• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুরবানী সংক্রান্ত কিছু নিয়ম-কানুন জেনে রাখুন


ধর্ম ডেস্ক আগস্ট ২, ২০১৮, ০৫:৫৫ পিএম
কুরবানী সংক্রান্ত কিছু নিয়ম-কানুন জেনে রাখুন

ঢাকা : কোরবানি শব্দটি আরবি ‘কুরব’ ধাতু থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ নৈকট্য বা সান্নিধ্য। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে আত্মোৎসর্গ করাই কোরবানি। শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তাঁর নামে পশু জবেহ করাকে কোরবানি বলে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর নামে নির্দিষ্ট কিছু হালাল পশু জবাই বা কোরবানি করা হয়।

কুরবানীর পশু নির্বাচন-

বকরী, পাঠা, খাসী, ভেড়া, দুম্বা, গাভী, ষাঁড়, বলদ, মহিষ, উট, এই কয় প্রকার গৃহপালিত পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েজ। এগুলো ব্যাতিত অন্য যত পশু যত মুল্যবানের হোকনা কেন তা দিয়ে কুরবানী জায়েয হবেনা।

কুরবানীর পশুর বয়স প্রসঙ্গ-

১। বকরী, পাঠা, খাসী, ভেড়া, ভেড়ী, দুম্বা কম পক্ষে পূর্ণ এক বৎসর বয়সের হতে হবে। বয়স যদি কিছু কমও হয় কিন্তু এরুপ মোটা তাজা যে, এক বৎসর বয়সীদের মধ্যে ছেড়ে দিলেও তাদের চেয়ে ছোট মনে হয় না, তাহলে তার দ্বারা কুরবানী জায়েজ আছে তবে অন্তত ছয় মাস বয়স হতেই হবে। তবে বকরী কোন অবস্থা এক বৎসরের কম হলে চলবে না।
২। গরু ও মহিষের বয়স কম পক্ষে দুই বৎসর হতে হবে।
৩। উট এর বয়স কম পক্ষে পাঁচ বৎসর হতে হবে।

কুরবানীর পশুর স্বাস্থ্যগত প্রসঙ্গ-

১। কুরবানীর পশু ভাল এবং হৃষ্টপুষ্ট হওয়াই উত্তম।
২। যে প্রাণী লেংড়া অর্থ্যাৎ যা তিন পায়ে চলতে পারে-এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা রাখতে পারলেও ভর করতে পারে না এরুপ পশু দ্বারা কুরবানী দুরস্ত হবে না।
৩। যে পশুর একটিও দাঁত নেই তার দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়।
৪। যে পশুর কান জন্ম হতে নেই তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়, তবে কান ছোট হলে অসুবিধা আছে।
৫। যে পশুর শিং মুল থেকে ভেঙ্গে যায় তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়। তবে শিং উঠেইনি বা কিছু পরিমাণ ভেঙ্গে গিয়েছে এরকম পশু দ্বারা কুরবানী জায়েজ আছে।
৬। যে পশুর উভয় চোখ অন্ধ বা একটি চোখের দৃষ্টি শক্তি এক তৃতীয়াংশ বা তার বেশী নষ্ট তা দ্বারা কুরবানী জায়েজ নেই।
৭। যে পশুর একটি কান বা লেজের এক তৃতীয়াংশ কিংবা তার চেয়ে বেশী কেটে গিয়েছে তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়।
৮। অতিশয় কৃশকায় ও দুর্বল পশু যার এতটুকু শক্তি নেই যে, জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেটে যেতে পারে তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়।
৯। ভাল পশু ক্রয় করার পর এমন দোষ ত্রুটি দেখা দিয়েছে যার কারণে কুরবানী দুরস্ত হয় না-এরকম হলে সেটিই কুরবানী দেয়া দুরস্ত হবে।
১০। গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েজ। যদি পেটের বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সে বাচ্চাও জবাই করে দিতে হবে। তবে প্রসবের নিকটবর্তী হলে সেরকম পশু কুরবানী দেয়া মাকরুহ।
১১। বন্ধ্যা পশু কুরবানী করা জায়েজ আছে।

কুরবানীর নিয়ম-

নিজের কুরবানী নিজেই কারাই হচ্ছে উত্তম। নিজে না জানলে একজন জাননেওয়ালা ব্যক্তির মাধ্যমে জবেহ করানো জায়েয আছে । জবেহ করার সময় কুরবানীদাতা নিকটে থাকা উত্তম । কুরবানীর নিয়ত মনে মনে করলে হবে । জবেহ করার সময় ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’বলা জরুরী’।

চামড়া ছড়ানোর পদ্ধতি-

কুরবানীর নিয়ম অনুসারে যিনি কুরবানী দিবেন তিনি ইচ্ছে করলে পশুর চামড়া নিজের ব্যাবহারের জন্য রেখে দিতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশে কুরবানীর চামড়া নিজের ব্যবহারের প্রচলন খুব বেশি না বলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা চামড়া বিক্রী করে দেই। যেহেতু চামড়া বিক্রী করে দেই এবং এর বিক্রীত অর্থ গরীবদের হক হয়ে যায় সেকারনে, অনেক সময় না জানার কারনে চামড়ার প্রতি আমরা যত্নবান হই না।

