• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কোটি টাকার সম্পদ বিপদ ডেকে এনেছে স্কুলশিক্ষকের


নিউজ ডেস্ক জুলাই ২৮, ২০২০, ০২:৪১ পিএম
কোটি টাকার সম্পদ বিপদ ডেকে এনেছে স্কুলশিক্ষকের

অহিদুল আলম তালুকদার ওরফে আলম মাস্টার (৬০) । উপগ্রহ থেকে নেওয়া এলাকার ছবি

ঢাকা : বরিশালের হিজলা উপজেলায় বাবার কোটি টাকার সম্পদ আত্মসাতের জন্য সুস্থ বড় ভাইকে মানসিক রোগী সাজিয়ে শিকলবন্দি করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, সম্পদ আত্মসাতের লক্ষ্যে ছোট দুই ছেলে এবং বোনরা মিলে বাবাকেও হত্যার চেষ্টা চালান। তাদের হাত থেকে রক্ষা পেতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বৃদ্ধ বাবা।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার গুয়াবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা অহিদুল আলম তালুকদার ওরফে আলম মাস্টার (৬০) নরসিংহপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। প্রায় ৮ বছর আগে অবসরে যান তিনি। অহিদুল আলম ওরফে আলম মাস্টার পৈত্রিক সূত্রে অনেক জমি পেয়েছিলেন। এছাড়া বিদ্যালয় থেকে অবসরের পর এককালীন ১০ লক্ষাধিক টাকা পান। বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ তার জন্য বিপদ ডেকে আনে।

অহিদুল আলম দাম্পত্য জীবনে ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ের জনক। অহিদুল আলমের স্ত্রী রেবেকা বেগমও অর্থলোভী। স্বামীর সম্পদ ভোগ-বিলাসের মাধ্যমে খরচ করতে ছোট দুই ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে তিনি নানা ফন্দি আটেন। তবে বাবার সারা জীবনের প্ররিশ্রমের অর্থ ভোগ-বিলাসের মাধ্যমে খরচ করার বিষয়টি বুঝতে পেরে বড় ছেলে মোহাম্মদ উল্লাহ (৩৫) ও মেজ ছেলে হাবিব উল্লাহ (৩১) বাধ সাধেন।

এনিয়ে অহিদুল আলমের পরিবারে কলহ সৃষ্টি হয়। কলহ মেটাতে অহিদুল আলম সেজ ছেলে আহম্মদ উল্লাহ (২৫) ও ছোট ছেলে সানউল্লাহকে (২০) ব্যবসার জন্য ১০ লাখ টাকা দেন। কিন্তু ওই টাকা নষ্ট করে ফেলেন দুই ছেলে। এর ৬ মাস পর ব্যবসায় লোকসানের কথা বলে আরও ১০ লাখ টাকা চান তারা। তবে টাকা দিতে অস্বীকার করেন বাবা অহিদুল আলম। এরপর থেকে স্ত্রী রেবাকা বেগম, সেজ ছেলে আহম্মদ উল্লাহ ও ছোট ছেলে সানউল্লাহ ও বড় মেয়ে স্কুল শিক্ষিকা ফাতেমা বেগম নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেন। একপর্যায়ে অহিদুল আলমের সম্পদ তাদের নামে লিখে দিতে বলেন। কিন্তু অহিদুল আলম সম্পত্তি লিখে দিতে অস্বীকৃতি জানান।

স্থানীয়রা আরও জানান, সম্পদ লিখে না দেয়ায় একপর্যায়ে অহিদুল আলমকে বাড়িতে আটকে রেখে মারধর করা হয়। মানসিক রোগী বলে গ্রামে অপপ্রচার চালানো হয়। এরপর হাত-পা বেঁধে অহিদুল আলমকে চিকিৎসার কথা বলে ঢাকায় নিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে যান অহিদুল আলম। মেজ ছেলে হাবিব উল্লাহও প্রাণভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।

অন্যদিকে বড় ছেলে মোহাম্মদ উল্লাহকেও বাড়ির একটি ঘরে শিকলবন্দি করে রাখা হয়। এসব ঘটনা আরও ৩ বছর আগের। সেই থেকে অহিদুল আলম নিজের ঘরবাড়ি থাকতেও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আর তার বড় ছেলে মোহাম্মদ উল্লাহ শিকলবন্দি হয়ে জীবন কাটাচ্ছেন।

