতবারের চেয়ে ১২৯ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। তার মধ্যে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ৬৭ হেক্টর, রায়পুর উপজেলায় ২২০ হেক্টর, রামগঞ্জ উপজেলায় ২৫ হেক্টর, রামগতি উপজেলায় ২০ হেক্টর ও কমলনগর উপজেলায় ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৪০ মেক্টিকটন । 

চর রমনী মোহন এলাকার সরিষা চাষি হুমায়ুন, আবেদ আলী ও আবদুল হাই বলেন, আমন ধান কাটার পর জমি কয়েক মাসের জন্য পরিত্যক্ত থাকে। আর সেই জমিতেই অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করেছি আমরা। আমাদের মত অনেক কৃষক সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং রোগ-বালাই না হওয়ায় এবার ভাল ফলনের আশা করছেন তারা। 

ভবানীগঞ্জ এলাকার সরিষা চাষি সুবেদ আলী, জোবায়ের মিয়া ও একরাম হোসেন বলেন, কয়েক বছর আগেও তাদের জমি পরিত্যক্ত থাকতো, কিন্তু বর্তমানে কৃষি বিভাগের পরামর্শে তারা এখন বোরো ধানের আগে জমিতে সরিষা চাষ করছেন। বোরো ধান চাষের আগে সরিষা চাষ করে বাড়তি আয় হওয়ায় দিন-দিন সরিষা চাষে এ অঞ্চলের কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। সরিষার ফুল মাটিতে পড়ে জমির উবরর্তা শক্তি বাড়ায়। তা ছাড়া সরিষার বাজার দরও ভালো হওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন তারা।  

আরেক সরিষা চাষি সৈয়দ আহম্মদ বলেন, এবার এক বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। বীজ রোপণের দুই-তিন মাসের মধ্যে সরিষা ঘরে তোলা যায়। এছাড়া সরিষা চাষে খুব বেশি কষ্ট লাগে না। বেশি সারেরও প্রয়োজন হয় না। সার প্রয়োগের আগে ভালোভাবে একবার জমি নিড়ানি দিলেই হলো। এক সময়ে লক্ষ্মীপুরে প্রচুর পরিমাণ সরিষার আবাদ হতো। পরে সরিষার আবাদ থেকে সরে এসে ধান আবাদের প্রতি ঝুঁকে পড়েন কৃষক। ফলে এ অঞ্চলে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায় সরিষা আবাদ। তবে বছরের পর বছর ধানে লোকসান হওয়ায় কৃষক এখন আবার সরিষা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। জেলার প্রায় সব এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এখন হলুদ আর সবুজের সমাহার।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. বেলাল হোসেন খান বলেন, জমির উর্বরতা ধরে রাখতে সরিষার আবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এজন্য অধিকাংশ কৃষক এখন সরিষা আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। সরিষা চাষে অল্প পরিশ্রমে অধিক ফসল ঘরে তোলা যায়। তাছাড়া আবহাওয়া অনুকূল থাকায় কৃষকরা সঠিক ভাবে সরিষা আবাদ করতে পেরেছে। মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে চাষিরা সরিষা চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন। কৃষকদের বাড়তি আয়ের জন্য সরিষার এই সব ক্ষেতে মধু আহরণের জন্য মৌ-বাক্সও স্থাপন করা হয়েছে। 

সোনালীনিউজ/এএস
 

Wordbridge School
Link copied!