• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনা ঝুঁকিতে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা, রয়েছে সহজ সমাধান


নিউজ ডেস্ক জুলাই ১, ২০২০, ০৫:৪৬ পিএম
করোনা ঝুঁকিতে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা, রয়েছে সহজ সমাধান

ফাইল ছবি

ঢাকা: বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করা করোনাভাইরাসের প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। দেশে প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যা। গত সোমবার একদিনেই আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ চার হাজার ১৪ জন। আর গতকাল মঙ্গলবার একদিনে সর্বোচ্চ ৬৪ জনের রেকর্ড মৃত্যু হয়েছে। 

এরপরেও মানুষের মধ্যে সচেতনতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। যা করোনা বিস্তারের বড় একটি কারণ। সংক্রমণের গতি এতটাই প্রবল হয়ে উঠেছে যে, কেবল জুন মাসেই দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করেছেন। এ যাবৎ মোট আক্রান্তের প্রায় ৬৮ শতাংশ এবং মৃত্যুর প্রায় ৬৫ শতাংশই ঘটেছে গত এক মাসে। আর এই চিত্র সামনের দিনগুলোর জন্য মহাবিপদ সংকেত বহন করছে বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

এর ফলে সাধারণ মানুষ যেমন ঝুঁকিতে আছেন তেমনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি অনেকটাই বেশি। এরমধ্যে ঝুঁকিতে রয়েছেন হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা। এই মহামারি করোনার আবহে হৃদরোগীদের করণীয় কী বা কী ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিবেন এ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের কার্ডিওভাসকুলার অ্যান্ড থোরাসিক সার্জন ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের আক্রান্তের দিন দিন সংখ্যা বাড়ছে। মানুষ যদি সচেতন না হয়, তবে এটা ছড়াবেই। যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপে, কিডনি ডিজিজে ভুগছেন অথবা যাদের ইমিউনিটি কম তারা অবশ্যই বেশি ঝুঁকিতে আছেন। স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে এদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এই মুহূর্তে করোনার ভয়ে হৃদরোগের রোগীরা হাসপাতালমুখী কম হচ্ছেন। এতে করে তার শরীর বেশি খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই অন্য সময়ের চেয়ে এই সময়ে হৃদরোগ বেড়ে যাওয়ার খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যদি হঠাৎ কোন শব্দে আঁতকে ওঠেন, হাত কাঁপে, মোবাইল বাজলে চমকে ওঠেন- এগুলো অ্যাংজাইটি ডিজলভ। এগুলো এমনিতেই হতে পারে, তবে যদি এগুলোর কারণে কোন কষ্ট হয় বা সমস্যা হয় তাহলে একটা বিটাব্লগার খাওয়া যায়। সেই সঙ্গে একটি ইসিজি করে নিতে পারেন।

ডা. সাবরিনা বলেন, করোনাকালে হৃদরোগ দেখা দিলে কিংবা বুকের মাঝে কোন চাপ অনুভব করলে তাকে অবশ্যই নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে হবে। এমন হাসপাতালে যেতে হবে যেখানে ইসিজি এবং পরীক্ষা করার ব্যবস্থা রয়েছে। এর সঙ্গে একত্রে চারটি অ্যাসপিরিন এবং চারটি অ্যাটোবাসিটি ট্যাবলেট খেয়ে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে। এ ওষুধগুলো কিছু সময়ের জন্য রোগীকে প্রটেকশন দিবে।

তিনি বলেন, যার বুকে মাঝে মাঝেই চিন চিন ব্যথা হয়। এর সঙ্গে যদি উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস থাকে তাকে অবশ্যই ডায়াবেটিস টেস্ট, হিউমোগ্লোবিন, লিপিট প্রোফাইল, ক্রিটিনিন, সেই সঙ্গে বুকের এক্সরে ও ইসিজি এবং ইকো টেস্ট করাতে হবে। এই টেস্টগুলো দেখে যদি চিকিৎসক মনে করেন যে, রোগীর এনজিওগ্রামের প্রয়োজন রয়েছে। তবে সেটাও করাতে হবে।

অনেকে বলেন বুকের বাম দিকের ব্যথা হার্টের ব্যথা নয়- এ সম্পর্কে ডা. সাবরিনা বলেন, বেসিক্যাললি সবার পক্ষে লোকেড করা সম্ভব হয় না। কোনও কোনও সময় এমনও হতে পারে রোগীর হার্টের সমস্যা রয়েছে কিন্তু তার কখনই ব্যথা হয়নি বা ফিল করেনি। এরকম রোগীও আছে। তবে বয়সের উপরও এগুলো নির্ভর করে। বয়স একটু বেশি হলে এসব ব্যাপারে সিরিয়াস হতে হবে।

ইতালির গবেষকরা অটোপসি করে দেখেছেন যে, ব্রেইন ও আর্টারিতে প্রচুর ব্লাডক্লোক, ফুসফুসে ব্লাডক্লোক, হার্টের রক্তনালিতে ব্লাডক্লোক রয়েছে। এই ব্লাডক্লোক কেন হচ্ছে, ব্লাডক্লোক থেকে বাঁচার জন্য প্রথম দিন থেকেই কি ওষুধ হওয়া উচিত?

এ সম্পর্কে ডা. সাবরিনা বলেন, যারা হৃদরোগে আক্রান্ত আছেন বা যারা আগে থেকেই ইকোচপিরিন খাচ্ছেন তারা এই ওষুধটি কনটিনিউ করবেন। কিন্তু করোনা হতে পারে ভেবে ইকোচপিরিন খাওয়া যাবে না। করোনা আক্রান্ত হলে আমরা যে মলিক্লোয়েট হেমারিনটি দিচ্ছি, সেটাও ডি-ডায়মার চেক করে দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে রোগীর চিকিৎসকই সিদ্ধান্ত নিবেন যে, তিনি মলিক্লোয়েট হেমারিন ওষুধ রোগীকে দিবেন কী, দিবেন না।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে অনেক হৃদরোগী মারা যাওয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে, এই পরিস্থিতিতে কী করণীয়? 

এ বিষয়ে ডা. সাবরিনা বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের নিজস্ব সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। হৃদরোগী হোক বা ডায়াবেটিক পেসেন্ট হোক বা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন এবং স্বাভাবিক মানুষের জন্য তিনটি জিনিসের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। সেটা হচ্ছে টিডিএস। টি হচ্ছে-টাই, মানে আপনাকে যদি কোন প্রয়োজনে বাইরে যেতেও হয় আপনি চেষ্টা করবেন কম সময় বাইরে থাকার। প্রয়োজনীয় কাজটি করে ফেলে সঙ্গে সঙ্গে চলে আসবেন। ভাইরাস যদি ঢুকেও তাহলে লোডটা কম থাকবে। এক্ষেত্রে আপনার বডি এটি প্রিভেন্ট করতে পারবে। আরেকটি হচ্ছে ডি, মানে ডিসট্যান্স। আপনি যদি তিন থেকে ছয় ফুট এই দূরত্ব মেনটেন করেন তাহলে সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত থাকবেন। অন্যটি হচ্ছে সি-সিলড, যেহেতু ভাইরাসটি চোখ, নাক ও মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে তাই এই তিনটি জিনিসকে যদি সিলড করে রাখা যায় তাহলে আপনার ঝুঁকি অনেকটাই কম। তাই সচেনতার কোন বিকল্প নেই।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!