• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় হাত গুটিয়ে বসে আছেন চলচ্চিত্র তারকারা!


বিনোদন ডেস্ক এপ্রিল ২, ২০২০, ০২:৩৪ পিএম
করোনায় হাত গুটিয়ে বসে আছেন চলচ্চিত্র তারকারা!

ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণে স্থবির হয়ে পড়েছে পুরো বিশ্ব। দুর্বিষহ অবস্থায় পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। এর থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশও। বৈশ্বিক এ দুর্যোগে বিভিন্ন দেশে সরকারের পাশাপাশি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল শিল্পীরা।

হলিউড ও বলিউডের তারকারা এ সংকট মোকাবেলায় যে যার মতো করে আর্থিক সহায়তা কিংবা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে তার উল্টো চিত্র!

চলচ্চিত্রের একটি সংগঠন ও হাতেগোনা কয়েকজন শিল্পীর ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু সহায়তার খবর ছাড়া তেমন কোনো বড় ধরনের সহায়তার খবর পাওয়া যায়নি!

হলিউড, বলিউড ও টলিউডে এরই মধ্যে এ সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে এগিয়ে এসেছেন অনেক তারকা। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা তহবিলে করছেন অর্থ প্রদান। এ তালিকায় রয়েছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, সংগীতশিল্পী রিয়ানাসহ বলিউডের বিরাট-সালমানরাও।

করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি (২৬ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল) ঘোষণা করেছে সরকার। সরকারি চাকরিজীবী থেকে শুরু করে সাধারণ আয়ের মানুষ সবাই ঘরবন্দি হয়ে আছে। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। এ কারণে সবচেয়ে বিপদে পড়েছে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। আর বাংলাদেশের এ সংকটকালীন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে বিনোদন অঙ্গনের বিভিন্ন সংগঠন ও তারকাদের ভূমিকা নিয়ে।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে সংগঠন রয়েছে ১৮টি। সংগঠনগুলোকে বিভিন্ন সময় শুধু তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা ইস্যুতে মাঠে নামতে দেখা গেছে। এসব সংগঠনের সংশ্লিষ্টরা টকিজের সঙ্গে আলাপকালে দাবি করেছেন, করোনার প্রভাব শুরুর পর থেকেই তারা নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা এরই মধ্যে সাধারণ মানুষের মাঝে ৯০০ মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও গ্লাভস বিতরণ করেছেন। এ বিষয়ে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, ‘আমাদের শিল্পী সমিতির সদস্যদের মধ্যে দু-তিনশ কলাকুশলী আর্থিকভাবে অসচ্ছল আছেন। আমরা সেসব শিল্পীর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক বিতরণ করেছি। আমরা তাদের নগদ অর্থ হিসেবে ২-৩ হাজার টাকা প্রদানের পরিকল্পনা করছি।’

কয়েক দিন আগে শাকিব খানের নবাব এলএলবি ছবির শুটিং শুরুর কথা থাকলেও তা হয়নি। এ ছবির বাজেটের পুরোটা করোনাভাইরাস থেকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক পিপিই বাবদ, স্বল্প আয়ের চলচ্চিত্র প্রডাকশন বয়, সহকারী প্রডাকশন বয়সহ অসহায় মানুষের জন্য খরচ করা হবে। এমনটাই জানিয়েছেন ছবিটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সেলিব্রিটি প্রডাকশন।

বাংলাদেশে চলচ্চিত্র পরিচালকদের বেশ পুরনো সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। এ বিষয়ে তারা কী উদ্যোগ নিয়েছে জানতে চাইলে সংগঠনটির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘পরিচালক সমিতির পক্ষ থেকে সচ্ছল সদস্যদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছি। দু-একদিনের মধ্যেই অর্থ সংগ্রহ শেষ হবে। ইন্ডাস্ট্রির দিনমজুর এবং একটু বড় পদে থাকা মানুষ, যারা আর্থিকভাবে অতটা সচ্ছল নন, কিন্তু সহায়তা চাওয়ার ক্ষেত্রে কুণ্ঠাবোধ করেন, তাদের একটি তালিকা তৈরি করছি। তাদের মাঝে এই অর্থ বিতরণ করা হবে।’

খাদ্যসামগ্রী নয়, বরং নগদ অর্থ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা নগদ অর্থ প্রদান করব। কারণ এরই মধ্যে অনেকেই স্বল্প আয়ের কলাকুশলীদের খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করেছেন। এসবের পাশাপাশি মানুষের অর্থের প্রয়োজন হতে পারে। বিষয়টি চিন্তা করেই মূলত এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ আগামী সপ্তাহ থেকে অর্থ বিতরণের কাজ শুরু করবেন বলেও জানান মুশফিকুর রহমান গুলজার।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনকৃত এফবিসিসিআইয়ের অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংগঠনটির পক্ষ থেকে আলাদা করে বড় কোনো উদ্যোগের খবর পাওয়া যায়নি।

