• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কর্ণফুলীর ‘ইছানগর খাল’ দখলের হিড়িক, ফুঁসে ওঠছে স্থানীয়রা


জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো ডিসেম্বর ৬, ২০১৮, ০২:৩৩ পিএম
কর্ণফুলীর ‘ইছানগর খাল’ দখলের হিড়িক, ফুঁসে ওঠছে স্থানীয়রা

চট্টগ্রাম: শহরের দক্ষিণপাড় কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের দীর্ঘদিন নৌ-চলাচলের ‘ইছানগর খাল’টি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। 

আজকের তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইছানগর খালটি দখল করে খালের মাঝখানে টিন দিয়ে ঘিরে রেখে মাটি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করছে কর্ণফুলী (ডক) শীপইয়ার্ড লিমিটেড নামে একটি শিল্পায়িত প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে ভরাট করা হয়েছে খালের অধিকাংশ জায়গা। 

সরকারি দপ্তরে নানা অভিযোগ ও প্রেস ক্লাবে কয়েকটি পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠন এবিষয়ে প্রতিকার চেয়ে মানববন্ধন করলেও আমলে নিচ্ছেনা প্রভাবশালী দখলদারেরা। ফলে স্থাপনার নির্মাণকাজ এখনো চলছে। অন্যদিকে প্রভাবশালী কতৃক ইছানগর খালটি ভরাট করার কারণে মাথায় বাজ পড়েছে খালে চলাচলকারী শতাধিক সাম্পান মাঝি ও স্থানীয় জনসাধারণের।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে কর্ণফুলী উপজেলা অবস্থিত। কর্ণফুলী নদী থেকে একাধিক শাখা প্রশাখা খাল প্রবাহিত হয়েছে এ উপজেলায়। খালগুলো দিয়ে পাকিস্তান আমল হতে উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের চলাচল। যার ধারাবাহিকতায় ইছানগরটি খালটি দিয়ে চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ২৫হাজার মানুষের চলাচল অথচ তা জবর দখলের ফাঁদে পড়েছে।

এ নিয়ে ইছানগর এলাকার সাম্পান মাঝি মোঃ আলা উদ্দীন, আব্দুল মালেক, ইলিয়াছ, শফি আলম, মোঃ কবির ও মোহাম্মদ আবছার বলেন, ‘আমরা এ খাল দিয়ে ৩০/৪০বছর ধরে নৌ-চলাচল করিয়ে জীবিকা নির্বাহী করি কিন্তু গত কয়েকদিন আগে সাম্পান নিয়ে এসে দেখি টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে এবং ভেতরে বিল্ডিং তৈরী করছে।’

সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁশের খুটি ও টিনের বাঁউন্ডারী দিয়ে খালটি দখল করে রেখেছে প্রভাবশালীরা। অতীতে ঝড় তুফানের সময় এই খাল দিয়ে সাম্পান মাঝিরা আত্মরক্ষার নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করছে যুগ যুগ। এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নানা প্রলংকারী মহামারী সাইক্লোন ঝড় এবং তুফানের সময় এই খালে সাম্পান মাঝিরা তাদের জীবিকা অর্জনের একমাত্র  সম্পদ ‘সাম্পানও ডিঙ্গি নৌকা নোঙর করে রাখে।’

জানা যায়, কর্ণফুলী দখল ও দূষণমুক্ত করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। জেলা প্রশাসন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে রাতের আধারে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী ‘ইছানগর খাল’টি দখল করা হচ্ছে এমন অভিযোগ আসছে।

কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ ফেডারেশন সভাপতি এস এম পেয়ার আলী, মানব সম্পদ কল্যান সংস্থার সম্পাদক ফরিদ হোসেন আবু, ইছানগর সদরঘাট সাম্পান মালিক সমিতির উপদেষ্টা জিন্নাত আলী লেদু বলেন, ‘খাল দখল করার কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। ইছানগর গ্রামের মানুষেরা চলাচল করতে পারছেনা। নৌযান চলাচল বন্ধ হওয়ার ফলে অনেক গরিব মানুষের রোজি রোজগারে বাধা পড়েছে। সরকারের কাছে যার প্রতিকার চান তাঁরা।’

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের এক নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, ‘কেউ যদি আইন ভেঙে খাল ভরাট করে থাকে, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকার মানুষকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করার জন্য শাখা প্রশাখার খালগুলো দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে জানান তিনি।’

দখলকৃত খাল এলাকা পরিদর্শন করে চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ছাবের আহমদ বলেন, ‘এই খালটি দখল হয়ে গেলে ইছানগর গ্রামের ১৫-২০ হাজার মানুষ স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতার শিকার হবে। ডুবে যাবে মসজিদ, মাদ্রাসা ও কবরস্থান। তিনি খালটি উদ্ধার করে যথাযথ সংস্কারের দাবী জানান।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী (ডক) শীপইয়ার্ড লিমিটেড এর মুখপাত্র মোহাম্মদ সোলায়মান সর্বৈব অস্বীকার করে বলেন, ‘ আমরা কোন খালের উপর টিনের বেড়াঁ দিইনি। যারা আপনাদের বুঝিয়েছে ওটা সিক্রেট করে বুঝানো হয়েছে। এটা নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আজ বসবে। যদি খালের উপর পড়ে থাকে টিনের বেড়াঁ খুলে দেবো।’

এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের কোন খবর পাইনি। তবে প্রভাবশালী বলতে কিছুই নেই আমার সিলেবাসে। অন্যায় যদি কেউ করে তাকে প্রভাবশালী না বলাটা শ্রেয়। খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ জানান, ‘ইছানগরে খাল দখলের বিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। পেলে তদন্তপুর্বক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

উল্লেখ্য, এ খালটি চট্টগ্রাম বন্দর থানাধীন। ইছানগর মৌজার আরএস ৭০,৭১ দাগ বিএস দাগ ১৫০৯, ১৫১২, ১৫১৩, ১৫১৪ ,১৫১৬। যা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে চট্টগ্রাম ডিপুটি কমিশনারের অধীনে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!