• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কারাগারে যেমন আছেন খালেদা জিয়া


বিশেষ প্রতিনিধি জুলাই ৩১, ২০১৯, ০১:৩৯ পিএম
কারাগারে যেমন আছেন খালেদা জিয়া

ঢাকা : অবস্থার উন্নতির জন্য ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা। সোমবার (২৯ জুলাই) ওষুধ পাল্টানো হয়েছে কিন্তু নিয়ন্ত্রণে আসছে না রোগ।

১৭ মাস আগে নিজে হাঁটাচলা করতে পারতেন, এখন হুইল চেয়ারই ভরসা। সময় কাটছে বিছানায়। মাথা সোজা রাখতে পারছেন না। খেতে পারছেন না। ওজনও কমে যাচ্ছে। অবশ ও শক্ত হয়ে যাচ্ছে ডান-বাম দুই সোল্ডারই। বিছানা থেকে ব্যক্তিগত কাজগুলোতেও অন্যের সহযোগিতা নিতে হচ্ছে। আগে সঙ্গে থাকা কাজের বুয়া একাই সব সামলাতে পারতেন। এখন সহযোগিতা লাগছে আরো একজনের।

দিন যায়, মাস যায় অবস্থার উন্নতি ঘটছে না। তাই সেবা নিয়ে দলের তরফ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। আছে অনাকাঙ্ক্ষিত বা অঘটনের শঙ্কা এবং হুমকিও। দাবি উঠেছে উন্নত চিকিৎসায় দেশে বা বিদেশে পাঠানোর। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা বলছেন উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো গুরুতর কিছু ঘটেনি। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও ‘গুরুতর’ কিছু না হওয়ার চিত্র সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে ঘিরে।

রাজনৈতিক নেতাকর্মী থেকে শুরু করে পথচারী, সাধারণ মানুষের জিজ্ঞাসা, কেমন আছেন ৭৫ বছরের খালেদা জিয়া? বিশেষ করে দেশের আরেক প্রবীণ রাজনীতিবিদ সাবেক সেনাপ্রধান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর উদ্বেগ অনেকগুণে বেড়েছে। নড়েচড়ে বসেছে সরকারও। আরো কঠোরতা বা সতর্কতা অবলম্বন করছে কারা কর্তৃপক্ষ। খালেদা জিয়া কারাগারে থাকতে তার সঙ্গে মাত্র একবার দেখা করতে পেরেছে ব্যক্তিগত চিকিৎসক দল। একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছেন আইনজীবীরা। জেলকোড অনুযায়ী ১৫ দিন পর পর দেখা পান খালেদা জিয়ার স্বজনরা। আগে যে কোনো ধরনের খাবার দেওয়া যেত, এখন তা সংকুচিত করা হয়েছে।

গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি একটি দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডে পুরনো কারাগারে বন্দি জীবনযাপন করছেন খালেদা জিয়া। শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখা দিলে তাকে দ্বিতীয়বারের মতো গত ১ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাখা হয় কেবিন ব্লকের ৬২৫ নং কক্ষে। সময় সময় সেখানেই তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি-অবনতি ঘটছে। গত ২৭ জুলাই তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ওইদিন হাসপাতালের ‘এ’ ব্লক থেকে ডেন্টাল ডিপার্টমেন্ট ব্লকের চার তলায় নেওয়ার সময় খালেদা জিয়াকে দুইবার হুইল চেয়ারে মাথা নুয়ে পড়তে দেখা গেছে। এর আগে যখন তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল তখনকার চেয়ে অনেকটাই শুকনো ও ক্লান্ত দেখা গেছে। এ নিয়ে উদ্বেগে বিএনপি। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাল্টাপাল্টি ব্রিফিং করেছে।    

এদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা অভিযোগ করেন, বিএনপি তাদের নেত্রীর (খালেদা) অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে অপপ্রচার করছে, রাজনৈতিক ফায়দা বা মানুষের সহানুভূতি নিতে চাচ্ছে। একজন কয়েদি হিসেবে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে বলেও ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের দাবি।

