• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
ডিএসসিসি’র পানি ছিটানো কার্যক্রম বন্ধ

ক্ষতিকর মাত্রার ধূলি রাজধানীর বাতাসে


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ১৭, ২০১৮, ০১:০৬ পিএম
ক্ষতিকর মাত্রার ধূলি রাজধানীর বাতাসে

ঢাকা : শীতের আগমনের শুরুতেই রাজধানীতে বেড়েছে ক্ষতিকর ধূলিকণা ও যৌগ গ্যাসের মাত্রা। আবহাওয়া শুষ্ক থাকা ও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে এসব ধূলিকণা। গেল অক্টোবরের তুলনায় চলতি নভেম্বরের শুরু থেকেই রাজধানীর বাতাসে ক্ষতিকর মাত্রায় এসব ধূলিবিষের উপস্থিতি বেড়েছে।

এদিকে নগরবাসীকে ক্ষতিকর ধুলামুক্ত রাখতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পানি ছিটানোর যে কার্যক্রম ছিল তা কার্যত বন্ধই রয়েছে। কার্যক্রম চলমান— ডিএসসিসির পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হলেও সরেজমিন অনুসন্ধানে তার কোনো প্রমাণ মেলেনি।

পরিবেশ অধিদফতরের আওতাধীন ‘টেকসই বায়ু ও নির্মল পরিবেশ (এসএএসই)’ প্রকল্পের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল মহানগরের বাতাসের প্রতিদিনের বায়ু মানের সূচক (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স-একিউআই) পরিমাপ করা হয়।

এসব মহানগরের বাতাসে ভাসমান বস্তুকণার মধ্যে যেগুলোর ব্যাস ১০ মাইক্রোমিটার  সেসব বস্তুকণাকে পার্টিকুলার ম্যাটার (পিএম)-১০ এবং যেসব বস্তুকণার ব্যাস দুই দশমিক পাঁচ মাইক্রোমিটার সেগুলোকে পার্টিকুলার ম্যাটার (পিএম)-২ দশমিক ৫— এই দুই ভাগে ভাগ করে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়। আর এই দুই শ্রেণির বস্তুকণা বাতাসের প্রতি ঘনমিটারে কত মাইক্রোগ্রাম আছে তা পরিমাপ করা হয় পার্টস পার মিলিয়ন বা পিপিএম এককে।

পরিবেশবিজ্ঞানীদের মতে, বাতাসের একিউআই মাত্রা শূন্য থেকে ৫০ পিপিএম হলে তাকে ‘সবুজ বা স্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলা হয়। একিউআই মাত্রা ৫১ থেকে ১০০ পিপিএম হলে তাকে ‘মধ্যম’ বায়ু বলা হয়, যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। মাত্রা ১০১ থেকে ১৫০ পিপিএম হলে সে বায়ুকে ‘সতর্কতামূলক’ বায়ু বলা হয়, যা মানুষের জন্য মৃদু ক্ষতিকর। একিউআই মাত্রা ১৫১ থেকে ২০০ পিপিএম হলে সে বায়ুকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণিতে ফেলা হয়। ২০১ থেকে ৩০০ পিপিএম একিউআই মাত্রার বাতাসকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণিতে এবং ৩০১ থেকে ৫০০ পিপিএম মাত্রার বাতাসকে ‘চরমপর্যায়ের অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

পরিবেশ অধিদফতরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী গত অক্টোবরের শেষ দিকেও রাজধানীর বাতাসে ক্ষতিকর পর্যায়ে ছিল এসব ধূলিকণা। ২৮ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত রাজধানীর বাতাসে ধূলিকণার মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৮৭ পিপিএম, ১০৮ পিপিএম, ১৩৫ পিপিএম এবং ১৪২ পিপিএম। তবে নভেম্বরের প্রথম দিন থেকেই রাজধানীর বাতাসে অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ের ধূলিকণার উপস্থিতি পেয়েছে অধিদফতর।