অহিদুল আলমের ছোট ভাই ইসমাইল তালুকদার জানান, তার ভাইয়ের (অহিদুল আলমের) কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। ওই সম্পদই তার বিপদ ডেকে এনেছে। ৩ বছর ধরে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বড় ভাতিজা মোহাম্মদ উল্লাহকে পাগল সাজিয়ে ঘরে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে। সম্পত্তি ও অর্থের লোভে রেবেকা বেগম, তার সেজ ছেলে আহম্মদ উল্লাহ ও ছোট ছেলে সানউল্লাহ ও বড় মেয়ে স্কুল শিক্ষিকা ফাতেমা বেগমের ষড়যন্ত্রের কারণে অহিদুল আলম এখন ঘরছাড়া।

ইসমাইল তালুকদার বলেন, আমি এ ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলাম। এরপর আমার বিরুদ্ধে তারা দু’টি মামলা করেছেন। এখন আমাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। গ্রামে যেতে পারি না অনেক দিন।

বৃদ্ধ অহিদুল আলম তালুকদারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্ত্রী রেবেকা বেগম, তার সেজ ছেলে আহম্মদ উল্লাহ, ছোট ছেলে সানউল্লাহ এবং মেয়ে ফাতেমা বেগম তাকে পাগল বলে প্রচার করে হত্যার চেষ্টা করেছে। সেই থেকে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

এখন কোথায় আছেন জানতে চাইলে অহিদুল আলম বলেন, নিরাত্তার স্বার্থে এখন কোথায় অবস্থান করছি তা জানাতে চাচ্ছি না। তবে আমার বড় ছেলেকে তারা শিকলবন্দি করে রেখেছেন। তাকে উদ্ধার করা প্রয়োজন। আমার মতো তাকে মানসিক রোগী বলে গ্রামে রটানো হয়েছে। অর্থের মোহে স্ত্রী, দুই ছেলে ও মেয়ে অন্ধ হয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু লোক রয়েছেন। অর্থের লোভে তারা এখন সবকিছু করতে পারেন।

অহিদুল আলম তালুকদার বলেন, স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়ে অভিযোগ করেছিলাম। তাও প্রায় বছর দুই আগে। তদন্ত করে অভিযোগের প্রমাণও পেয়েছিলেন তারা। এরপর গ্রামের প্রভাবশালী মহলের তদবিরে সেই তদন্ত আর আলোর মুখ দেখেনি। এরপর আদালতে মামলা করি। বর্তমানে বরিশাল আদালতে মামলাটি চলমান রয়েছে। ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় আছি।

হিজলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন ঢালী জানান, গুয়াবাড়িয়া গ্রামে অহিদুল আলম তালুকদার ওরফে আলম মাস্টার নামে এক ব্যক্তিকে পাগল বলে প্রচারণা চালিয়ে তারই পরিবারের সদস্যরা বাড়িছাড়া করেছে বলে শুনেছি। এমনকি তার বড় ছেলেকে ঘরে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। বিষয়টি হিজলা থানা পুলিশকে খোঁজ নিয়ে দেখার অনুরোধ করেছিলাম। তবে থানা পুলিশ এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিয়েছে বলে খবর পাইনি।

হিজলা থানা পুলিশের ওসি অসিম কুমার সিকদার জানান, এ ধরনের কোনো ঘটনা তার জানা নেই। কেউ তার কাছে অভিযোগও দেয়নি। তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সেজ ছেলে আহম্মদ উল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে হিজলা থানা পুলিশের একটি দল গুয়াবাড়িয়া গ্রামে যান।

ইসমাইল তালুকদার ও তার ভাতিজা হাবিব উল্লাহ জানান, তাদের একাধিক প্রতিবেশী ফোন দিয়ে গ্রামে পুলিশ আসার বিষয়টি তাদের জানিয়েছেন। পুলিশ সদস্যরা গ্রামের বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে তাদের প্রসঙ্গে জানতে চেয়েছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বেলা ১১ টা) পুলিশের দলটি গুয়াবাড়িয়া গ্রামে অবস্থান করছিল।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!