• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কিছু দিনের মধ্যেই বিএনপির নেতৃত্বে পরিবর্তন!


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৩, ২০২০, ০৮:২১ পিএম
কিছু দিনের মধ্যেই বিএনপির নেতৃত্বে পরিবর্তন!

ঢাকা: সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যেই নানা মত-পথ। বিএনপি সিনিয়র নেতারাই কোন রাখঢাক ছাড়াই পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রাখছে এবং এইসমস্ত বক্তব্যের ফলে সিটি নির্বাচনের ১০ দিন আগেই বিএনপি প্রায় ছিটকে পড়েছে।

বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, দিকনির্দেশনাহীন নেতৃত্বের কারণেই নির্বাচনে পরিকল্পিত প্রচারণা করতে পারছে না বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করছেন, সিটি নির্বাচনে মিএনপির জন্য একটা ভালো সুযোগ ছিল। সব নেতারাই যদি এই নির্বাচনে মাঠে নামতেন এবং নিয়মিত প্রচারণায় অংশ নিত তাহলে একটি আলোড়ন তৈরি হতে পারতো। 

কিন্তু বিএনপির নেতারা যেন বসন্তের কোকিল, যাদের মাঝে মাঝে দেখা পাওয়া যায়। যেমন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১২ দিনের প্রচারণায় মাত্র ২ দিন মাঠে নেমেছেন।

বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদকে এখন পর্যন্ত প্রচারণায় সরব দেখা যায়নি। মির্জা আব্বাস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যস্ত থাকলেও উত্তরে তাকে একেবারেই দেখা যায়নি। অথচ তিনি অভিন্ন ঢাকার মেয়র ছিলেন। অথচ তাঁকেও এবারের নির্বাচনী মাঠে দক্ষিণে দেখা পাওয়া গেলেও উত্তরে দেখা যায়নি।

বিএনপির আরেক নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এই নির্বাচনের শুরুতে কিছুটা সরব থাকলেও এখন একেবারেই নিরব হয়ে গেছেন। তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। বিএনপির স্বেচ্ছাবন্দি নেতা রুহুল কবির রিজভী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচারণায় অংশগ্রহণ না করে তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে হঠাৎ ঝটিকা মিছিল করে আলোচনায় আসতে চাইছেন। এ রকম ভাবে বিএনপির পরিচিত মুখ ও নেতৃবৃন্দ কেউই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ব্যাপারে মনোযোগী নয়।

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রচারণা সম্পূর্ণ দুই প্রার্থী কেন্দ্রীক হয়ে পড়ছে। আর এটাকে বিএনপির অনেক নেতাই বলছেন নেতৃত্বের ব্যর্থতা। বিএনপির নেতৃবৃন্দ নিজেদের একাট্টা করে এই নির্বাচনে ভোট যুদ্ধে নামাতে পারেনি। এই সমস্ত অভিযোগই আসছে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে।

বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের সিনিয়র নেতাদের ভাগ করে দিতে পারতেন। বিশেষ করে যারা যেই এলাকার তাদেরকে সেই এলাকার মাঠে নামানো গেলে নির্বাচনে দুই প্রার্থীর উপর চাপ যেমন কমতো তেমনি বিএনপির নেতাকর্মীরাও আরও বেশি নির্বাচনী প্রচারণায় সম্পৃক্ত হত। কিন্তু নির্বাচনে বিএনপির নেতৃবৃন্দের কোনো পরিকল্পিত রূপরেখা নেই।

বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলেন সিরিয়র নেতাদের এক সূত্রে গ্রন্থিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। নেতা হিসেবে তিনি ব্যর্থ।

বিএনপির দুই মিত্র দলের নেতৃবৃন্দের এই নির্বাচনে কোনো অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে না। ২০ দলীয় জোটের কোনো নেতাই এখন পর্যন্ত সিটি নির্বাচনের মাঠে সরব নন।

অন্যদিকে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীর সাক্ষাৎ করেন। এ সময় দুই মেয়র প্রার্থীকেই সমর্থন জানান তিনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত গণফোরামের হেভিওয়েট নেতা ড. কামাল হোসেন, সুব্রত চৌধুরী, অধ্যাপক আবু সায়ীদ কাউকেই নির্বাচনী প্রচারণায় তাবিথ কিংবা ইশরাকের পক্ষে দেখা যায়নি।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একমাত্র মাহমুদুর রহমান মান্না উত্তরা এলাকায় কিছু প্রচারণায় তাবিথের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু ইদানিং তাকেও দেখা যাচ্ছে না। ঐক্যফ্রন্টের আ.স.ম আব্দুর রব কিংবা জাফরুল্লাহর মতো নেতারাও নির্বাচনের মাঠে নেই।

কাজেই মনে করা হচ্ছে এই নির্বাচনে বিএনপির মধ্যে নেতৃত্বে পরিবর্তনের দাবি আবার সামনে উঠে এসেছে। বিএনপি মনে করছে মহাসচিব পদে সবার কাছে একজন গ্রহণযোগ্য নেতা ছাড়া দলকে চাঙ্গা বা সংগঠিত করা যাবে না।

বিএনপির নেতারা এটাও মনে করছেন এই নির্বাচনে বিপর্যয় হওয়ার পর বিএনপির আরো ভেঙে পড়বে। আর বিএনপি সাংগঠনিক ভাবে আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর এ কারণেই সিটি নির্বাচনের এই ডামাডোলের মধ্যে বিএনপিতে নেতৃত্বে পরিবর্তনের জন্য চাপ তৈরি হচ্ছে।

বিএনপির কোন কোন নেতা লন্ডনে যোগাযোগ করেছেন। তারা মহাসচিব পরিবর্তনের জন্য লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক জিয়ার কাছে আবদারও করেছেন। তারেক জিয়া তাদের বলেছেন, সিটি নির্বাচন শেষ হওয়ার পর তিনি দলের কাউন্সিল করবেন বা নেতৃত্বের পরিবর্তন করবেন।

উল্লেখ্য যে, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর বিএনপিতে নেতৃত্ব পরিবর্তনের জন্য চাপ তৈরী হয়েছিল। এই বছরের শেষদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, তারা খুব শীঘ্রই কাউন্সিল অধিবেশন করবে। কিন্তু পরবর্তীতে অদৃশ্য কারণে তারা কাউন্সিল অধিবেশন করেনি। তবে সিটি নির্বাচনে বিপর্যস্ত হলেই বিএনপিতে নেতৃত্বের দাবি আরও জোরালো হবে, তখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ যারা নেতৃত্বে ব্যর্থ তাদের সরে যেতে হবে বলেই বিএনপির নেতারা মনে করছেন।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!