• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
২০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ

করোনার আঘাতে সাভারে খই ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত


আমিনুল ইসলাম, সাভার প্রতিনিধি এপ্রিল ৩, ২০২০, ০৬:২২ পিএম
করোনার আঘাতে সাভারে খই ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

সাভার : নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন হাট বাজার-বৈশাখী উৎসব সহ নানা বৈশাখী মেলা-খেলা। ফলে করোনার এহেন ছোবলে সাভারের আশুলিয়ার কলেশ্বরী এলাকার প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের জীবন-জীবীকায় ধ্বস নেমে এসেছে।  তাদের একমাত্র পেশা বিন্নি (একপ্রকার খই) বিক্রি।  বছরের অগ্রহায়ণ থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা এ বিন্নি ধানের খই বিক্রি করে সংসার চালান। কিন্তু এবছর করোনার আঘাতে ওই অঞ্চলের দুই শতাধিক ব্যবসায়ীর মাথায় হাত।  বিভিন্ন এনজিও কিস্তি, সংসার চালানো, সন্তানদের লেখাপড়াসহ নানা কাজ থমকে গেছে তাদের। 

সরেজমিনে সাভারের আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউপি’র খান কলেশ্বরী ও কলেশ্বরী পশ্চিমপাড়া এলাকা ঘুরে বিন্নি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যুগ যুগ ধরে এ অঞ্চলের মানুষের একমাত্র পেশা বিন্নির ধানের খই বিক্রি। এ পেশার সাথে এ অঞ্চলের প্রায় দুই শতাধিক পরিবার জড়িত। প্রতিবছর বিভিন্ন হাট-বাজার, বৈশাখী মেলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিন্নি খই বিক্রি করে ভাল লাভবান হতেন তারা।  সেই সাথে বাড়ি থেকে পাইকাররা বিন্নি খই কিনে নিয়ে যেতেন।  কিন্তু এবছর করোনার ছোবল দেশে আঘাত হানার ফলে অন্যান্য ব্যবসার মত এ অঞ্চলের মানুষের একমাত্র ব্যবসায়ও প্রভাব পড়েছে। এবছর এক কেজি পরিমাণ বিন্নি খইও বিক্রি করতে না পাড়ায় প্রত্যেকটি পরিবার লাখ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

কথা হয় খান কলেশ্বরী এলাকার বিন্নি ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান জিয়ার সাথে। তিনি জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার ও কাচিনা বাজার থেকে বিন্নির ধান ক্রয় করে থাকেন। এবছর তিনি প্রতি মণ ধান ২হাজার টাকা ধরে দেড়শ মণ কিনেছেন। যা থেকে প্রায় ৭৫ মণ বিন্নি ভাজবেন তিনি। এরই মধ্যে ১০ মনের মত বিন্নি ভেজে ফেলেছেন এবং ১০ মণের মত বিন্নির চাল মজুদ রেখেছেন। দেশের এই পরিস্থিতিতে তিনি বিন্নি ও বিন্নির চাল মজুদ করে রেখেছেন। তবে আতঙ্কিত এই ভেবে যে মজুদকৃত ভাজা বিন্নি ও বিন্নির চাল এক মাসের বেশী সময় থাকলেই তাতে পোকা ধরবে এবং নষ্ট হয়ে যাবে। এতে করে তিনি প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। সেই সাথে কোন পাইকার বিন্নি কিনতে আসছেন না। এ অবস্থায় তারা বিপাকে পড়েছেন এবং এই ক্ষতি পুশিয়ে উঠা সম্ভব নয়। 

একই এলাকার বিন্নি ব্যবসায়ী সুরত আলী, আয়াত আলী, আব্দুর রহমান, আব্দুল আউয়াল, আমজাদ হোসেন, রহিম উদ্দিন, আতর আলী, কায়েম, আব্বাস আলী ও আলম সহ অনেকেই জানান, বৈশাখী মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিন্নি ধানের খই কেনার জন্য পাইকার আসেন। আমরা প্রতি মণ বিন্নি ৭/৮ হাজার টাকা মণ ধরে বিক্রি করতাম। এবছর কেউ ১’শ, ২’শ ও অনেকই আবার ৩’শ মণ ধান কিনেছেন। ধান থেকে চাল এরপর খই তৈরী করা হয়। খই বিক্রি করেই এ অঞ্চলের অধিকাংশ পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু এ বছর করোনা আতঙ্কের কারণে দেশের সকল মেলা-খেলা ও বৈশাখী উৎসব বন্ধ থাকায় কোন পাইকার আসছে না বিন্নি খই কিনতে। আমরা সকলেই বিন্নি ভেজে ঘরে মজুদ রেখেছি। কিন্তু বেশী দিন মজুদ করে রাখলে তার নষ্ট হয়ে যাবে এবং পোকায় ধরবে। আর আমরা সকলেই আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হব। এ ব্যবসার সাথে জড়ির অধিকাংশ ব্যবসায়ী বিভিন্ন এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বিন্নি ব্যবসা করে থাকেন। কিন্তু বিন্নি বিক্রি না হলে আমরা কিভাবে এনজিওর ঋণ পরিশোধ করবো। তাই ব্যবসায়ী সকলেই আতঙ্কে রয়েছেন।

কলেশ্বরী পশ্চিমপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেন জানান, প্রতি বছরের মত এবারও তিনি ২’শ মণ ধান ক্রয় করেছেন। এথেকে একশ মণ বিন্নি খই হবে। তিনিও একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বিন্নির ধান কিনেছেন। এরই মধ্যে তিনি ৪০ মণের মত বিন্নি ভেজে নিজ ঘরে মজুদ রেখেছেন। কিন্তু বেশী দিন গেলেই সব বিন্নি নষ্ট হয়ে যাবে। আর এতে করে তিনি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। 

আওলাদ হোসেনের মত এ এলাকার নজরুল ইসলাম, রমজান আলী, সোহেল, হানিফ আলী, ওয়ারেছ, বোরহান উদ্দিন, জালাল, এখলাছ, আলমাছ ও সোনামুদ্দিন সহ প্রত্যেকটি পরিবার বিন্নি খই ব্যবসার সাথে জড়িত। কিন্তু এখন সিজন চলাকালীন অবস্থায় এক কেজি বিন্নিও তারা বিক্রি করতে পারছেন না। সরকারের প্রতি তারা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। যাতে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের প্রতি সুদৃষ্টি রাখেন। 

এব্যাপারে সাভারের আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম আজাহারুল ইসলাম সুরুজ জানান, বিন্নি ধানের খই আমাদের আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের একটি ঐতিহ্যবাহিী ব্যবসা। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা বিন্নি কিনে নিয়ে যান। কিন্তু করোনার কারণে এবার কোন পাইকার বিন্নি কিনতে আসছেনা এটা আমি শুনেছি। তাই এবার বিন্নি ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হবে এটাই স্বাভাবিক। আর এনজিওর কিস্তি উঠানো সরকার থেকে বন্ধ করে দিয়েছে। এরপরও যদি কোন এনজিও কর্মকর্তা কিস্তি নিতে যায় তাহলে বিষয়টি দেখব। সেই সাথে আমার ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে যতটুকু সাহায্য সহযোগীতা করা দরকার করবো। 

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!