• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় আতঙ্ক নয়, সচেতন হোন


নিউজ ডেস্ক মার্চ ১৫, ২০২০, ০৯:১১ পিএম
করোনায় আতঙ্ক নয়, সচেতন হোন

ছবি: ইন্টারনেট

ঢাকা: চীন থেকে ছড়ানো ‘নোভেল করোনাভাইরাস’ এর নাম শোনেননি এমন মানুষ বর্তমানে খুঁজে পাওয়া কঠিন। চীন থেকে শুরু করে সারাবিশ্ব পরিভ্রমণ করে করোনাভাইরাস সম্প্রতি বাংলাদেশেও হানা দিয়েছে। সম্প্রতি তিনজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

রোববার (১৫ মার্চ) ওই তিনজনকে সংক্রমণমুক্ত’ ঘোষণা করেছে আইইডিসিআর। শনিবার (১৪ মার্চ) রাতে আরও ২ জন শনাক্ত হয়েছে। যাদের মধ্যে একজন ইতালি, অন্যজন জার্মানি ফেরত। চীনের পর ইতালি করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বিপর্যস্ত। করোনাভাইরাস মূলত চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের সীফুড মার্কেট থেকে ছড়িয়েছে। 

এখন পর্যন্ত পৃথিবীর যেসব দেশে এই করোনা ছড়িয়েছে সেসব দেশের মানুষ কোনও না কোনওভাবে চীন ভ্রমণ করেছেন এবং অজান্তেই নিজের দেশে বহন করে এনেছেন ভাইরাসটি। এরপর ওই দেশের মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এভাবে মূলত সারা বিশ্বে নোভেল করোনাভাইরাস বিস্তার লাভ করেছে। চীন ছাড়াও বিশ্বের প্রায় ১৩৭ টি দেশে এই ভাইরাস বিস্তার লাভ করেছে। 

কবে থেকে করোনাভাইরাস প্রকৃতিতে আছে: এবারই প্রথম নয়। করোনাভাইরাস কিন্তু এর আগেও প্রকৃতিতে ছিল। ১৯৬০ সালের মাঝামাঝি সময়ে সর্বপ্রথম হিউম্যান করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছিল। এই করোনাভাইরাসের অনেক ধরনের প্রজাতি রয়েছে যার মধ্যে কেবল ৭টি মানবদেহে সংক্রমিত হতে পারে। সাধারণ হিউম্যান করোনাভাইরাসের মধ্যে রয়েছে ২২৯ই (আলফা করোনাভাইরাস), এনএল৬ (আলফা করোনা), ওসি৪৩ (বিটা করোনাভাইরাস) এবং এইচকেইউ১ (বিটা করোনাভাইরাস)। এ

র আগে মধ্যপ্রাচ্যে আঘাত আনা সার্স এবং মার্সও করোনাভাইরাস এবং এই করোনাভাইরাসের সর্বশেষ সংযোজন হল নোভেল করোনাভাইরাস। এই ভাইরাসগুলোর মিউটেশন বা এক একটা পরিবর্তনের কারণে একেক  রকম ক্লিনিক্যাল ম্যানুফেস্টেশন বেশি হয়।

যে কারণে ভাইরাসটি জটিল এবং ভয়ঙ্কর: এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের যে বিশেষত্ব দেখা দিচ্ছে তাহলো এই ভাইরাসের কারণে রেস্পিরেটরি ডিস্ট্রেস অনেক বেশি হচ্ছে এবং অনেক বেশি মানুষ ভেন্টিলেটরে যাচ্ছে এবং রেস্পিরেটরি ডিস্ট্রেস এ মারা যাচ্ছেন। করোনা একটি রেস্পিরেটরি প্যাথজেন যেটা আপাররেস্পিরেটরি ট্রাক দিয়ে ‘ড্রপ্লেট ইনফেকশন’ হিসাবে দেহে প্রবেশ করে।

এই রোগের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর, ঠান্ডা এবং কাশি। সাধারণত জ্বর এবং শুকনো কাশি দিয়ে এটি শুরু হয়। জ্বর এবং কাশি হবার এক সপ্তাহের মধ্যে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এই ভাইরাসটি শরীরে প্রকাশ পেতে ১৪ দিনের মতো সময় লাগে।

নোভেল করোনাভাইরাস এমন এক সংক্রামক ভাইরাস যা এর আগে কখনও মানবদেহে সংক্রমণ হয়নি। এই ভাইরাসটির অপর নাম ২০১৯ এনসিওভি। করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট রোগ ‘কোভিড ১৯’। এই জন্যই বেশি মারাত্মক কারণ এটি তীব্র সংক্রামক। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি কিংবা সংস্পর্শ থেকে যে কোনও সুস্থ মানুষের দেহে এটি ছড়াতে পারে।

