• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

করোনায় দেশে পারিবারিক আয় কমেছে ৭৪ শতাংশ


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ২, ২০২০, ১১:১৮ এএম
করোনায় দেশে পারিবারিক আয় কমেছে ৭৪ শতাংশ

ঢাকা : করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের ১০ কোটি ২২ লাখ মানুষ অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত দুর্বলতার ঝুঁকিতে পড়েছেন উল্লেখ করে একটি সমীক্ষায় বলা হচ্ছে, দেশের প্রায় ৭৪ শতাংশ পরিবারের উপার্জন কমে গেছে এবং ১৪ লাখেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন বা ফিরে আসছেন।

ব্র্যাক, ডেটা সেন্স এবং উন্নয়ন সমন্বয়-এর এক যৌথ সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

‘কোভিড-১৯ এবং জাতীয় বাজেট ২০২০-২০২১ : নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কৌশল পুনর্বিবেচনা’ শীর্ষক এই সমীক্ষার ফল সোমবার অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের (ওয়েবেনার) মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাকের  চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে ওয়েবেনারে প্রধান  অতিথি  ছিলেন  বাংলাদেশ  ব্যাংকের সাবেক  গভর্নর ড. আতিউর  রহমান।

ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদের সঞ্চালনায় গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন আইসোশ্যাল-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. অনন্য রায়হান।

প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত  ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস)  সিনিয়র রিসার্চ  ফেলো  ড. নাজনীন  আহমেদ  এবং  ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক  ড. ইমরান মতিন।

সমীক্ষাটিতে ব্র্যাক, বিআইজিডি, পিপিআরসি, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা পরিচালিত গবেষণা-সমীক্ষার পর্যালোচনার পাশাপাশি একটি জরিপও পরিচালনা করা হয়েছে এবং সেসবের ফলাফল সমন্বয় করে মূল প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে। জরিপটি দেশের ২৫ জেলায় দৈবচয়নে নির্বাচিত ৯৬২ জন উত্তরদাতার অংশগ্রহণে মে মাসের ১৫-১৮ তারিখের মধ্যে সম্পাদন করা হয়।

গবেষণার ফলাফল : দেশে অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ চরম দরিদ্র (দৈনিক আয় ১.৯ ডলার)। এদের মধ্যে নতুন করে চরম দরিদ্র হয়ে পড়া পরিবারগুলোও রয়েছে।

উচ্চ অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে থাকা চরম দরিদ্রের সংখ্যা ৪ কোটি ৭৩ লাখ এবং উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন ৩ কোটি ৬৩ লাখ মানুষ।

কোভিড-১৯-এর কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের উপর বহুবিধ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে উঠে এসেছে। যেসব পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তার মধ্যে ৩৪.৮ শতাংশ পরিবারের কমপক্ষে একজন সদস্য চাকরি হারিয়েছেন।

গত মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে গড় পারিবারিক উপার্জন প্রায় ৭৪ শতাংশ কমে গেছে। দিনমজুরসহ অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরতরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

উৎপাদন খাতেও বড় ধাক্কা লেগেছে। তৈরিপোশাক খাতে রপ্তানি এপ্রিল ২০১৯-এর তুলনায় ২০২০ সালের এপ্রিলে ৮৪ শতাংশ কমেছে।

চলতি বছর মার্চের মাঝামাঝি থেকে ৭ই এপ্রিলের মধ্যে ১ হাজার ১১৬টি কারখানা বন্ধ ঘোষিত হয়েছে এবং চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ২২ লাখ শ্রমিক (২.১৯ মিলিয়ন) শ্রমিক।

সমীক্ষায় আরও জানা যায় : নিম্নআয়ের মানুষের এই রোগের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এসব পরিবারের উপার্জনশীল সদস্যের মৃত্যু হলে নারী ও শিশুদের মধ্যে অনাহার এবং অপুষ্টির শিকার হওয়ার উচ্চ আশঙ্কা সৃষ্টি হবে।

