• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
কেরানীগঞ্জে প্লাস্টিক কারখানায় আগুন

কান্না আর স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১২, ২০১৯, ১০:২৪ এএম
কান্না আর স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ

ঢাকা : রাজধানীর কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় ‘প্রাইম পেট অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’র কারখানায় ভয়াবহ আগুনে দগ্ধ ৩৪ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে ৯ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। এদিকে আগুনে পোড়া মানুষগুলোর স্বজনরা ভিড় করছেন হাসপাতালের সামনে। তাদের কেউ চিৎকার করে কাঁদছেন, কেউ কাঁদছেন ডুকরে।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভোররাত রাত ৫টা পর্যন্ত তাদের মৃত্যু হয়। 

এদিকে ঢামেক বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের জানান, দগ্ধ ৩৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক। তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে আনা অনেকের ৭০-৯০ শতাংশ শরীর দগ্ধ হয়েছে, কারও ৬০-৭০ শতাংশ। প্রত্যেকেরই সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বুধবার বিকালে প্লাস্টিক সামগ্রী তৈরির কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পোড়া মানুষগুলোর স্বজনরা ঢামেক হাসপাতালের সামনে কেউ চিৎকার করে কাঁদছেন, কেউ কাঁদছেন ডুকরে।

আগুনে পোড়া স্বজনের কাছে যতটা সময় থাকা যায় তার আকুতি সকলের। দগ্ধ হওয়ার তালিকায় ১৪ বছরের কিশোর আসাদ, ১৬ বছরের জিহান ও রায়হানসহ আছেন ৩৪ জন। এদের মধ্যে ৩২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের অনেককেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে স্থানান্তর করতে হবে বলে জানাচ্ছেন ঢামেক হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।

কেরানীগঞ্জের ‘প্রাইম পেট অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’র কারখানায় আগুন লাগার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় এলাকাবাসী আহত শ্রমিকদের নিয়ে রাজধানীতে আসেন। পরিবারের সদস্যদের অনেকেই তাদের স্বজন-সন্তানদের সংবাদ পরে জেনেছেন। আগুন লাগে বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটের দিকে। আবাসিক এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কারখানাটি চলছিল। রাতের দিকে স্বজনেরা ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের বিভিন্ন তলায় ছুটছিলেন প্রিয়জনের খোঁজে। কাঁপতে কাঁপতে দেয়ালে সাঁটানো তালিকা দেখছিলেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে ঢামেকের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আবাসিক ডাক্তার পার্থ শঙ্কর পাল বলেন, দগ্ধ হয়ে ভর্তি রোগীদের ৬০ শতাংশই মারাত্মক খারাপ। সাধারণত অগ্নিদগ্ধ রোগীরা হাসপাতালে এসে কি করে পুড়ে গেছেন, কীভাবে আগুন লাগল বলেন। বুধবার ভর্তি হওয়া রোগীদের অবস্থা খুব খারাপ। প্রত্যেকের শ্বাসনালি পুড়েছে। অন্য দুজনের পা পোড়া। চিকিৎসকেরা জানান, রোগীদের শরীরের কতটুকু পুড়েছে তা ঠিকমতো মূল্যায়ন করতে পারেননি তারা। কারও কারও শতভাগ পুড়েছে, কারও ৭০-৯০ শতাংশ, কারও ৬০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত। প্রত্যেককেই আসা মাত্রই ব্যান্ডেজে মোড়া হয়েছে। চুল পর্যন্ত পোড়া। বৃহস্পতিবার রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরিষ্কার বলা যাবে।

আগুনে দগ্ধ রোগীর স্বজনেরা বুধবার বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের কাছে নানা অভিযোগ করেন। কামরুন্নাহার হুরি নামের এক নারী প্রতিমন্ত্রীকে বলেন, তার স্বজনরা কারখানায় কাজ করতেন, পাশেই একটা বাসায় থাকতেনও তারা। অগ্নিকাণ্ডে বাসাতেও আগুন লেগে যায়। এর আগেও কারখানাতে আগুন লেগেছে। স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল করিমও জানান একই কথা। স্থানীয় বাসিন্দারা চান এলাকা থেকে কারখানাটি সরানো হোক।

বুধবার বিকালে প্লাস্টিক সামগ্রী তৈরির কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট দুই ঘণ্টার চেষ্টায় সন্ধ্যা ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। দগ্ধদের অধিকাংশই কারখানাটির শ্রমিক।

কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ কয়েক শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে, কারখানায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে শ্রমিকরা ভেতরেই আটকা পড়েন। সেখানে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের থালা, গ্লাস ও বিভিন্ন খাবার সরবরাহে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বাক্স ও প্যাকেট তৈরি করা হতো।

ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দগ্ধদের মধ্যে যে ৩৪ জনের নাম পাওয়া গেছে; তারা হলেন- শ্রমিক ফয়সাল, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি জাহাঙ্গীর, শফিকুল, বশির, মো. ফয়সাল, দুর্জয় সরকার, সুমন ইসলাম, মেহেদী, আসাদ, সিরাজ, সাজিদ, জিনারুল হোসেন, সাখাওয়াত, আবু সাইদ, বাবুল, জাকির হোসেন, আলমগীর, আবদুর রাজ্জাক, রিয়াজ, দিদারুল, লাল মিয়া, জাকির হোসেন, সালাউদ্দিন, সুজন, সোহান, জিসান, সাহাজুল, ইমরান, রায়হান, আসলাম, মফিজ, মোস্তাকিম, ফারুক আহমেদ ও ফিরোজ।

এদের মধ্যে যারা নিহত হয়েছেন। তারা হলেন- ইমরান, বাবুল, রায়হান, খালেক, সালাউদ্দিন, সুজন, জিনারুল ইসলাম ও আলম। বাকি একজনের পরিচয় জানা যায়নি।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!