• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘করোনা’ করুণা কোরো না


ওমর ফারুক শামীম মার্চ ১১, ২০২০, ০১:০৩ পিএম
‘করোনা’ করুণা কোরো না

ঢাকা : ইসলাম শান্তির ধর্ম। আমরা দাবিও করি তা-ই। ধর্মকর্মেও কম যায় না এদেশের মানুষ। ৯৫ ভাগ মানুষই ইসলাম ধর্মের অনুসারী। রাজধানী ঢাকাকে বলা হয় মসজিদের শহর। গ্রামেও এবাদত বন্দেগির জন্য পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ আছে। আছে ধর্মীয় শিক্ষার জন্য মাদরাসা। কিন্তু কিছু বিশেষ সময়ে আমাদের শান্তি আর সৌহার্দ্যের এই ধর্ম প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়। আমাদের অধর্মের কারণে ধর্ম যখন প্রশ্নের মুখে পড়ে, তখন সে দায় আমাদেরই নিতে হয়।

রাষ্ট্র তার প্রতিপালন ব্যর্থতায় আমাদের নৈতিক শিক্ষার উন্নতি করতে পারেনি সেটা ঠিক। কিন্তু আমরা ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ এবং ধর্ম পালন করেও কেন নিজেদের নৈতিক উন্নতি ঘটাতে পারিনি? তাহলে এই ব্যর্থতা কীসের? এর জন্য কে দায়ী? তা কী এখনো চিহ্নিত করতে পারব না?

ধর্মীয় জ্ঞান কম-বেশি যা-ই থাকুক, ইসলাম এবং রাসুলের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে আমরা তাকে ছেড়ে দিই না। কখনো কখনো জীবন দিতেও দ্বিধা করি না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়লেও শুক্রবার অন্যদের চলাচলের কথা চিন্তা না করে রাস্তা বন্ধ করে নামাজ পড়ি। মাথায় টুপি, হাতে তসবি প্রদর্শন করতে করতেও আমরা ধর্মকে চর্চা করি। অথচ ইসলাম ধর্মে লোক দেখানো এবাদতকে নিষেধ করা হয়েছে। আমরা প্রকৃত ধর্ম পালনের চেয়ে ধর্মের আগাছাই বেশি লালন করার চেষ্টা করি।

রমজান মাসে বিশ্বের অন্যান্য দেশে দ্রব্যমূল্য শিথিল হয়, অথচ আমাদের দেশে বেড়ে যায়! বাজেটে কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকলে তা গুদামে স্টক হয়ে যায় আগে থেকে। বিক্রেতার কাছে দাম বেড়ে যায় বাজেটে দাম বাড়ার আগেই। এ চিত্র যে শুধু গুটিকয়েক লোভী ব্যবসায়ীর মধ্যে তা কিন্তু নয়। দেশের খুচরা ব্যবসায়ী থেকে আড়তদার এবং গাঁ-গেরামের ছোট্ট দোকানদারও অতিমুনাফার এই লোভের লাভ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে! অতিসম্প্রতি দেশে পেঁয়াজের বাজারের চিত্র আমাদের কম শেখায়নি।

অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে বেশি বেশি মাতামাতি করে। যার মুখে সপ্তাহের একদিনও সৃষ্টিকর্তার নাম শোনা যায় না, সেও তখন ব্যস্ত থাকে আল্লাহ-ভগবান-ঈশ্বরকে নিয়ে। এর কারণ মানুষ নিজের অপরাধবোধ থেকে অনুতপ্ত হয়, নিজের মধ্যে খোদাভীতি তৈরি হয়। তাই সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠত্বের কথা নিজেও বলে এবং অন্যকেও বলে উদ্বুদ্ধ করতে চায়। কিন্তু আমাদের সমসাময়িক চিত্র যেন ভিন্ন বার্তা দেয়।

গত ৮ মার্চ দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর প্রকাশের পর যা দেখছি তাতে বিস্মিত হইনি। স্তম্ভিত আমি এবং এদেশের অনেক মানুষ। ৮ মার্চ বেলা দুটায় রাইদা পরিবহনে বসে মালিবাগ মোড়ে হকারকে মাস্ক বিক্রি করতে দেখেছি। একরাতের ব্যবধানে মাস্ক উধাও হয়ে গেছে মার্কেট থেকে। আবার কোথাও কোথাও তিন-চারগুণ বেশি দামে মাস্ক বিক্রি হচ্ছে!

অথচ এই সভ্য দুনিয়ায় এমন একটি দুর্যোগ বা বিপদকালীন সময়ে যেহেতু এসব পণ্য বেশি ব্যবহার হবে, তাই বিক্রিও বেশি হবে। ব্যবসাও ভালো হবে। সেহেতু এসবের দাম কমে যাওয়ারই কথা; কিন্তু তা না হয়ে হলো উল্টোটা! রাষ্ট্র এবং ধর্ম আমাদের কী শিখিয়েছে, বার বার সে কথাই আমার মনে প্রশ্ন তৈরি করছে। আমাদের নৈতিক অধঃপতন এতটা নিচে গেছে যে, পশুর সঙ্গেও তুলনা করা যায় না। কারণ পোষা পশুও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে। আমরা যা করি না। কিছু কিছু অতিলোভীর জন্য আজ আমাদের ধর্মীয় আদর্শ প্রশ্নের মুখে। একে অন্যকে কতটা ঠকাতে পারি, কতটা ছিনিয়ে নিতে পারি, এমন কঠিন সময়েও তার প্রমাণ রাখছি। এই বুঝি আমাদের বোধোদয়! এই অপরাধের দায় কে নেবে? আমি বিবেকের কাছে লজ্জিত! নৈতিকতার প্রশ্নে বিব্রত! তাই আমি প্রত্যাশা করি 'করোনায়' যেন আমারও মৃত্যু হয়, 'করোনা' যেন করুণা না করে।

সমাজের সর্বস্তরের নৈতিক অবক্ষয়ের চিত্র আমাদের ধ্বংসকে আরো ত্বরান্বিত করছে। আমরা লোভী-তাপীরা সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থই হাসিল করছি। আমাদের এমন লোভাতুর সমাজ আর রাষ্ট্রের জন্য 'করোনা নয়, মহামারী আর মহাপ্রলয়ের মতো আরো কিছু দরকার!'

লেখক : সাংবাদিক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!