দেশব্যাপী সমন্বয়ের অভাবের কারণে দরিদ্র ও অতিদরিদ্রদের কাছে সরকারের দেওয়া খাদ্য এবং নগদ সহায়তা সঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছে না বলে বিভিন্ন প্রতিবেদন ও গবেষণা-সমীক্ষা থেকে প্রতীয়মান হয়।

কোভিড-১৯ নতুন অর্থনৈতিক বিভাজন, সামাজিক বিভাজন এবং ডিজিটাল বিভাজন সৃষ্টি করেছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কেবল ৩৪ শতাংশ পরিবারের স্মার্টফোন রয়েছে এবং ৫৪ শতাংশ পরিবারের টিভি দেখার সুযোগ রয়েছে। অতএব, এর নিচের অংশে বসবাসকারী শিশুরা ডিজিটাল মাধ্যমে পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে।

প্রবাসী বেকার শ্রমিকের সংখ্যা ১৪ লাখ : চৌদ্দ লাখেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক চাকরি হারানোর কারণে ফিরে এসেছেন বা দেশে ফিরে আসছেন। বিদেশে থাকা অভিবাসীরাও এখন ঋণচক্র ও সামাজিক কলঙ্কের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়েছেন।

কোভিড-১৯ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারগুলোকে আরও বেশি অসুবিধার মুখে ঠেলে দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত : ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘মানুষকে আগে বাঁচাতে হবে, তারপর স্বপ্নপূরণ আর সুখে থাকার চিন্তা। তাই এবারের বাজেট হোক বেঁচে থাকার বা টিকে থাকার বাজেট।

বর্তমানে স্বাস্থ্যব্যবস্থা সবচেয়ে হুমকির মুখে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মধ্যবিত্তরাই চিকিৎসাসেবা পাবেন কি না সেই আতঙ্কে আছেন, দরিদ্রদের অবস্থা তো আরও করুণ।’

‘স্বাস্থ্যখাত ঠিক না করলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না, আমাদের অর্থনীতিও আগাবে না,’ যোগ করেন এ অর্থনীতিবিদ।

ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘নিম্ন আয়ের মানুষ হিসেবে বটম অফ দি পিরামিডে শুধু শ্রমিকেরা নয়, অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাও আছেন। প্রণোদনা দেয়ার পরেও শ্রমিকদের ৬০ শতাংশ বেতন দেওয়া হয়েছে। তাদের বাসা ভাড়া ও অন্যান্য খরচ তো কমেনি। তাই এই মুহূর্তে বেঁচে থাকার জন্য যাদের প্রয়োজন বেশি তাদের প্রণোদনা বা ভর্তুকির ব্যবস্থা রাখতে হবে।’

ড. ইমরান মতিন বলেন, ‘জনগণের আতঙ্ক দূর করতে স্বাস্থ্যখাতে অবকাঠামো ও মানবসম্পদ বাড়াতে হবে। উপজেলা ও গ্রামীণ পর্যায়েও সার্বক্ষণিক ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম রাখতে হবে।’

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এখন নতুন তালিকা তৈরির সময়ক্ষেপনের দিকে না গিয়ে আগের তালিকা ধরেই কাজ করা শ্রেয়। ৭৮ লাখ প্রাথমিক শিক্ষার্থীকে যে ১০০ টাকা করে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে, তা এখনই ৫০০ টাকায় উন্নীত করা দরকার।’

‘এতে করে সঠিক জায়গায় সহায়তা পৌঁছানো অনেকটা নিশ্চিত হবে। শুধু বরাদ্দ করলেই হয় না, সবার কথা, সুবিধা-অসুবিধা শুনে দক্ষতাপূর্ণ, কার্যকর ও কৌশলী বাজেট করতে হবে। সবাইকে একসঙ্গে হাঁটতে হবে,’ যোগ করেন তিনি। সূত্র: ইউএনবি

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!