• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কারাগারে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা চান ওসি মোয়াজ্জেম


আদালত প্রতিবেদক জুন ২১, ২০১৯, ১২:১০ পিএম
কারাগারে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা চান ওসি মোয়াজ্জেম

ঢাকা : ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন কারাগারে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা চেয়ে আবেদন করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামশ জগলুল হোসেনের আদালতে ডিভিশন চেয়ে আবেদন করেন ওসি মোয়াজ্জেমের আইনজীবী। আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ২৪ জুন দিন ধার্য করেছেন।

আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম প্রথম শ্রেণির নাগরিক। তাই কারাগারে তার প্রথম শ্রেণির ডিভিশন চেয়ে আবেদন করেছি।

সোনাগাজী থানায় নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় ওসি মোয়াজ্জেমকে গত ১৬ জুন রাজধানীর শাহবাগ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ১৭ জুন বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস শামস জগলুল হোসেন ওসি মোয়াজ্জেমের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ওই দিন তার আইনজীবী জামিনের আবেদন করলে রাষ্ট্রপক্ষ তার জামিনের বিরোধিতা করেন।

এর আগে গত ২৭ মে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এ মামলার বাদী সুমন আসামি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন। আদালত বাদীর আবেদন আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এ ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন পিবিআইয়ের সদর দপ্তরের সিনিয়র এএসপি রিমা সুলতানা।

গত ১৫ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানার ওসি (প্রত্যাহার হওয়া) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা অভিযোগটি পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন। আদালত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।

উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ রাফিকে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন। এমন অভিযোগ উঠলে দুজনকে থানায় নিয়ে যান ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করতে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। মৌখিক অভিযোগ নেওয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যের বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

ভিডিওতে দেখা যায়, ওসির সামনে অঝোরে কাঁদছিলেন নুসরাত। সেই কান্নার ভিডিও করছিলেন সোনাগাজী থানার ওসি। নুসরাত তার মুখ দুই হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। তাতেও ওসির আপত্তি। বারবারই ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’ বলার পাশাপাশি তিনি এও বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে এখনো তোমাকে কাঁদতে হবে।’

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ওসি মোয়াজ্জেম অনুমতি ছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে নুসরাতকে জেরা এবং তা ভিডিও করেন। পরবর্তী সময়ে ওই ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে দেখা যায়, ওসি মোয়াজ্জেম অত্যন্ত অপমানজনক ও আপত্তিকর ভাষায় একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছেন নুসরাতকে। নুসরাতের বুকে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নও করতে দেখা যায় ওসি মোয়াজ্জেমকে।

অধ্যক্ষের নিপীড়নের ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। এরপর গত ৬ এপ্রিল সকালে রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান। এ সময় মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান। সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাত মারা যান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!