• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
জামিন বিষয়ে খোলা দুই পথ

কী ঘটতে যাচ্ছে খালেদা জিয়ার ভাগ্যে?


বিশেষ প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ১, ২০২০, ০৮:৫০ পিএম
কী ঘটতে যাচ্ছে খালেদা জিয়ার ভাগ্যে?

ঢাকা : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।

দলগতভাবে বিএনপি এক্ষেত্রে নিশ্চুপ, খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের কথা বলতে বারণ করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। সেক্ষেত্রে আগের মতো খালেদা জিয়ার পরিবারই ছুটছে জামিনের আবেদনপত্র নিয়ে। তার পরিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে মুক্তির এক্সটেনশন চেয়ে আবেদন করেছে।

গত সপ্তাহে পরিবারের পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার এ আবেদন করেন। আবেদনে করোনাকালীন দুর্যোগে গত ২৫ মার্চ থেকে ছয় মাসের জামিনে থাকা খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়নি এবং তার সুচিকিৎসা নিশ্চিতের জন্য শারীরিক অসুস্থতার কোনো পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়।

আবেদনে বলা হয়, এরই মধ্যে করোনা ভাইরাসের কারণে স্থবির হয়ে যাওয়া অফিস-আদালতসহ গণপরিবহন ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে আসতে শুরু করেছে। এতে অসুস্থ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও এ সংক্রান্ত শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। খালেদা জিয়ার বয়স, শারীরিক অসুস্থতা ও মানবিক বিবেচনায় তার স্থায়ী মুক্তির জন্য আবেদন করা হলো।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবেদনটির আইনগত দিক পর্যালোচনা করতে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রেরণ করেছে। আইনমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিকাল নাগাদ খালেদা জিয়ার আবেদনপত্রটি পৌঁছেছে আইনমন্ত্রণালয়ে। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে আইন বিভাগ পরীক্ষানিরীক্ষা করছে এবং আজই হয়তো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাদের মতামত দেওয়া হবে। আইন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে যে, খালেদা জিয়ার সামনে আসলে দুটো পথ খোলা আছে।

প্রথম কথা হচ্ছে, তাঁর স্থায়ী জামিন দেওয়ার কোন বিধান নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির যে ধারা সেই ধারায় সাময়িক দÐ স্থগিত করা হবে। স্থায়ীভাবে জামিন নেওয়ার জন্যে তাকে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং রাষ্ট্রপতি তাকে ক্ষমা করলেই সেক্ষেত্রে স্থায়ীভাবে জামিন পেতে পারবেন।

দ্বিতীয় পথ হচ্ছে, জামিনের মেয়াদ হয়তো তিন মাস বা চার মাস বাড়ানো হতে পারে। সাজা স্থগিত রেখে যদি জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় সেক্ষেত্রে দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগও নেই। কারণ এই ধরণের শাস্তি স্থগিত করে জামিন নিয়ে যদি অপরাধী দেশের বাইরে যায় এবং না ফেরেন তাহলে সেখানে আইনের এক ভয়ঙ্কর ব্যত্যয় ঘটবে।

এই কারণে খালেদা জিয়ার সামনে দুটো পথ আছে। একটি হচ্ছে, তিনি স্থায়ী জামিন আবেদনের জন্যে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন এবং সেই ক্ষমা প্রার্থনা করতে গেলে খালেদা জিয়াকে অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা মার্জনা ভিক্ষা করতে হবে। আর তিনি সেটা না করলে তাঁকে দেশে থেকেই চিকিৎসা করতে হবে এবং সেক্ষেত্রে হয়তো কয়েকদিনের জন্যে তাঁর জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করতে হবে। সেক্ষেত্রে তার বিদেশ যেতে পারার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আজ স্পষ্ট করে বলেছেন, খালেদা জিয়া জামিনে নাই। কোনো আদালত তাকে জামিন দেয়নি। গত মার্চ মাসে তার পরিবার থেকে একটি দরখাস্ত করা হয়েছিল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দেয়া হয়েছিল যে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য কোনো নির্বাহীর আদেশে তাকে যেন জেলখানা থেকে মুক্তি দেয়া হয়।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মানবিক দিক চিন্তা করে আমাদের দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১১ ধারায় তার (খালেদা) দÐাদেশ স্থগিত করে তাকে ৬ মাসের জন্য মুক্তি দেয়ার জন্য। গত মার্চ মাসের ২৫ তারিখ সেই আদেশে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। এ মাসের ২৫ তারিখ যার ছয় মাস পূর্ণ হবে। সেক্ষেত্রে এখন আইনী লড়াইয়ে না গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুকম্পার প্রার্থনাই করছে খালেদা জিয়ার পরিবার।

উল্লেখ্য, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি মামলা বিচারের পর্যায়ে আছে। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রæয়ারি থেকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা ভোগ করছেন খালেদা জিয়া। দুই মামলায় তার ১৭ বছরের সাজা হয়েছে।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রæয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজায় কারাজীবন শুরু করেন খালেদা জিয়া।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!