ঢাকা : স্বাধীনতার ৪৯ বছরে এসে এদেশে দুর্নীতি হ্রাস পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি যে, বর্তমানে দুর্নীতি মহামারী আকারে আমাদের দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে। প্রতিটি জায়গায় দুর্নীতি কালো থাবা বসিয়েছে। করোনা মহামারীতে সব থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত খাতটি হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত। এই খাতের একেবারে ছোট পর্যায় থেকে শুরু করে রাঘববোয়াল পর্যন্ত দুর্নীতি করছে। মানবিকতাকে তারা বিক্রি করে দিয়েছে। সাহেদ, সাবরিনা, ড্রাইভার মালেক এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। একজন ড্রাইভার হয়ে তার সম্পদ আকাশসম। এরা তো শুধু ধরা পড়েছে। কিন্তু এমন আরো অনেক দুর্নীতিবাজ অধরাই রয়ে গেছে। এর আগেও মেডিকেলে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনার দুর্নীতি দেশবাসী দেখেছে। বালিশকাণ্ড আমরা দেখেছি। পত্র-পত্রিকা খুললেই শুধু দুর্নীতির খবর।
ইদানীং পত্রিকার পাতা খুললেই ধর্ষণের সংবাদ পাওয়া যায়। শিশু থেকে বৃদ্ধা, তরুণী থেকে মহিলা কেউই নিস্তার পাচ্ছে না। স্বাধীনতার এই ৪৯ বছরে এসে নারীর প্রতি এই সহিংসতা মেনে নেওয়া যায় না। ধর্ষণের বিচারহীনতার সংস্কৃতির জন্য এটা আরো বেড়ে গেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কিছু মানুষরূপী পশু এসব জঘন্য কাজ করছে বলে অভিযোগ আছে। তবে আশার বিষয় হচ্ছে, সরকার ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড রেখে আইন মন্ত্রিসভায় পাস করেছে। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে ১৩ অক্টোবর থেকে এই আইন কার্যকর হয়েছে। আশা করি এখন অন্তত ধর্ষণের ঘটনা কমবে। তবে ধর্ষণের মামলার বিচারগুলোও দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। নতুন আইনে এই মামলাগুলো ৬ মাসের মধ্যে বিচারের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাও অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা কখনোই কাম্য নয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে।
বেকার সমস্যা দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাধীনতার ৪৯ বছরে এসে আমাদের দেশ আরো উন্নত হওয়ার কথা ছিল। যেখানে বেকার সদস্যের সংখ্যা হাতেগোনা থাকা উচিত ছিল। কারণ আমরা অনেকটা সময় পেয়েছি, সঠিকভাবে সবকিছু ব্যবহার করলে আজকে তরুণদের এই হাহাকার শুনতে হতো না। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স, মাস্টার্স পাস করে বেকার হয়ে বসে আছে। তাদের জন্য তাদের পরিবারও কষ্টে আছে। এই অবস্থার থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে। দেশে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বিভিন্ন পেশার দ্বার উন্মুক্ত করতে হবে। অনলাইনে ফ্রি-ল্যান্সিংয়ের কাজ বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। অনেক তরুণই এদিকে এখন আসছে। এটাও একটি সম্ভাবনাময় কর্মক্ষেত্র। প্রধানমন্ত্রীও এটাকে পেশা হিসেবে অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন। তাই ভবিষ্যতে এই ক্ষেত্রটিকে আরো উন্নত করার দরকার আছে। তাছাড়া কারিগরি শিক্ষার প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের আমলে প্রচুর উন্নয়নকাজ হচ্ছে। ক্রমাগত সরকার পরিবর্তনের ফলে এদেশে তেমন দৃশ্যমান উন্নয়ন আগে হয়নি। তবে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিনবার ক্ষমতায় থেকে অনেক কাজ করছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী ট্যানেল, অসংখ্য ফ্লাইওভার, অবকাঠামো, রাস্তার সংস্কার, নতুন রাস্তার কাজসহ আরো অনেক উন্নয়ন চলছে। বর্তমানে এদেশে অনেক বিনিয়োগও আসছে। চীন, জাপান প্রচুর উন্নয়নকাজের অংশীদার হচ্ছে। এটা অবশ্যই আশার খবর। একটি দেশে যত বেশি উন্নয়নকাজ হবে, তত সে দেশের জীবনমান বৃদ্ধি পাবে। আর উন্নয়নের জন্য সরকারের ধারাবাহিকতাও অনেক জরুরি। তাই বর্তমান যে উন্নয়নের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, এটা যদি অব্যাহত থাকে তবে খুব শিগগির আমরা উন্নত দেশের মর্যাদা পাব।
