• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
উপজেলা নির্বাচনে নৌকার পরাজয়

কারণ জানাতে তৃণমূলে আ.লীগের নির্দেশ


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ৪, ২০১৯, ০১:৩৫ পিএম
কারণ জানাতে তৃণমূলে আ.লীগের নির্দেশ

ঢাকা : উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ তৃণমূলের কাছে জানতে চেয়েছে আওয়ামী লীগ। যেসব উপজেলায় চার ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেসব জেলা ও উপজেলার নেতাদের নৌকার প্রার্থীর ভোটে হারের কারণ জানাতে বলা হয়েছে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে। দলের সব বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদেরও এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভোটের মাঠে অবস্থান নেওয়া দলীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের নামের তালিকাও চেয়েছে ক্ষমতাসীন দল। দলের টিকেটে নির্বাচিত হয়ে ও মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়ার তিন মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই উপজেলা নির্বাচনে দলীয় নির্দেশ না মানার অভিযোগ প্রমাণ হলে তাদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা’ নেওয়ার কথাও ভাবছে শীর্ষ নেতৃত্ব। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

সরকারি দলের উচ্চপর্যাযের সূত্র জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাত্র তিন মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের হারের বিষয়ে দলে কিছু উদ্বেগের জন্ম হয়েছে। দেশের ৪৪৫টি উপজেলার নির্বাচনে ১৩৫টিতে নৌকার প্রার্থী পরাজিত হন। অথচ ভোটের মাঠে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলোও ছিল না। ৪৪৫টি উপজেলার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ১০৭টিতে চেয়ারম্যান পদে ভোটের প্রয়োজন হয়নি। একটি উপজেলায় ভোটের ফল স্থগিত আছে। গোপালগঞ্জের পাঁচটি উপজেলায় দল কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। অনেকটা একতরফা ছিল নির্বাচন।

দলীয় সূত্র মতে, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করা সংসদ সদস্যদের তালিকা তৈরি করছে আওয়ামী লীগ। আগামীকাল ৫ এপ্রিল দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ তালিকা দেওয়া হবে। তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা ওই বৈঠকেই চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের তিনজন নেতা। চার ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য মিলিয়ে প্রথমে অন্তত ৩০ জনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ ওঠে।

অভিযুক্ত সংসদ সদস্যের সংখ্যাও বেড়েছে। দলীয় প্রার্থীকে পরাজিত করতে অন্তত ৫০ সংসদ সদস্য ভোটের মাঠে তৎপর ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের মধ্যে অন্তত ২২ জন সংসদ সদস্যকে চিঠিও দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চিঠিতে তাদের ভোটের আগে নির্বাচনি এলাকা ছাড়তে বলে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র মতে, ইসির নির্দেশ অনুযায়ী কেউ কেউ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনি এলাকা ছাড়েননি বলেও অভিযোগ উঠেছে দলের তৃণমূল পর্যায় থেকে। স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মীর অভিযোগ, ইসির নোটিশের বাইরেও অনেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আছেন, যারা নির্বাচনে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেন। তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখছে দল।

সবশেষ অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ লক্ষ্যে দলের আটটি সাংগঠনিক বিভাগের জন্য আটটি দল গঠিত হয়। দলের প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া নেতাদের কারণে দলীয় প্রার্থী ভোটে পরাজিত হওয়ার পাশাপাশি তৃণমূলে কোন্দলের প্রকাশ ঘটেছে বলেও মনে করা হচ্ছে।

এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্কতার মধ্যেও কিছু কিছু স্থানে ভোট জালিয়াতি, বাক্স ছিনতাই ও সংঘর্ষের ঘটনাগুলোর জন্য তাদের দায়ী করা হচ্ছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিশাল জয়ের মধ্য দিয়ে সরকার গঠনের তিন মাস না যেতেই এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে কিছু সমালোচনার শিকার হতে হচ্ছে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে দলের অবস্থান এখন ‘কঠোর’।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ জানান, ‘সব এলাকার সাংগঠনিক সম্পাদককে আমরা একটা তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছি। তালিকাটি আমরা আমাদের ওয়ার্কিং কমিটির কাছে পেশ করব। সেখানেই তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা ঠিক করা হবে।’

দায়িত্বশীল অবস্থানে থেকে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দলের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, ‘দায়িত্বশীল কোনো নেতা নৌকার বিপক্ষে কর্মকাণ্ড করে থাকলে এর জন্য অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করব।’

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান জানান, ‘এবারের উপজেলা নির্বাচনে দলের অনেকে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেননি। বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে দলীয় প্রার্থীদের পরাজয়ের নেপথ্য কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এরপর বিষয়টি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানানো হবে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!