• ঢাকা
  • বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষতিকারক হাই-হিল


লাইফস্টাইল ডেস্ক জুলাই ২১, ২০১৮, ০১:৩৩ পিএম
ক্ষতিকারক হাই-হিল

ঢাকা : প্রতিদিনের জীবনে হাঁটাহাঁটির ক্ষেত্রে সামান্য উঁচু বা ফ্ল্যাট জুতাই ভালো। কারণ, শারীরিক সুস্থতা না থাকলে সৌন্দর্য অধরাই থেকে যাবে। কিন্তু ফ্যাশন-সচেতন নারীরা অস্বাভাবিক উঁচু হিল পড়ে। নিজেকে একটু লম্বা বা পা দুটোকে সেক্সি ও সুন্দর দেখানোর জন্য৷ পোশাকের সঙ্গে মানানসই হাই-হিল জুতা তাদের চাই-ই চাই।

র‌্যাম্প মডেল থেকে শুরু করে সাধারণ নারীরা সবাই পরেন এ জুতা। কিন্তু সৌন্দর্যবর্ধক এ নিরীহ বস্তুটি হাঁটু ও পায়ের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। কারণ অস্বাভাবিক উঁচু হিল পরায় গোড়ালিও উঁচু হয়ে থাকে। যখন-তখন এদিক-সেদিক বেঁকে যায় পা। ফলে হাঁটুতে অস্বাভাবিক চাপ পড়ে। ক্ষয় হতে থাকে হাঁটুর মালইচাকির পেছনের কার্টিলেজ। ফলে অল্প বয়সেই অস্টিওআর্থ্রাইটিস দেখা দিয়ে থাকে।

গবেষণায় দেখা গেছে, গোড়ালি, হাঁটু ও কোমর ঠিক রাখতে নারীদের জন্য তৈরি জুতা বা ব্যাকস্ট্র্যাপ দেওয়া কম হিলের জুতা সবচেয়ে ভালো। হিল পরার ইচ্ছা হতেই পারে। তবে সতর্কতা প্রয়োজন। যেখানে অল্প হাঁটতে হবে, সেখানে উঁচু হিল পরিধান করা যেতে পারে। কিন্তু প্রাত্যহিক জীবনে হাঁটাহাঁটির ক্ষেত্রে সামান্য উঁচু বা ফ্ল্যাট জুতা ভালো। কারণ শারীরিক সুস্থতা না থাকলে সৌন্দর্য অধরাই থেকে যাবে। আসুন জেনে নিই নিয়মিত হাইহিল ব্যবহারে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

পায়ের জয়েন্টে ব্যথা : অন্যান্য জুতার মতো হাই হিল জুতায় কোনো অভিঘাত শোষণ করার ক্ষমতা থাকে না।  এ ছাড়া চলার সময় শুধু সামনের দিক ছাড়া পায়ের পাশের দিকটা আড়ষ্ট করে দেয় হাই হিল জুতা। এতে পা শুধু সোজা রাখা যায়। তাই পদক্ষেপের সমস্ত আঘাত এসে পড়ে হাঁটুর ওপর। এটি থেকেই শুরু হয় পায়ের ছোট ছোট জয়েন্টে ব্যথা এবং আর্থ্রাইটিসের সমস্যা। তবে হিলের কারণে শুধু হাঁটুর ওপর না, গোড়ালির ওপরেও অতিরিক্ত চাপ পড়ে। কাজেই সারা দিন হাই হিল পরে কাটানোর পরে পায়ের প্রতিটি জয়েন্টে ব্যথা হওয়াটাই স্বাভাবিক।

পায়ের পেশির সমস্যা : এটা হিল জুতার পরার সবচেয়ে খারাপ দিক। দীর্ঘ সময় ধরে হিল জুতা ব্যবহার করলে গোড়ালি অনেকটা উঁচু হয়ে থাকে। এতে গোড়ালির সঙ্গে যে পেশিগুলো টেনডনের মাধ্যমে যুক্ত, সেগুলো ছোট হয়ে যায় এবং পেশিগুলোর ভেতরে নানা পরিবর্তন হতে শুরু করে। এতে প্লান্টার ফ্যাসাইটিস এবং একিয়ালিস টেন্ডিনাইটিস নামে রোগ দেখা দিতে পারে।

