• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মীদের পেছনেই বড় ব্যয় প্রার্থীদের!


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ২৫, ২০১৮, ১২:১২ পিএম
কর্মীদের পেছনেই বড় ব্যয় প্রার্থীদের!

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারপ্রতি গড় ব্যয় ঠিক করে দেওয়া হয়েছে ১০ টাকা করে। আর একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা খরচ করতে পারবেন। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনেকেই সেই সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। আর ভোটারের চেয়ে প্রার্থীরা কর্মীদের পেছনেই বেশি খরচ করছেন।

ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বেশ কয়েকটি আসনে খরচের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নির্বাচন কমিশন যে সীমা বেঁধে দিয়েছে তা বড় দল-জোটগুলোর কোনো প্রার্থীই মানছেন না। তবে এক্ষেত্রে এগিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই। কারণ তারা মাঠে তুলনামূলকভাবে বেশি সক্রিয়।

অন্যদিকে বিএনপির অনেক প্রার্থীই আটক-হামলা-মামলার ভয়ে মাঠে পুরোপুরি সক্রিয় হতে পারছেন না। ফলে তাদের ব্যয়ও কম হচ্ছে। নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার ও লেনদেন ঠেকাতে একটি সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ।

সংস্থাটি তফশিলি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলছে, লক্ষ্য করা যাচ্ছে, নির্বাচনের আগে ব্যাংকগুলোয় লেনদেন বেড়ে গেছে। বেড়ে গেছে রেমিট্যান্সও। মোবাইল ব্যাংকিংয়েও লেনদেন বেড়েছে বেশ। এমন পরিস্থিতিতে অর্থ ছাড়ের আগে বিধি মোতাবেক যাচাই-বাছাই করার নির্দেশ দেওয়া হলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম গতকাল দুপুরে তার দফতরে জানান, নির্বাচন ঘিরে ব্যাংকগুলোয় লেনদেন বেড়ে গেছে। আমরা ধারণা করছি, বিভিন্ন কৌশলে এটি করা হচ্ছে। তাই একটি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।  

এদিকে, প্রবাসীরা বিদেশ থেকে কোনো কোনো প্রার্থীর খরচ জোগাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে বেড়ে গেছে ডলারের সরবরাহ। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার টানাটানি কিছুটা কমে গেছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সম্প্রতি নির্বাচনী ব্যয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে সংস্থাটি বলেছে, নির্বাচন পরিচালনা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেক ভালো প্রার্থী ভোটে আসতে পারছেন না।

ঢাকা-১২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে মাঠে রয়েছেন আসাদুজ্জামান খান কামাল। বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী তিনি। তফশিল ঘোষণার আগে থেকেই কর্মীদের চাঙ্গা করতে শুরু করেন তিনি। প্রতীক বরাদ্দের পর পুরো নির্বাচনী এলাকায় প্রায় শতাধিক নির্বাচনী অফিসও খুলেছেন। সেসব অফিসে সারা দিন কর্মীরা অবস্থান করে প্রচারণার কাজ সমন্বয় করছেন।

নির্বাচনী অফিসের কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের দুপুরের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। তা ছাড়া প্রতিদিন তাদের ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত নগদ দেওয়া হচ্ছে। তবে বিপরীতে এ আসনটিতে কোনো প্রচারণাই নেই বিএনপি প্রার্থী সাইফুল ইসলাম নীরবের। মাঠে নেই তার কোনো কর্মী। ফলে আপাতত সরাসরি কর্মী ব্যবস্থায় বড় কোনো ব্যয় হচ্ছে না এই প্রার্থীর।

জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান কামাল টেলিফোনে গত শনিবার বলেন, আমি কর্মীদের প্রতিদিন নগদ টাকা দিচ্ছি এই অভিযোগ ঠিক নয়। আমার কর্মীরা আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনার জন্য এমনিতেই নিবেদিত। তাদের টাকা দিয়ে কিনতে হয় না। তবে দিন-রাত তারা পরিশ্রম করছেন বিএনপি-জামায়াত জোটকে হারাতে। ফলে খাওয়ার সময় পর্যন্ত তারা পাচ্ছেন না। এ জন্য সামান্য খাবারের ব্যবস্থা করাটা আমার নৈতিক দায়িত্ব।

টাঙ্গাইল-৩ ঘাটাইল আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আতাউর রহমান খান। তিনি বিতর্কিত সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার বাবা। এই প্রার্থীও প্রতিদিনের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনায় এলাকাভিত্তিক ব্যয় বরাদ্দ করে দিয়েছেন। যার বড় অংশই যাচ্ছে কর্মীদের পেছনে। একই সঙ্গে তার প্রতিদ্বন্দ্বী লুৎফর রহমান খান আজাদও একই কৌশলে কর্মী ব্যবস্থাপনায় ব্যয় করছেন নির্বাচনী বাজেটের বড় অংশ।

লুৎফর রহমান খান আজাদ বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে আমরা মাঠে দাঁড়াতেই পারছি না। আমার কর্মীদের পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। রাতে তারা বাড়িতে ঘুমাতে পারছে না।

খোঁজখবর নিয়ে দেখা গেছে, রাজনীতিতে সরাসরি জড়িতরা ছাড়া অন্য কেউ কর্মী হিসেবে মাঠে নামছেন না। বিভিন্ন কারণে অনীহা ও ব্যস্ততার কারণে তাদের সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে ঢাকাসহ শহরগুলোয় এই সমস্যা প্রকট। ফলে কর্মী পেতে প্রতিদিন বেশ খরচ করতে হচ্ছে প্রার্থীদের। বেকারসহ অনেকেই এই সুযোগে সমর্থন করেন এমন দলের হয়ে মাঠে নেমেছেন। দলের সঙ্গে রয়েছেন এমন কর্মীদের পেছনেও যথেষ্ট খরচ করতে হচ্ছে প্রার্থীদের।

এদিকে, নির্বাচনী খরচ মেটাতে প্রার্থী ও প্রার্থীদের স্বজনসহ বিভিন্ন জনের ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন বেড়ে গেছে। ফলে ব্যাংকগুলোয় নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে গেছে। অর্থের টানাটানিও বেড়ে গেছে। দেশে এবারের নির্বাচনে কত খরচ হবে তার সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব না থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে, ১২-১৫ হাজার কোটি টাকা দাঁড়াতে পারে ব্যয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!