রোহিঙ্গা সমস্যা। বর্তমান বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যা। মিয়ানমার থেকে অত্যাচারিত হয়ে প্রায় ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের অপরাধ বৃদ্ধি ও অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। অতি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। জাতিসংঘকে এ বিষয়ে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কূটনৈতিকভাবে যদি সমাধান না হয় তবে নিষেধাজ্ঞার মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এখন সময় সামনের দিকে এগোনোর। ভবিষ্যৎকে কীভাবে আরো নিরাপদ করা যায়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার। ২০২১ সালে অর্থাৎ পরের বছর আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। নানা চড়াই-উতরাই পার করে বীরের জাতি বাঙালি তাদের স্বাধীন বাংলার ৫০ বছর পূর্তি পালন করবে। এ সময় আমাদের অতীতের সব ভুল শুধরে নিয়ে বাস্তবমুখী পরিকল্পনা করতে হবে। আর অতীতের সোনালি অর্জনগুলোকে আমাদের অনুপ্রেরণা বানাতে হবে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে উন্নত দেশ হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে।
২০২১ হবে আমাদের বাঙালি জাতির জন্য অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ আমাদের সবার প্রত্যাশা। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ হবে উন্নয়নের, তরুণ প্রজন্মের নিরাপদ বাসস্থান। গৌরবময় বাঙালি জাতির বীরত্বগাথা ছড়িয়ে যাবে বিশ্বের সব প্রান্তে। সবার একটাই আশা, সব ক্ষেত্রে সুবর্ণজয়ন্তী হয় যেন বাংলাদেশের জন্য টার্নিং পয়েন্ট। তাই এর আগেই দেশের দুর্নীতি দূর করতে হবে। গুম, খুন, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি বন্ধ করতে হবে। অপরাধীদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনতে হবে। দারিদ্র্যকে শূন্যের কোটায় নামাতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্য খাতকে আরো উন্নত করতে হবে। এই করোনা মহামারী দেখিয়ে দিয়ে গেছে যে স্বাস্থ্য খাতকে সবসময় যেকোনো পরিস্থিতির জন্য তৈরি করে রাখতে হবে। কারণ আধুনিক বিশ্বে যেকোনো সময়, যেকোনো সমস্যা আসতে পারে। সৎ, যোগ্য, দেশপ্রেমিক নাগরিকদের যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে হবে। স্বার্থান্বেষী মহলকে সবসময় দূরে রাখতে হবে। বেকার সমস্যার দূরীকরণ করে তরুণদের দেশের কাজে লাগাতে হবে। বর্তমানে দেশের রপ্তানি আয় সন্তোষজনক হলেও আরো বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। প্রবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।
বলা হচ্ছে, এই করোনার থেকেও দুর্নীতিটা এদেশে ভয়াবহ মহামারী হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। মূল্যবোধ, নৈতিকতা যদি জাগ্রত না হয় তবে আইন করেও দুর্নীতি রোধ সম্ভব নয়। দেশের আদালতের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তবে জাতি হিসেবে আমরা যদি একটি উন্নত ধারণা পোষণ না করি, সভ্যতাকে নিজের হূদয়ে প্রতিস্থাপন না করি তবে এই দুর্নীতি খুব সহজে আমাদের থেকে যাবে না।
লেখক : শিক্ষার্থী, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।
আপনার মতামত লিখুন :