• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষমা করে দেয়া মুমিনের গুণ


ধর্মচিন্তা ডেস্ক মে ৫, ২০১৭, ১০:৪৯ এএম
ক্ষমা করে দেয়া মুমিনের গুণ

ঢাকা : সৃষ্টিগতভাবে পার্থিব জগত ত্রুটিযুক্ত। যেভাবে মানুষ সৃষ্টিগতভাবে অপূর্ণ, ত্রুটিযুক্ত। সবসময় অঘটন আর ঝামেলা লেগেই থাকে মানুষের জীবনে। এসব ঝামেলায় জড়িয়ে জেনে হোক, না জেনে হোক, ইচ্ছা কি অনিচ্ছায় হোক- অনিবার্যভাবে একজন আরেকজনের মনে কষ্ট দিয়ে থাকেন।

এমনকি অনেকে নিজ পরিবারের লোক দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এমতাবস্থায় সবচেয়ে কঠিন বিষয়টি হলো- অন্যায়কারীর অপরাধকে ক্ষমা করতে শেখা। এটা অনেকটা নিষ্ঠুরের প্রতি দয়ার্দ্র আচরণ করার মতো।

আমরা জানি, দুনিয়ার নিয়মে কষ্ট ছাড়া কখনও কোনো অগ্রগতি আসেনি। আর সাফল্যের একমাত্র পথ হলো- সংগ্রাম-সাধনা। এটা মনেপ্রাণে উপলব্ধি করতে হবে, জীবনটা সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ এটা বুঝতে হবে।

জীবনে কষ্ট ভোগ করা নতুন কিছু নয়। এটা নবী-রাসূলদের জীবনে আমরা দেখতে পাই। হজরত নূহ (আ.) তার জাতির লোকদের দ্বারা ৯৫০ বছর ধরে কষ্টের স্বীকার হয়েছিলেন। কোরআনে কারিমে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায়ও অস্বীকার করেছিল। তারা আমার বান্দাকে অস্বীকার করেছিল এবং এবং বলেছিল- পাগল। আর তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল।’ -সূরা আল কামার: ৯

শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কথাই ধরুন। কীভাবে তাকে পাথর মেরে রক্তাক্ত করা হয়েছিল, কীভাবে তার সাহাবিদের প্রহার করা হয়েছিল, কীভাবে তারা অনাহারে দিন পার করেছিলেন। অন্য মানুষরাই তাদেরকে এভাবে কষ্ট দিয়েছিল।

মানুষের একে অপরের বিরুদ্ধে ঘৃণিত অপরাধ সংঘটনের এই প্রবণতা একটি দুঃখজনক বাস্তবতা। দুনিয়াতে প্রচুর মানুষ প্রতিনিয়ত দুঃখকষ্টের শিকার হয়। এমন মানুষ খুব কমই আছে, যে বলতে পারে- তিনি কোনোদিন কোনোভাবে অন্য কারো দ্বারা কষ্ট পাননি।

দুনিয়ার এই কঠিন বাস্তবতা এড়ানো অসম্ভব। তবে ঘটনার প্রতিক্রিয়া, মনোযোগ ও পরিস্থিতির আলোকে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষতি কিংবা ধ্বংসযজ্ঞ এড়ানো সম্ভব। উদাহারনস্বরূপ বলা যায়, কোনো বিষয়ের জন্য পরিপূর্ণ আশা, ভরসা, বিশ্বাস- অন্য মানুষের ওপর করা বোকামি। আমাদের মনে রাখতে হবে, ভুল করা মানুষের সৃষ্টিগত স্বভাব। তাই আমাদের চূড়ান্ত বিশ্বাস, আস্থা এবং প্রত্যাশা শুধুমাত্র আল্লাহর প্রতি সমর্পণ করতে হবে সর্বার্গ্রে।

এ কথা বলার অর্থ কিন্তু এই নয় যে, মানুষকে বিশ্বাস করা যাবে না, তার ওপর ভরসা করা যাবে না; কিছু আশা করা যাবে না। আসলে সবই করা যাবে- শুধু অগ্রাধিকার দিতে হবে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসকে।

তারপরও যদি অন্যের দ্বারা মানুষ আঘাত বা কষ্ট পায়- তাহলে তাকে ক্ষমা করে দিতে হবে, মনের ক্ষতগুলোকে পুষে না রেখে সারিয়ে তুলতে হবে, তার সঙ্গে সদাচরণ বজায় রাখতে হবে। মুমিন হওয়ার মূলেই হলো- ক্ষমা করে দেওয়া। এমন মুমিনের বর্ণনা দিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যারা গুরুতর পাপ ও অশ্লীল কার্যকলাপ থেকে বেঁচে থাকে এবং যখন রাগান্বিত হয় তখন তারা ক্ষমা করে দেয়।’ -সূরা আশ শূরা: ৩৭

‘আমি নিজেও ভুল করি- অন্যদের কষ্ট দেই’ নিজের সম্পর্কে এটা ভেবে অন্যকে তাৎক্ষনিকভাবে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। সবচেয়ে বড় কথা হলো- এভাবে ক্ষমা করার মাধ্যমে মানুষের এটা মনে রাখা উচিত যে, আমরাও প্রতিদিন পাপ করার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি অন্যায় করছি। সেই তুলনায় মানুষের এসব ছোটখাটো ভুল তো কিছুই না। আল্লাহ যেহেতু আমাদের ক্ষমা করছেন, তাহলে আমি কেন ক্ষমা করতে পারবো না? নিজেরা যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাওয়ার আশা করি- তাহলে আমরা অন্যদেরকে ক্ষমা করতে পারি না কেন? আর এ কারণেই নবী করিম (সা.) আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, ‘যারা অন্যের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহও তাদের প্রতি দয়া করবেন না।’ -সহিহ মুসলিম

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!