যেভাবে করোনা মোকাবেলা করা যেতে পারে: করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাবার জন্য আপাতত সচেতনতা এবং পরিষ্কার-পরিছন্নতার কোনও বিকল্প নেই। কারণ এখন পর্যন্ত এই ভাইরাস দমনের জন্য কোনও ভ্যাকসিন বা মেডিসিন আবিষ্কার হয়নি। যদিও বর্তমানে করোনাকে ঘিরে নানা রকম তত্ত্ব বা মিথ বেরিয়েছে যার সবগুলো সত্যি নয়।

এই ভয়ঙ্কর দুর্যোগের সময় ও অনেকে ব্যবসায়িক চিন্তা বা ইউটিউবে নানারকম মিথ্যা বা মনগড়া তথ্য প্রদান করছেন যার অনেকগুলোই ভিত্তিহীন। সুতরাং সঠিক তথ্য পেতে নজর রাখুন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আইইডিসিআর এর ওপর। প্যানিক এবং বিভ্রান্ত না হয়ে সবার উচিত নিজে সচেতন হওয়া এবং অন্যকে সাহায্য করা। তাহলে নিজে যেমন নিরাপদ থাকা যাবে তেমনি অন্যকেও ভাল রাখা যাবে।

● ভাইরাসটি মানুষের দেহ কোষের ভেতরে মিউটেড করছে অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করছে। যার ফলে এটি আরও বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে।

● পরিবারের কেউ সর্দি-কাশিতে বা জ্বরে আক্রান্ত হলে তাকে পৃথক রাখার চেষ্টা করুন। এ রকম অবস্থায় কোনও রকম সময়ক্ষেপণ বা অবহেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব নিশ্চিত হবার জন্য হটলাইনে ফোন করে রক্তের নমুনা নিতে আসার জন্য বলুন। ঘরে এসে মেডিকেল টিম নমুনা নিয়ে গেলে অন্তত সবদিক দিয়েই নিরাপদ থাকা সম্ভব। 

● নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে ঘরবাড়ি, বাথরুম ঘরের কার্পেট, বিছানা এবং পর্দা পরিষ্কার করুন। পাশাপাশি, দরজার হাতলগুলো অন্তত দিনে দু’বার জীবাণুনাশক দিয়ে মুছে ফেলুন।

● গরম আসলে যে করোনা আর ছড়াবে না এমন তথ্যের ভিত্তি নেই। উচ্চ তাপমাত্রায়ও এটি টিকে থাকতে পারে।

● টাকা হাতে নেবার পর ভালভাবে হাত না ধুয়ে, মুখ বা নাকে হাত দেয়া কিংবা কোনও কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

● বাইরে রাস্তার তৈরি যে কোনও খাবার খাওয়া একেবারে বাদ দিন। যারা রাস্তার পাশে খাবার তৈরি করেন তাদের পরিষ্কার-পরিছন্নতার ব্যাপারে যেমন উদাসীনতা রয়েছে তেমনি ফুড হাইজিন যে শূন্যের কোঠায় এতে কার কোনও সন্দেহ থাকার কথা নয়। মনে রাখবেন আক্রান্ত ব্যক্তির থুথু কাশি এবং বিভিন্ন জিনিসে সংস্পর্শ থেকে করোনাভাইরাস ছড়ায়। তাই রাস্তার পাশে এইসব খাবার মোটেও নিরাপদ নয়।

● নোভেল করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য অধিক জামায়েত হয় এমন কোনও অনুষ্ঠান বা প্রোগ্রাম, গণপরিবহন এবং খুব বেশি প্রয়োজন না থাকলে বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

● বর্তমান পরিস্থিতে সম্ভব হলে বিদেশে বেড়াতে যাওয়া এবং বিদেশ থেকে দেশে আসা পরিহার করুন।

● কারও সাথে দেখা হলে হ্যান্ডশেক বা কোলাকুলি করা থেকে বিরত থাকুন।

● কাঁচা বা অর্ধসিদ্ধ খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ঘরে তৈরি ভালভাবে সিদ্ধ করা খাবার গ্রহণ করুন।

● মাছ-মুরগি কাটার পর সবকিছু ভালভাবে জীবাণুনাশক এবং গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। হাত ভালভাবে পরিষ্কার না করে অন্যকিছুতে হাত লাগাবেন না। মাছ-মাংস খুব ভালভাবে সিদ্ধ করে রান্না করুন।  

● হাঁচি বা কাশি দেবার সময় হাতের পরিবর্তে কনুই ব্যবহার করুন।

● বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর প্রথমেই ভালভাবে পরিষ্কার হয়ে নিন এরপর অন্য কাজ করুন।

● বাড়িতে শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তি থাকলে তাদের বাড়তি যত্ন নিন।

● নিজের হাঁচি-কাশি বা নাক পরিষ্কার করা টিস্যু রাস্তায় বা যেখানে সেখানে ফেলবেন না।

● ঠান্ডা কাশি বা জ্বর হলে অফিস বা ঘরের বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

লেখক ● পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!