যত্নবান না হওয়ার কারনে দুটো ঘটনা ঘটে-

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় আমাদের অসচেতনার কারনে আমরা ভালো চামড়া থেকে বঞ্চিত হই। একটা পশু যখন জীবিত অবস্থায় থাকে তখন এর মধ্যে অনেক এন্টিবডি কাজ করে। কিন্তু জবেহের পরে এর মধ্যে ক্রিয়াশীল এন্টিবডির অক্ষমতার কারনে ভাইরাস/ব্যাক্টেরিয়ার দ্রুত বিকাশ ঘটে এবং পচনের দিকে ধাবিত হয়। পশুর গায়ের থেকে চামড়া ছাড়ানো হতে ট্যানারীতে প্রক্রিয়াজাত পদ্ধতিতে যাওয়ার আগ পর্যন্তই খুব গুরুত্বপুর্ণ সময়। এসময়েই চামড়া বেশি নষ্ট হয়। আর এই নষ্ট হওয়াটা পরবর্তিতে কেমিক্যাল বা মেকানিক্যাল অপারেশনে খুব কমই দূর করা যায়। সেক্ষেত্রে চামড়া ছড়ানোর প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত তাদের সচেতন হতে হবে।

আপনার পশুর কুরবানী এবং এর পরবর্তিতে পশুর চামড়া ছাড়ানোর সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ রাখুন-

• জবাই করার আগে পশুকে প্রচুর পরিমানে পানি খাওয়ান।
• পশুকে শুইয়ে এমনভাবে টানা হেচড়া করবেন না যাতে পশু কষ্ট পায় এবং চামড়া ছিলে যায়। এটা ধর্মীওভাবেও নিষেধ করা হয়েছে।
• সবচেয়ে ভালো হয় এবং যদি সম্ভব হয় গরু বা ছাগল-যে পশুর চামড়াই ছাড়াতে চান না কেন, অবশ্যই নাইলনের মোটা দড়ি দিয়ে শক্ত কোনো খুঁটির সঙ্গে পশুটি ঝুলিয়ে দিলে। এতে চামড়া টানাহেচড়া জনিত কারনে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
• চামড়া ছাড়ানোর ক্ষেত্রে ধারালো ছুরি ব্যাবহার করুন। ভোঁতা ছুরি দিয়ে ছাড়ানোর সময় চামড়া ছিঁড়ে যেতে পারে।
• ছাগলের চামড়ার ক্ষেত্রে অনেকেই ছুরি দিয়ে কেটে নেওয়ার পর টান দিয়ে নিচের দিকে নামাতে থাকে। এতে একটু ভুলেই চামড়া ছিঁড়ে যেতে পারে চামড়া।
• চামড়া ছাড়ানোর পর অনেকেই তা যেনতেন ভাবে মাটিতে ফেলে রাখে। একটু সময় করে ভাঁজ করে রাখুন।
• চামড়ার গায়ে যাতে মাংশ বা চর্বি লেগে না থাকে সেদিকে লক্ষ রাখুন। আমাদের দেশে কুরবানীর সময় দক্ষ কসাইয়ের অভাব থাকে বিধায়  এ সমস্যা বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রে মাংশের পচনের মাধ্যমে চামড়ার পচন তরান্বিত হয়।
• ছাগল বা গরুর মাথার চামড়াও মূল্যবান। এটি আলাদা করার সময় অবহেলা করা উচিত নয়।

সবচেয়ে ভালো হয় চামড়া ছাড়ানোর পর দুই থেকে তিন ঘণ্টার (গরমকালে) এবং চার থেকে ছয় ঘণ্টার (শীতকালে) মধ্যে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিলে। সেক্ষেত্রে আপনারা যত দ্রুত সম্ভব চামড়া বিক্রী করে দিতে পারেন। নতুবা কাঁচা চামড়ায় পচন ধরে যাবে।  আপনি চামড়া বিক্রী করতে  না পারেন তাহলে আপনাকে চামড়া সংরক্ষন করতে হবে। চামড়া সংরক্ষণের নানা রকম পদ্ধতির মধ্যে আছে লবণ দিয়ে, রোদে শুকানো এবং হিমাগারে সংরক্ষণ। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি লবণ দিয়ে রোদে শুকানো। এ পদ্ধতিতে চামড়া বিছিয়ে তার উপর লবন ছিটিয়ে দিতে হয়। এতে করে চামড়ার মধ্যকার পানি বেরিয়ে আসে এবং ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া মরে যায়। তারপর চামড়াকে ফোল্ড করে ভাজ করে রাখা যায়। কিছু কিছু ব্যাক্টেরিয়া তারপরেও থেকে যায়। সেক্ষেত্রে লবনের সাথে সামান্য পরিমান ন্যাফথালিন এবং সোডা গুড়া মিশিয়ে দিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

সোনালীনিউজ/আরজে

Wordbridge School
Link copied!