চলচ্চিত্রের মতো বড় একটি ইন্ডাস্ট্রির দেশের এ সংকটে বৃহৎ পরিসরে সাধারণ মানুষের পাশে না দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে সমালোচনা করছে দেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। কেউ কেউ বলছেন, সুযোগ পেলেই তাদের কথার ফুলঝুড়ি ও লোক দেখানো কথার অভাব থাকে না। কিন্তু দেশের ক্রান্তিকালে তাদের আসলে কোনো খবর নেই। স্বার্থপরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে তারা।

তবে ভিন্ন চিত্রও দেখা গেছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের এ সময়ে চার অভিনেত্রী সাংগঠনিকভাবে ও ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু মানুষকে সহযোগিতা করেছেন। তারা হলেন চিত্রনায়িকা পপি, অপু বিশ্বাস, তানহা তাসনিয়া, মিষ্টি জান্নাত ও মারজান জেনিফা।

এদিকে ৩১ তারিখ অভিনেত্রী কুসুম শিকদার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের সুরক্ষার জন্য পিপিই সরবরাহ করেছেন।

এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন হালের দুই অভিনেতা বাপ্পী চৌধুরী ও সায়মন সাদিক। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নিম্ন আয়ের মানুষদের খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করছেন। এর আগে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট স্বল্প আয়ের মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন অভিনেতা ও প্রযোজক অনন্ত জলিল।

কথা হয় নাটকের পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডসের সাধারণ সম্পাদক এসএ হক অলিকের। তিনি বলেন, ‘দেশে করোনার সংকট শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুটিং বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রতিটি সংগঠন থেকে যার যার সামর্থ্য অনুয়ায়ী অর্থ সংগ্রহ করছি। সেগুলো একত্র করে স্বল্প আয়ের কলাকুশলীদের মাঝে বিতরণ করব।’

প্রায় একই রকম কথা বললেন নাটকের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম। তিনি বলেন, ‘সরকারি নির্দেশ মান্য করে আমরা শুটিং বন্ধ রেখেছি। শিল্পীদের বলেছি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ডব্লিউএইচওর নির্দেশ মান্য করে সতর্ক থাকতে। পাশাপাশি শিল্পীদের মধ্যে অসচ্ছল ও আর্থিক অনটনের মধ্যে যারা আছেন, তাদের জন্য একটি তহবিল গঠনের চেষ্টা করছি। চেষ্টা করছি যারা সমিতির তালিকাভুক্ত, তাদের জন্য কিছু করার।’

তহবিল কীভাবে গঠন করছেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিল্পীদের অর্থ প্রদানের জন্য সচ্ছল ব্যক্তিদের আহ্বান জানিয়েছি। সেই জায়গা থেকে কিছু অর্থ আমরা সংগ্রহ করেছি। একই সঙ্গে এটাও আহ্বান জানিয়েছি, যাদের আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন, তারা যেন আমাদের জানান। শিগগিরই সহায়তার কাজ শুরু করব।’

বাংলাদেশের গানের অডিও প্রযোজকদের সংগঠন ‘মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইবি)’-এর সাধারণ সম্পাদক ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিএমভির স্বত্বাধিকারী শেখ সাহেদ আলী পাপ্পু বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে গ্রুপে আলাপ করেছি। দুস্থদের পাশাপাশি অসচ্ছল শিল্পীদের সাহায্যের জন্য একটা ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ৪-৫ তারিখের পর আমরা তাদের সহায়তার জন্য কাজ করব। যেসব শিল্পীকে সাহায্য করব, তাদের নাম প্রকাশ না করার সিদ্ধান্তও নিয়েছি। তাদের আত্মসম্মানবোধে বাধে এমন কিছু করব না। এমনকি ফেসবুকেও কোনো ধরনের পোস্ট দেব না।’

ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় আসরের চ্যাম্পিয়ন হওয়া সংগীতশিল্পী মৌসুমী আক্তার সালমা ব্যক্তি উদ্যোগে নিম্ন আয়ের বেশকিছু শ্রমজীবী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অন্যদিকে উন্নয়ন সংস্থা

ব্র্যাকের করোনাভাইরাস প্রতিরোধের একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন শিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজ। এ তালিকায় আরো আছেন সংগীতশিল্পী সিঁথি সাহা ও এফএ সুমন।

টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির মনে করেন, তাদের ইন্ডাস্ট্রি অতটা আর্থিকভাবে সচ্ছল নয়। এ বিষয়ে বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে বাজেটস্বল্পতাসহ নানা ধরনের সমস্যার মুখে আমাদের থাকতে হয়। এর মাঝে করোনাভাইরাস একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি আগে নিজেদের ইন্ডাস্টির অসহায় মানুষদের সাহায্য করার। এরই মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে অনেকেই নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সাধারণ মানুষকে সাহায্য করছেন। আমাদের প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে নিজেদের ঘরের মানুষদের সাহায্য করা। তারপর হয়তো অন্য কিছু নিয়ে চিন্তাভাবনা করব।’বণিক বার্তা

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!