১ নভেম্বর বাতাসে ধূলিকণার মাত্রা ছিল ১৬৪ পিপিএম, ২ ছিল নভেম্বর ২২৬ পিপিএম। গত ১৪ ও ১০ নভেম্বর রাজধানীর বাতাসে ৩২০ ও ৩৬৫ পিপিএম পর্যন্ত ধূলিকণার উপস্থিতি পাওয়া গেছে যা মানুষের জন্য চরম পর্যায়ের অস্বাস্থ্যকর বলে ধরা হয়। এর আগের তিন দিন এই মাত্রা ছিল যথাক্রমে ২৩১ পিপিএম, ২৭৭ পিপিএম ও ২৬৮ পিপিএম যা খুবই অস্বাস্থ্যকর বায়ু হিসেবে চিহ্নিত।

পরিবেশবিজ্ঞানীদের মতে, ডিএসসিসির ঘোষণা অনুযায়ী, দিনে দুইবার যদি রাজধানীতে পানি ছিটানো হয়, তাহলে বাতাসে ক্ষতিকর ধুলার মাত্রা এমন পাওয়া যেত না।

গত বছর নভেম্বরে রাজধানীর ৫ অঞ্চলে দিনে ২ বার পানি ছিটাতে ৯টি ওয়াটার বাউজার মেশিনের উদ্বোধন করেন ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। ঘোষণা ছিল প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এবং দুপুর ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ডিএসসিসির ৫টি অঞ্চলে ভাগ করে রাস্তায় পানি ছিটানো হবে। এর অংশ হিসেবে অঞ্চল-১-এর আওতায় বাংলামোটর থেকে শাহবাগ হয়ে শিক্ষা ভবন, জিরো পয়েন্ট জিপিও হয়ে বঙ্গভবন এবং ধানমন্ডি ২৭ থেকে ল্যাবএইড হয়ে নীলক্ষেত পর্যন্ত।

মগবাজার চৌরাস্তা ফ্লাইওভার থেকে কাকরাইল-হেয়ার রোড হয়ে মিন্টু রোড মোড় পর্যন্ত এবং শাহবাগ থেকে এলিফ্যান্ট রোড হয়ে সায়েন্স ল্যাব মোড় পর্যন্ত পানি ছিটানোর কথা। গতকাল শুক্রবার এই অঞ্চলগুলো সকাল ও দুপুর উভয় সময়ে ঘুরে পানি ছিটানোর কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেও পানি ছিটানোর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

ধানমন্ডি ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনের চায়ের দোকানদার মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টায় দোকান খুলি, সকালে পানি ছিটানো হলে তো আমার চোখে পড়বে। আর দুপুরে তো ছিটানোই হয় না।

একই রকম তথ্য দেন মগবাজার চৌরাস্তার মোটরমেকানিক শরিফুলও। তিনি বলেন, নিজেদের দোকানের সামনের ধুলা মারতে আমরাই দিনে কয়েকবার পানি ছিটাই। সিটি করপোরেশনের কোনো গাড়ি এখানে পানি ছিটায় না।

ডিএসসিসি অঞ্চল-১-এর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই আমাদের গাড়িগুলো পানি ছিটানোর কাজ করছে। যানজটের কারণে কখনো কখনো শেষ রাতের দিকে এই কার্যক্রম চলে। তবে দুপুরে যেসব রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট থাকে সেগুলোতে পানি ছিটানো প্রতিদিন সম্ভব হয় না।

পরিবেশ আন্দোলন বাংলাদেশের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, সিটি করপোরেশনের ঘোষণা অনুযায়ী যদি নিয়মিত পানি ছিটানো হতো তাহলে বাতাসে ধূলিকণার এমন ক্ষতিকর মাত্রার উপস্থিতি পাওয়া যেত না। যদি ডিএসসিসি নিয়মিত এই কাজ করছে বলে দাবি করে তাহলে তারা মিথ্যা কথা বলছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!