• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় বদলে গেল পেশা!


আখাউড়ায় (ব্রাহ্মণবাড়িয়ার) প্রতিনিধি আগস্ট ৩০, ২০২০, ০৭:৫৭ পিএম
করোনায় বদলে গেল পেশা!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার : আখাউড়া পেরৈ শহরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. সাহাব উদ্দিন (৪৫)। তার সংসারে স্ত্রী, ২ ছেলে ১ মেয়ে নিয়ে ৫ জন রয়েছে। দীর্ঘ প্রায় ৭-৮ বছর ধরে রেলওয়ে স্টেশনে গাজর ও শসা বিক্রি করে আসছেন তিনি। ওইসব বিক্রি করে দৈনিক যে টাকা আয় হতো তাতেই চলতো তার সংসার।

কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ায় তাকে অনেকটাই পথে বসতে হয়েছে। কোনো উপায় না পেয়ে অবশেষে তার ক্ষুদ্র ব্যবসার স্থান ও পণ্যের ধরন পরিবর্তন করে গ্রামে গ্রামে এখন তিনি আমড়া বিক্রি করছেন। আগে যেখানে দিন শেষে ৬-৭শ টাকা আয় হতো বর্তমানে গ্রামে গ্রামে ঘুরে আমড়া বিক্রি করে দৈনিক ৩ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা আয় হয় বলে জানায়। এই টাকার মধ্যেই বাসা ভাড়া ও সংসারের খরচ চালিয়ে দিনানিপাত করছেন।

করোনার প্রভাবে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার খেটে খাওয়া মানুষদের বদলে গেছে তাদের পেশা ও। করোনার পূর্বে যে পেশা ছিল পরে যেন জীবিকার তাগিদে অনেকেই বাদ্য হয়ে তাদের পেশা বদল করছে। অধিকাংশ লোকজন অর্থনৈতিক এই সংকট কাটিয়ে পুরনো পেশা বদল করে নতুন পেশায় টিকে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। এরমধ্যে কেউ সিএনজি অটো রিকসা চালাচ্ছেন , কেউ সবজি, ফল বিক্রিসহ ভ্রাম্যমাণ বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করছেন।

নতুন পেশায় পরিশ্রম বেশী হলেও আয় ভালো হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এক সময় তারা চাকুরি ব্যবসাসহ বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িত ছিল। করোনার প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়ে তারা। বর্তমানে কর্মহীন লোকজন বিভিন্ন পেশায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তারা বলছেন, জীবন বাঁচাতে কাজ একটা না একটা করতেই হবে। এখন যে সময় যাচ্ছে কোন কাজকে ছোট করে দেখার সময় নেই। এ অবস্থা বেশী দিন থাকবে না। তবে বর্তমানে নতুন পেশা ও কাজকর্মে যে আয় হচ্ছে তাতে তারা খুশি বলে জানায়।

পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পণ্য বিক্রেতা, চা বিক্রেতা, ভ্যানে ফল ও সবজি বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায় বেশিরভাগ লোক আগে এই পেশায় তারা ছিলেন না। চাকুরিসহ অন্যান্য কাজ কোথাও না কোথাও তারা করতেন। মাসিক বেতন বা ব্যবসায় যে টাকা আয় হত তা দিয়ে সুন্দর চলতো সংসার। কিন্তু করোনার প্রভাবে বিপাকে পড়তে হয় তাদের।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. নাহিদ মিয়া বলেন, বাবা মা, স্ত্রী, ছেলেসহ পরিবারে ৬ জন সদস্য রয়েছে। নিজের বসত ঘর ছাড়া অন্য কিছু নেই তাদের। লোকাল ট্রেনে চেইন, চুরি, ক্লিপসহ বিভিন্ন প্রকার সামগ্রী বিক্রি করে চলতো তাদের সংসার। কিন্তু বর্তমান এ পরিস্থিতিতে তা বন্ধ থাকায় অনেকটাই বিপাকে পড়তে হয় তার। তাই বাধ্য হয়ে গত প্রায় ৩ মাস ধরে গ্রামে গ্রামে ভ্যান গাড়ী দিয়ে তিনি তৈরী পোশাক বিক্রি করছেন। এতে তার ৩-৪শ টাকা আয় হয় বলে জানায়। তিনি বলেন এই পরিস্থিতিতে নিজের ঘর থাকাতে বেচে গেলাম। তা না হলে ঘর ভাড়া ও অন্যান্য খরচ চালাতে কঠিন হতো।

রেলওয়ে স্টেশনে চা বিক্রেতা মো. ঝান্টু মিয়া বলেন করোনা মহামারী শুরুর পর ট্রেন চলাচল সামীয়ক বন্ধ থাকে। এরপর স্টেশনে আর লোকজনের আসা যাওয়া কমে যায়। বন্ধ হয়ে যায় চা বিক্রি ও। ফলে অনেকটাই বিপাকে পড়তে হয় তার। পরিবারের কথা চিন্তা করে গ্রামে গ্রামে ভ্যান গাড়ি দিয়ে ফল বিক্রি শুরু করছেন তিনি। ফল বিক্রিতে দিন শেষে ৪-৫ শ টাকা আয় হচ্ছে বলে জানায়। তবে এই ব্যবসায় পরিশ্রম বেশী হলে ও ভাল আয় হচ্ছে বলে জানায়।

মো. তাজু মিয়া বলেন, স্ত্রী, দুই ছেলে ১ মেয়ের সংসার তার। সড়ক বাজার একটি হোটেলে প্রায় ৬ বছর ধরে কাজ করছেন। কিন্তু করোনার হোটেলের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকটাই বিপাকে পড়েন তিনি। কাজ হারিয়ে অলস সময় পারকরছিলেন তিনি। কোন উপায় না পেয়ে জমানো টাকায় মৌসুমি ফলের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এতে তার ভালই আয় হচ্ছে বলে জানায়। এখন আর হোটেলে যাচ্ছেন না বলে জানায়। তাছাড়া বাড়তি আয়ের আশায় বাড়িতে হাঁস, মুরগি পালন করছে বলে জানায়।

উপজেলার সীমান্ত এলাকার সাইমন বলেন, ঢাকায় ভাল টাকার বেতনে একটি কারখানায় কাজ করতে তিনি। চাকুরী হওয়ায় স্ত্রী ও ১ মেয়ে নিয়ে তিনি বাসায় থাকতেন। করোনা পরিস্থিতিতে গত প্রায় ৪ মাস আগে বাসা ছেড়ে ও কারখানা থেকে তিনি বাড়িতে চলে আসেন।

বাড়িতে চলা তার খুব কষ্টকর হওয়ায় কোন উপায় না পেয়ে বাজারে বাজারে মাস্ক, স্প্রে মেশিন ও বোতল, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করছেন। দৈনিক তার ৩ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা আয় হয় বলে জানায়। এমন পরিস্থিতির শিকার কখনও পড়েনি। তবে পরিশ্রম করে জীবিকা অর্জনে অন্য রকম আনন্দ রয়েছে। তিনি বলেন ঢাকায় আর ফিরে যাব না এলাকায় কিছু করব।

সুমন বলেন একটি কোম্পানিতে কাজ করতেন তিনি। করোনার প্রভাবে কাজ না থাকায় বাড়িতে চলে আসেন। এখন তিনি ভাড়ায় সিএনজি অটো রিকসা চালান বলে জানায়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!