• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
অর্ধশত নারী সদস্যকে খুঁজছে পুলিশ

কৌশল বদলেছে জঙ্গিরা


বিশেষ প্রতিনিধি অক্টোবর ২২, ২০১৮, ০৬:৩১ পিএম
কৌশল বদলেছে জঙ্গিরা

ঢাকা : জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রী সংগঠন ইসলামী ছাত্রী সংস্থার অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে খুঁজছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। সুযোগ বুঝে আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে এসে বিভিন্ন সময়ে নাশকতার তৎপরতা চালায় তারা। ‘আল্লার সান্নিধ্যের’ প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাম-গঞ্জের কোমলমতি ছাত্রীদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে আসা এসব তথ্যের আলোকে তাদের অবস্থান চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার হওয়া ইসলামী ছাত্রী সংস্থার সদস্যদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেশে নারী জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক, কর্মপদ্ধতি, উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে। গত দেড় বছরে ওই নারী জঙ্গি নেটওয়ার্কের বেশকিছু সদস্যকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

সর্বশেষ নরসিংদীর মাধবদীতে মেঘলা ও মৌ নামে দুই নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশি রিমান্ডে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

এদিকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ভাষ্য, নারী জঙ্গিদের বিষয়টি প্রথম জানা যায় ২০১৬ সালে রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজে অভিযান চালিয়ে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার পাঁচ সদস্যকে আটকের পর।

এ ছাড়া এর কিছু দিন পরই জামায়াতে ইসলামীর সাবেক শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামীর স্ত্রী শামসুন্নাহার নিজামীর পরিচালিত ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে অভিযান চালিয়ে পুলিশ আরো পাঁচ নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার করার পর বিষয়টি খোলাসা হয়। ওই বছরই আজিমপুরের একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে শীলা ও শারমিন নামে দুই নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়।

এরপর গেল বছর রাজধানীর আশকোনায় হাজী ক্যাম্পের কাছে জঙ্গি আস্তানা থেকে নিহত জঙ্গি মেজর জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শীলা ও তার মেয়ে এবং পলাতক জঙ্গি মুসার স্ত্রী তৃষ্ণা ও তার মেয়েকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।

অপরদিকে র্যাব সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট ঢাকা ও গাজীপুর থেকে চার নারী জঙ্গিকে গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরো ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মিরপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করে র্যাব। এই মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন মিরপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শাহজালাল আলম। পরবর্তী সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার র্যাবে স্থানান্তর করা হয়। র্যাব-৪ এর সহকারী পুলিশ সুপার শামসুল হক তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হন।

২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর এই মামলায় ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় র্যাব। তবে চার্জশিটভুক্ত সব আসামিই মহানগর দায়রা জজ প্রথম অতিরিক্ত আদালত থেকে পর্যায়ক্রমে জামিন নিয়ে কারামুক্ত হয়।

এদিকে চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে রজার সিঙ্গারাভেলু নামে এক ব্যক্তির ওপর ছুরি নিয়ে হামলা চালায় মোমেনা সোমা নামের বাংলাদেশি এক তরুণী। তাকে গ্রেফতারের পর হামলাটি আইএসের অনুপ্রাণিত হামলা বলে জানায় অস্ট্রেলিয়া পুলিশ।

এরপর বাংলাদেশ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট মোমেনার মিরপুরে বাসায় যায়। সেখানেও জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সিটিটিসির এক কর্মকর্তার ওপর ছুরি নিয়ে আক্রমণ চালায় মোমেনার বোন সুমনা। তারা দুই বোনই অনলাইনে জঙ্গিবাদের উপকরণ দেখে উদ্বুদ্ধ হয় এবং নব্য জেএমবির মাস্টারমাইন্ডসহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মোমেনার যোগাযোগ স্থাপন করে। তারা দুই বোনই দুই দেশের পুলিশের হেফাজতে আছে।

জঙ্গিবাদের নারীদের এই তৎপরতার বিষয়ে পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত আইজিপি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিরা কৌশল পরিবর্তন করছে। এখন তারা নারীদের ব্যবহার করছে। তবে এ বিষয়েও আমরা অবগত আছি। ওরা যেকোনো প্রোগ্রাম করুক না কেন আমাদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তা আমরা পেয়ে যাই। বিশেষ করে হলি আর্টিজানে হামলার পর থেকেই জঙ্গিবাদ দমন পুলিশ চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে।

তিনি দাবি করেন, ইতোমধ্যে জঙ্গিদের ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে। দেশের বড় হামলার সক্ষমতা জঙ্গিদের আর নেই। তবে তারা ঘাপটি মেরে থেকে বিচ্ছন্নভাবে তৎপর হওয়ার চেষ্টা প্রায়ই করে থাকে। কিন্তু পুলিশ তাদের খুঁজে বের করতে বদ্ধপরিকর।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!