খালেদা জিয়ার দল ও চিকিৎসকের কথা : দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ অবিলম্বে তার পছন্দ অনুযায়ী দেশে অথবা বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গত শুক্রবার বিকালে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের জরুরি বৈঠক শেষে এমন দাবি জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, তার (খালেদা জিয়া) জিবে আলসার হয়েছে। গত এক সপ্তাহে তার ৪ কেজি ওজন কমেছে। ইট ইজ ভেরি অ্যালার্মিং। তাকে দেখলে এখন চেনাই যায় না। উনি শুঁকিয়ে এরকম হয়ে গেছেন। উনি কিছুই খেতে পারছেন না। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান মির্জা ফখরুল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, পিজিতে (বিএসএমএমইউ) আনার পর আপনারা দেখেছেন যে, তিনি (খালেদা জিয়া) হুইল চেয়ার ছাড়া মুভই করতে পারছেন না। তিনি এখন বিছানা থেকে নিজে উঠতে পারেন না। তাকে দুজন হেলপ করে ওঠাতে হয় এবং হুইল চেয়ারে বসিয়ে তাকে টয়লেটে, ওয়াশরুমে বা খাবার টেবিলে নিতে হয়। আবার দুজনের সাহায্য নিয়েই তাকে শোয়া বা বিছানায় নিতে হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা দলের সবাইকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। পরিবারকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে, দেশের মানুষকে উদ্বিগ্ন করেছে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এমন আচরণের উদ্দেশ্য কী? এই আচরণের মধ্য দিয়ে তাকে কি মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে না? এই প্রশ্নগুলো মানুষের মধ্যে এসে যাচ্ছে।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ও বিএনপি নেতা এ জেড এম ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার ‘ব্লাড সুগার’ ইনসুলিন নেওয়ার পরও নামছে না। তিনি ডায়াবেটিকসের তিনটা ওষুধ খাচ্ছেন, তারপরও কিছুতেই তা ২০-এর নিচে নামছে না। যার ফলে মুখের জিবে যে আলসার হয়েছে এটা আরো বাড়ছে। আর্থারাইটিস, ফ্রোজেন সোল্ডার প্রভৃতি রোগে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের আরো অবনতি ঘটেছে। রোববার তার ডায়াবেটিকের ইনসুলিন বদল করা হয়েছে। ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ডা. জাহিদ জানান, খালেদা জিয়ার দাঁতের চিকিৎসাটা বড় চিকিৎসা। তার রুট ক্যানেল করা দরকার, স্কেলিং করা দরকার। দুই-একটা দাঁত তার নষ্ট হয়ে গেছে বয়সের কারণে, সেগুলো তুলে ফেলা দরকার। তার দাঁত সার্প (চোখা) হয়ে গেছে। সেটা যখন তার জিবে আঘাত করে তখনই তিনি কষ্ট পান। যার ফলে তিনি কিছু খেতেও পারছেন না। এই বিষয়টা ধরা পড়ার পরে সেখানকার চিকিসকরা টুথ ব্র্যান্ডিং করেছে। গত শনিবার দ্বিতীয়বারের মতো দাঁতের সার্পনেসটা কমিয়ে আনা হয়েছে।

অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ১৫ দিন ধরে অর্থাৎ গত ৬-৭ তারিখে রেফার দেওয়া হয়েছিল; ডেন্টাল ডিপার্টমেন্টে কল করা হয়েছিল। তারা গত ২৬ জুলাই তাকে দেখেছেন। ডেন্টাল ডিপার্টমেন্ট ‘এ’ ব্লকের চার তলায়। ‘এ’ ব্লক থেকে কেবিন ব্লকে যেতে যদি ডাক্তার কল দিলে ১০ দিন সময় লাগে; তাহলে এই ধরনের রোগীর প্রতি এমন ধরনের আচরণ কী ইন্ডিকেট করে?

একজন বয়স্ক নেত্রীর কোনো সমস্যা হলে জরুরিভাবে ম্যানেজ করার মতো সুযোগ-সুবিধা সেখানে নেই বলে দাবি করেন এই চিকিৎসক। বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়ার দাঁতে সুচিকিসার আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

বিএসএমএমইউ’র চিকিৎসক যা বললেন : খালেদা জিয়ার জিবে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করতে দাঁতের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। গত ২৭ জুলাই শনিবার দুপুরে বিএসএমএমইউর পরিচালন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের ওপরের মাড়ির দুইটা দাঁতে ইরিটেশন হচ্ছিল। এতে তার জিবে ছোট আকারে ঘা হয়েছে। সেটাকে ট্রিটমেন্ট দেওয়ার জন্য তাকে ডেন্টাল বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে আধা ঘণ্টাব্যাপী চিকিৎসা দিয়ে দাঁতের সমস্যাটাকে দূর করে দেওয়া হয়।

খালেদা জিয়া চার মাস ধরে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন; তিনি কেমন আছেন প্রশ্ন করা হলে পরিচালক বলেন, উনার চিকিৎসা কনটিনিউ হচ্ছে, আমাদের মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসা করছে। আমি বলতে চাই গ্রেজুয়াল ইমপ্রুভিং। এসব ক্রনিক ডিজিসগুলো- ডায়াবেটিকস, আর্থারাইটিস এসব রোগ শতভাগ ভালো করা ডিফিকাল্ট। মিরাক্যালি ভালো হয়ে যাবে সেটাও নয়।  আমি বলব, উনি ভালো আছেন। উনাকে দেখে মনে হয়েছে কি উনি খুব বেশি অসুস্থ?

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!