• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মী সংকটে বিএনপি


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯, ০১:৪৭ পিএম
কর্মী সংকটে বিএনপি

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বিপর্যয়ের পর দলটির কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের তেমন উপস্থিতি মিলছে না। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কোনো জায়গায় শ্রোতার চেয়ে বক্তার সংখ্যা বেশি। ক্ষেত্রবিশেষ ডায়াসের চেয়ারও ফাঁকা থাকে। এ নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে, দায়িত্বশীল নেতারা পড়ছেন তোপের মুখে। বিএনপির সাম্প্রতিক বিভিন্ন কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে।

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আলোচনা সভার আয়োজন করে দলটি। সেখানে হলরুমের দর্শকসারির অনেক চেয়ারই ছিল ফাঁকা। শুধু তাই নয়, ডায়াসেরও কয়েকটি চেয়ার ফাঁকা ছিল। ওই সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যখন বক্তব্য দেন তখন কর্মীরা তাদের বক্তব্যে বাধা দিয়ে জানতে চান, কর্মসূচিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নেই কেন? বিএনপির কমিটি ভেঙে দেয়ার কথাও বলেন দর্শকসারিতে বসা কর্মীরা।

গত ১৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে জিয়াউর রহমানের জš§বার্ষিকীর আলোচনা সভায়ও ছিল না নেতাকর্মীদের উপস্থিতি। ২১ ফেব্রæয়ারিতে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর কর্মসূচিতেও আগের মতো দলটির নেতাদের উপস্থিতি ছিল না। এর বাইরে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কর্মসূচিতেও উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক।

গত ১৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের মানববন্ধনে সংগঠনটির অনেকেই আসেননি। চলতি মাসে জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের ৩৯তম কর্মসূচিতে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচিতেও হাতেগোনা কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘খারাপ সময় যাচ্ছে। এখনও মামলা ও গ্রেফতার চলছে। কর্মসূচিতে রয়েছে পুলিশের হয়রানি। এর মধ্য দিয়ে যারা আসতেছে, এটাই তো ঠিক আছে। মানুষের বাস্তব অবস্থা তো বিবেচনা করতে হবে। এছাড়া কর্মীরা আরও জোরালো আন্দোলন চায়। আমরা তাদের মতকে শ্রদ্ধা জানাই। আমরা সময়ের অপেক্ষা করছি।’

দলের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দলটির মধ্যমসারির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, ‘নির্বাচনের পর নেতাদের মধ্যে যেমন পারস্পরিক আস্থার ঘাটতি বেড়েছে, তেমনি কর্মীরাও এখন নেতাদের বিশ্বাস করতে পারছেন না। কারণ খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না- এমন বক্তব্যে অনেকে গলা ফাটালেও শেষ পর্যন্ত তাকে ছাড়াই দল নির্বাচনে যায়। ফলে নেতারা গ্রহণযোগ্যতা হারান। নির্বাচনের পর দলের পক্ষ থেকে নির্বাহী কমিটির সভা ডাকা হয়নি, এমনকি যৌক্তিক কর্মসূচিও দেয়া হয়নি। যার কারণে কর্মসূচিতে কর্মীদের উপস্থিতি কম।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘পকেট কমিটির কারণে দলের কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নেই। দল থেকে যে কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে তাতে কর্মীদের চিন্তার প্রতিফলন হচ্ছে না। কর্মসূচিতে সমন্বয়েরও ভয়াবহ ঘাটতি রয়েছে। গণমাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণা করা হচ্ছে কিন্তু নেতাকর্মীদের দলীয়ভাবে জানানো হচ্ছে না। এছাড়া নেতারা কর্মীদের কর্মী ভাবেন না। তারা কর্মীদের কর্মচারী মনে করেন। কর্মীদের কর্মচারী ভাবা যেদিন বন্ধ হবে, সেদিন বিএনপির সুদিন ফিরে আসবে।’

দলটির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, ‘এত বড় একটা ধকল গেছে, মামলা-হামলা-গ্রেফতার এখনও চলছে। হাজিরা দিতে গেলেও অ্যারেস্ট হচ্ছে। নেতাকর্মীদের মনে গ্রেফতার আতঙ্ক রয়েই গেছে। তারা এখনও ফ্রি হতে পারে নাই। কিছুদিনের মধ্যে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু হবে। তখন নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়বে। সংগঠনকে ঢেলে সাজানো হবে আবার।’

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক বিপর্যয় হয়েছে। আমরা আশা করছি, নতুন সাংগঠনিক তৎপরতার মাধ্যমে তা আমরা কাটিয়ে উঠব।’

মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান বলেন, ‘নেতাকর্মীরা কেউ বাড়িতে থাকতে পারেন না। যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীরা বের হচ্ছেন- এটাই তো অস্বাভাবিক বিষয়।’

বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ‘সরকারের মামলা-হামলা, জুলুম ও নির্যাতনের কারণে কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নেই।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!