কোমরে ব্যথা : হাই হিল জুতা আপনার গোড়ালিকে উঁচু রেখে কোমরকে অস্বাভাবিকভাবে সামনে ঠেলে রাখে। প্রকৃতির নিয়মের বিপরীতে দীর্ঘদিন ধরে এমন অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে হাঁটাচালার কারণে মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বক্রতা নষ্ট হয়ে কোমরে প্রচণ্ড ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে।

পায়ের পাতা শক্ত হয়ে যায় : প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে গোড়ালি শরীরের সমস্ত ভার বহন করে। সেখানে পায়ের পাতা আপনাকে ভারসাম্য দেয় তার নরম প্যাডের মাধ্যমে। তবে হাই হিল প্রকৃতির এই স্বাভাবিক নিয়মকে লঙ্ঘন করে। উল্টো করে দেয় গোড়ালি আর পায়ের পাতার কাজ। আসলে হাই হিল পরার সময় পায়ের পাতা নেয় সমস্ত শরীরের ভার, আর গোড়ালি তখন সহায়ক হয় মাত্র। এতে ধীরে ধীরে পায়ের পাতা থেকে এই প্যাডের মতো মাংসল অংশটি সরে যায় বা ক্ষয়ে যায়।

গোড়ালির সমস্যা : খালি পায়ে হাঁটলে পায়ের পাতা ও গোড়ালির ওপর দেহের ওজনের ভারসাম্য বজায় থাকে। এতে গোড়ালির অস্থিসন্ধিতে কম চাপ পড়ে। তবে হাই হিল জুতা পরলে পায়ের পাতা ও গোড়ালির ভারসাম্য নষ্ট হয়, সেইসঙ্গে গোড়ালির অস্থিসন্ধিতে এসে পড়ে পুরো শরীরের ভার। এতে স্বাভাবিকভাবেই গোড়ালি মচকে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে এবং সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড যন্ত্রণার।

নখকুনির সমস্যা : এ সমস্যায় প্রায় অনেকেই ভুগে থাকেন। সাধারণত হাই হিল জুতার সামনের দিকটি ছড়ানো না হয়ে নৌকার মতো সরু হয়। উল্টো দিকে, আপনার আঙুলগুলো খানিকটা চৌকা আকারের হয়ে থাকে। এতে সারা শরীরের ভার আঙুলগুলোকে আরো বাইরের দিকে ঠেলতে থাকে। এতে নখকুনি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। অর্থাৎ পায়ের নখ, মূলত বুড়ো আঙুলের নখ সোজা না বেড়ে ঢুকে যায় আঙুলের মাংসের ভেতরে। আর এমনটা হলে কেমন যন্ত্রণা হতে পারে, তা নিশ্চয় আপনার জানা আছে।

হাঁটুর ভীষণ ক্ষতি : হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত হাই হিল জুতো পরলে হাঁটুতে চাপ পড়ে। স্বাভাবিকের চেয়ে মাত্র ৫ সেন্টিমিটার উঁচু হিলের স্যান্ডেল পরলেই হাঁটুতে অন্তত ২৩ শতাংশ চাপ বেড়ে যায়। বেশিদিন হাঁটুতে অতিরিক্ত চাপ পড়ার কারণে অনেকের অস্টিওআর্থ্রাইটিস হতে পারে। পুরুষের চেয়ে মেয়েদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দ্বিগুণেরও বেশি৷

ঘাড়ে ব্যথা: হাই হিল জুতো শুধু মেরুদণ্ড, শ্রোণী এবং পা নয়, ঘাড়েরও ক্ষতি করে৷ পায়ে হাই হিল থাকায় মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক অবস্থান বদলে যায়৷ ঘাড়ে এর প্রভাব পড়ে। অনেক সময় ঘাড়ে ব্যথা হয়। আবার ঘাড়ের পেশিরও ক্ষতি করে হাই হিলের জুতো।
সোনালীনিউজ/আরজে

Wordbridge School
Link copied!