• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষুদ্রঋণ সুদ ব্যবসা এবং দারিদ্র্য


শাবলু শাহাবউদ্দিন অক্টোবর ১৬, ২০২০, ১১:৪৯ এএম
ক্ষুদ্রঋণ সুদ ব্যবসা এবং দারিদ্র্য

ঢাকা : বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। ২০১৯ সাল অর্থাৎ করোনার আগে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ছিল ১৯ শতাংশ, এ দারিদ্র্যের হার ২০০১ সালে ছিল ৪৮.১ শতাংশ। বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও সঠিকভাবে জনসাধারণকে পথ দেখিয়ে এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে হয়তো এতটা সফলতা অর্জন করতে পেরেছিল। কিন্তু করোনা এসে সব বিফলে চলে গেল।

করোনার সময় গবেষণা করেছে বাংলাদেশের সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, করোনার কারণে আবার দারিদ্র্য হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ফলাফলের চিত্র তুলনামূলক অনেক তফাত। সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুসারে করোনায় দারিদ্র্য হার বেড়ে ২৯ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপিআরসি’র গবেষণায় উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র। তাদের গবেষণা বলছে, দেশে এখন দারিদ্র্যের হার ৪৩ শতাংশ। যার একই চিত্র দেখা গেছে অন্য একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইজিডি’র গবেষণাপত্রে। এদিকে সিপিডি বলেছে, দেশে এখন দারিদ্র্যের হার ৩৫ শতাংশ। ভিন্ন গবেষণাপত্রে ভিন্ন ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে। আর যাই হোক, দারিদ্র্যের হার যে বৃদ্ধি পেয়েছে এটা নিশ্চিত। এই দারিদ্র্যের হার এখন কমানোই হলো বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রধান কাজ। ২০০১ সালের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশ সরকার অতি সফলভাবে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে এনেছিল। দুই দশকে দারিদ্র্যের হার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সব ভেস্তে গেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, পরিবারভিত্তিক মাসিক আয় কমেছে প্রায় ৪ হাজার টাকা। শতকরা আয় কমেছে ২০ শতাংশ লোকের। বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ গুণ। করোনার আগে গরিব মানুষ ছিল প্রায় ৩ কোটি। করোনার জন্য নতুন গরিব হয়েছে আরো ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ। শহরের চাকরি হারিয়ে দলে দলে মানুষ ফিরেছে গ্রামে। কত মানুষ শহর ছেড়েছে তার সঠিক হিসাব এখন বলা দুষ্কর। অনুমান করা হচ্ছে প্রায় ২০-২৫ শতাংশ লোক শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। আবার গ্রামে ফিরে এসেও মানুষ মুক্তি পাচ্ছে না অর্থকষ্ট থেকে। কারো কিছু সঞ্চয় থাকলে সেটা ভেঙে খাচ্ছে। আর যাদের সেটাও শেষ তারা আছে মহাবিপদে। এই বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য ছুটে আসছে নামে-বেনামে অসংখ্য ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসায়ী। মধ্য যুগের মতো অভিনব পদ্ধতিতে উত্থান হয়েছে সুদ মহাজনের। গ্রাম এবং পরিবেশভেদে সুদের হার ভিন্ন থেকে ভিন্ন হচ্ছে। সুদের মহাজনরা এক হাজার টাকার বিনিময়ে মাসিক সুদ নিচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। কোথাও কোথাও এ হার একটু কম। যেখানে কম সেখানে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে প্রতি মাসে এক হাজার টাকায়।

ক্ষুদ্রঋণ আরো বিশাল বিপদে ফেলেছে গ্রামের মানুষগুলোকে। ট্রেনিং এবং পরিকল্পনা না নিয়ে দেওয়া হচ্ছে ক্ষুদ্রঋণ। জামানত হিসেবে নেওয়া হচ্ছে বসতবাড়ির জমির দলিল। যাদের বসতবাড়ির দলিল নেই, তাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে শক্ত স্টেটমেন্ট। পারিবারিক অবস্থাভেদে ৫০ হাজার থেকে দেওয়া হচ্ছে ১ লাখ টাকার মতো ক্ষুদ্রঋণ। গ্রামের সহজ-সরল মানুষগুলো একাধিক ক্ষুদ্রঋণের সংস্থা থেকে খুব সহজেই পেয়ে যাচ্ছে এই ঋণ। তবে এই ঋণের সুদূরপ্রসারী ফলাফল হচ্ছে দারিদ্র্য বৃদ্ধিকরণ। কারণ প্রশিক্ষণবিহীন ঋণ পেতে গ্রামের সহজ-সরল মানুষ ঋণের টাকার যথার্থ ব্যবহার করতে পারছে না। ঋণও পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামের কর্মহীন মানুষগুলো। ধীরে ধীরে দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে এই অপরিকল্পিত ঋণ ব্যবস্থার জন্য।

এই ধরনের ঋণের বোঝা একদিন গ্রামের মানুষগুলোকে করে তুলবে বাস্তুহারা। বাংলাদেশ এমনিতেই বিশ্বের দ্বিতীয় বাস্তুহারা দেশ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টারের (আইডিএমসি) তথ্যমতে, বাংলাদেশে এখন ২৫ লাখ ২০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত। আইডিএমসির তথ্যমতে, ভারত বিশ্বের নাম্বার ওয়ান বাস্তুচ্যুত মানুষের দেশ এবং বাংলাদেশ দ্বিতীয় সেই তালিকায়। করোনার কারণে এই চিত্র আরো সামনে বৃদ্ধি পেতে পারে। ক্ষুদ্রঋণ, সুদি মহাজনদের কারসাজিতে এবং কর্মহীনতা মানুষের দারিদ্র্য কত খারাপ দিকে নিয়ে যাবে, সেটা কল্পনার বাইরে। সঙ্গে আছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ।

সুতরাং এখনই উপযুক্ত সময় গ্রামে গ্রামে মনিটরিং করে অসাধু ক্ষুদ্রঋণ ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করে যথার্থ ব্যবস্থা নেওয়া। তা না হলে গরিব মানুষকে আরো গরিব করে তুলবে, ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে সরকারের দারিদ্র্যবিমোচন প্রকল্প। অতএব জনবান্ধব সরকারকে অনুরোধ করব, এখনই এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!