ঢাকা : কলকাতায় স্ত্রীর গয়না কিনতে এগিয়ে সঙ্গী-সহ অপহৃত হয়েছেন এক বাংলাদেশ ব্যবসায়ী। এরপর ৬ লাখ টাকা মুক্তিপনের বিনিময়ে ছাড়া পেয়েছেন তিনি। ওই ব্যবসায়ীর নাম বসির মোল্লা ও তাঁর সঙ্গী হলেন ইলিয়াস নামে এক যুবক।
কলকাতা থেকে উত্তর ২৪ পরগনায় নিয়ে গিয়ে ওই ব্যবসায়ী ও তাঁর এক সঙ্গীকে অপহরণ করা হয়। চোখ বেঁধে একটি অজানা জায়গায় বন্দি করে রাখা হয় তাঁকে। তারপর মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে তাঁর কাছ থেকে চাওয়া হয় ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ। যদিও শেষ পর্যন্ত রফা হয় ৬ লাখে।
বাংলাদেশ থেকে ওই ব্যবসায়ীর পরিজনরা মুক্তিপণের টাকা পাঠানোর পর ব্যবসায়ী ও তাঁর সঙ্গী ছাড়া পায়। তবে তার আগে প্রচণ্ড মারধর করে স্ত্রীর গয়না কেনার টাকা ও ডলার লুট করা হয় বসির মোল্লার কাছ থেকে।
কোনওমতে কলকাতায় ফিরে আসার পর ব্যবসায়ী এন্টালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু হয়েছে তদন্ত। ইতিমধ্যে সেলিম নামে এক অপহরণকারীকে তিনি শনাক্তও করেছেন। ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ, তাঁর কাছে টাকা আছে জেনেই সেলিমরা তাঁকে অপহরণের ছক কষে। যদিও অভিযুক্তরা অভিযোগকারী ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায় করতে তাঁকে অপহরণ করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের ফরিদপুরের সদরপুর থানা এলাকার বাসিন্দা বসির মোল্লা কিছুদিন আগে স্ত্রীর জন্য গয়না কিনতে কলকাতায় আসেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ইলিয়াস নামে এক যুবক। শিয়ালদহ এলাকায় তাঁর সঙ্গে দেখা হয় সেলিম নামে পূর্ব পরিচিত এক বাংলাদেশি যুবকের। বসির, সেলিম ও ইলিয়াসের বাংলাদেশে কাপড়ের ব্যবসা রয়েছে। সেই সূত্র ধরে তাঁরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখেন। একসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েছে। তবে এখন সেলিম দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের কাছে থাকে। সেলিম ও তার সঙ্গীদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর বসিররা শিয়ালদহের একটি শপিং মলে খাওয়া দাওয়া করেন। সেখানেই গল্প করার সময় বসির সেলিমকে জানান, তিনি গয়না কেনার জন্য শহরে এসেছেন। এরপরই তাঁকে অপহরণের ছক কষা হয়।
সেলিম বসিরকে বলে, সে উত্তর ২৪ পরগনার গুমায় একটি কাজে যাচ্ছে। তাঁকে ও ইলিয়াসকে সঙ্গী হতে বলে। হাতে বিশেষ কাজ না থাকায় ট্রেনে করে তাঁরা রওনা দেন।
পরে হাবড়া স্টেশনের বাইরে নিয়ে গিয়ে একটি গাড়িতে তুলেই বসির ও ইলিয়াসের চোখ বেঁধে দেওয়া হয়। একটি জায়গায় নিয়ে গিয়ে ঘরের ভিতর আটকে রাখা হয়। মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশে বাড়িতে ফোন করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাইতে। না দিলে বেআইনি অস্ত্র কারবারে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। এতে তাঁরা রাজি না হলে দু’জনকেই লাঠি দিয়ে প্রচণ্ড মারধর করে অপহরণকারীরা। বাধ্য হয়ে বাড়িতে তাঁর বাবাকে ফোন করেন বসির। অপহরণকারীদের সঙ্গে তাঁর বাবা মুক্তিপণের টাকা নিয়ে দর কষাকষি করেন। শেষ পর্যন্ত ৬ লাখ টাকায় রফা হয়।
এরপর বাংলাদেশ থেকে ওই টাকা পাঠান বসিরের বাবা। যদিও টাকা হাতে পাওয়ার পরও বসিরের ঘড়ি, মোবাইল, সোনার আংটি এবং মানিব্যাগে থাকা ৪৫ হাজার টাকা ও সাড়ে সাত হাজার ডলার লুট করে দুষ্কৃতীরা। এরপর একজন দালালের হাতে দু’জনকে তুলে দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতে বলে।
দালাল তাঁদের স্টেশনে নিয়ে আসার পর বসির বলেন, এভাবে তাঁদের নিয়ে গেলে তাঁরা বিএসএফকে পুরো বিষয়টি ফাঁস করে দেবেন। ভয় পেয়ে দালাল সরে যায়। আর শিয়ালদহ স্টেশনে নামার পরই এন্টালি থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন বসির। বর্তমানে সেলিম ও তার সঙ্গীদের সন্ধান পেতে হাবড়া, গুমা ও ক্যানিং-সহ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সোনালীনিউজ/এএস
আপনার মতামত লিখুন :