• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘কাকা’র সঙ্গে লড়াই


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৬, ২০১৮, ০৭:৩২ পিএম
‘কাকা’র সঙ্গে লড়াই

ঢাকা : বাংলাদেশের সংবিধানের মুসাবিদাকারী, একজন সেক্যুলার আইকন এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দশক-দীর্ঘ শাসন অবসানের লড়াইয়ে বিরোধী শিবিরের নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।

চলতি মাসের শেষ দিকে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন নতুন জোটের বিরুদ্ধে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য লড়াই করবে শেখ হাসিনার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অক্সফোর্ড শিক্ষিত আন্তর্জাতিক আইনবিদ ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামালকে ‘কাকা’ বলে ডাকতেন হাসিনা।

গত অক্টোবরে ৮২ বছর বয়স্ক আইনজীবী অ্যাক্টিভিস্ট প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও অন্য দুটি দলকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেন। বিএনপি আশা করছে, কয়েকটি বিপর্যয়ের পর এই জোট তার সমর্থন বাড়াতে পারবে, এগিয়ে যেতে পারবে। এসব বিপর্যয়ের মধ্যে ছিল দলটির নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতির অভিযোগে এবং অক্টোবরে তার ছেলে ও প্রবাসী ভারপ্রাপ্ত নেতাকে কারাদণ্ড দেয়া।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, তার দল ‘কৌশলগত কারণে’ ড. কামালের সাথে যোগ দিয়েছে। ‘আমাদের (জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের) লক্ষ্য একই। আর তা হলো স্বৈরতন্ত্র থেকে দেশকে মুক্ত করা।’

অশীতিপর ড. কামাল ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে শেখ হাসিনার বাবার সাবেক সহকর্মী। তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএনপির সাথে তার জোট গড়ার সিদ্ধান্ত ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

স্বাধীনতার নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে শেখ হাসিনা হলেন বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকা নেতা।

ঘাতকদের সাথে হাত মেলানো : ড. কামাল বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, গত ৫ বছরে যা ঘটেছে, তা নজিরবিহীন।

হাসিনা ও বিএনপি প্রধান খালেদার মধ্যে দীর্ঘ ও তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। তারা পালাক্রমে গত তিন দশক ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন। বিএনপির পক্ষ নিয়ে ড. কামাল টার্গেট করেছেন শেখ হাসিনাকে। বিএনপি স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধী জামায়াতে ইসলামীর সাথে জোট গড়েছে। যুদ্ধাপরাধের জন্য এই দলটির বেশ কয়েকজন সদস্যের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে।

নতুন জোট ঘোষণার কয়েক দিন পর শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন, কামাল ‘ঘাতকদের সাথে হাত মিলিয়েছেন।’ জামায়াত নির্বাচনে নিষিদ্ধ হলেও বিশ্লেষকেরা বলছেন, দলটির এ্যাক্টিভিস্টরা বিএনপি প্রার্থীদের সমর্থন করবে। আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টকে ‘যুদ্ধাপরাধীদের জোট’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেন, দেশ ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারকে ভুলে যায়নি। ড. কামালও স্বীকার করেন, অতীতে বিএনপি কিছু ভুল করেছে। তিনি বলেন, বিএনপি এমন অনেক কিছু করেছে, যা আমি কখনো মেনে নেইনি। তারা রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার প্রবেশ ঘটিয়েছে। তবে কামাল বলেন, এই জোট সেক্যুলার, এখানে জামায়াতের সাথে কিছুই করার নেই।

জোটে পরস্পরবিরোধিতা : বিশ্লেষকেরা নানা আদর্শগত প্রেক্ষাপট থেকে আসা দল নিয়ে গড়া জোটটির ভবিষ্যত নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। নির্বাচনে জয়ী হলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন সে ব্যাপারেও পরিষ্কার করে কিছু বলা হয়নি।

ঐক্যফ্রন্ট জয়ী হলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, এই প্রশ্নের জবাবে মওদুদ আহমেদ বলেন, এটি একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত। এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেন, ড. কামাল ইতোমধ্যেই ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইস্তেহার নিয়ে কথা বলেছেন। আমি যা বলতে পারি তা হলো, আমরা আর ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণে বিশ্বাস করি না। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচিত হলে কোনো ব্যক্তি টানা দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী যাতে হতে না পারেন, তা নিশ্চিত করব।

আওয়ামী লীগ বলছে, ক্ষমতায় ফিরতে ড. কামালের সুনাম ব্যবহার করার চেষ্টা করছে বিএনপি। কিন্তু তারা ভয়াবহভাবে ব্যর্থ হবে।

ড. কামাল লাঠিতে ভর করে চলেন, বলেছেন যে তার বয়স খুব বেশি হয়ে যাওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে চান না। তবে জোটের অনেকে ব্যক্তিগতভাবে তাকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সাথে তাকে তুলনা করেন। উল্লেখ্য, ৯২ বছর বয়সে ক্ষমতায় ফিরেছেন মাহাথির। এ ব্যাপারে কামাল বলেন, হয়তো তার স্বাস্থ্য আমার চেয়ে ভালো।

অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিরোধী অনুভূতি প্রবল থাকবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।

বিএনপির ভেতরের অনেকে বলছেন, কামালের আন্তর্জাতিক মর্যাদা ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাবমূর্তির কারণেই তাকে জোটের সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের রাজনীতির নোংরা দিকের কারণে কামালের প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্যগুলো আছে কিনা সে প্রশ্নও অনেকে করেছেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদিন মালিক বলেন, ‘তিনি ধর্মীয় নেতা নন। সহজাতভাবেই তিনি আইন অনুসরণ করেন আক্ষরিকভাবে। আমাদের রাজনীতিতে একে পশ্চাদপদতা হিসেবে মনে করা হয়। আমার কাছে মনে হয়, এটিই তার প্রধান দুর্বলতা।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আফসান চৌধুরী বলেন, ‘ড. কামালের সাথে জোট গড়ায় বিএনপি উপকৃত হবে। বিএনপির ভোট ব্যাংকের কতটুকু উন্নতি হবে জানি না, তবে এতে নিশ্চিতভাবেই বিএনপির ভাবমূর্তি উন্নত হবে।’

আফসান চৌধুরী বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করার পর নির্বাচনে নেতৃত্ব দেয়ার অভিভাবকের অভাবে ছিল বিএনপি। কিন্তু ড. কামালের সাথে জোট গড়ার পর বিএনপি এক প্রবল নেতৃত্ব পেয়েছে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!