• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে অগ্রগতি নেই


বিশেষ প্রতিনিধি জুলাই ২০, ২০১৮, ০২:৫২ পিএম
কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে অগ্রগতি নেই

ঢাকা : বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে দেশে এক ডজন কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা বাস্তবায়নে তেমন অগ্রগতি নেই। বরং পাইপলাইনে থাকা ১২টি কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ৩টির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বাকি ৯টির এখনো দরপত্র আহ্বান করাই সম্ভব হয়নি। আর নির্মাণাধীন ৩ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে দুটির কাজ যথাযথ চললেও আরেকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে চলছে ধীরগতি। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোড (বিপিডিবি) সঙ্গে যেসব কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সমঝোতা স্মারক বা এমওইউ হয়েছে, তার সবগুলোই চলছে ঢিমেতালে। মহেশখালীতেই পিডিবি সিঙ্গাপুরের সেম্বকর্প, মালয়েশিয়ার তেনেগা বারহেডের সঙ্গে দুটি পৃথক ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি করেছে। তাছাড়া চীনের হুদিয়ান হংকং সিএইডিএইচকের সঙ্গে যৗথ মূলধনী কোম্পানি গঠন চুক্তি করেছে। সিএইডিএইচকের সঙ্গে ২০১২ সালে এমওইউ সই করেছেন পিডিবি। আর কোরিয়ার কেপকোরের সঙ্গে পিডিবির এমওইউ রয়েছে।

তাছাড়া রুরাল পাওয়ার কোম্পানি পায়রাতে ১৩২০ মেগাওয়াট এবং মুন্সীগঞ্জে-৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন ও পায়রাতে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র নির্মাণের চেষ্টা করছে। ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি মুন্সীগঞ্জে একটি কেন্দ্র নির্মাণের চেষ্টা করছে। তবে ওই ৪ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটিরও এমওইউ, চুক্তি বা অর্থ সংস্থান কিছুই হয়নি।

সূত্র জানায়, কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজের মধ্যে বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) পায়রা-১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে ৪৪ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী বছরের মাঝামাঝিতে ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৬২০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে। আর আগামী বছরের শেষের দিকে দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণ কৌশলে ঠিকাদারকে অগ্রিম ১৫ ভাগ অর্থ ব্যয়ের শর্ত দেয়া হয়েছিল। যাতে করে কেন্দ্রের চুক্তি হওয়ার পরপরই কাজ শুরু করা সম্ভব হয়েছে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড় হয়। যদিও অর্থ ছাড়ের আগেই কেন্দ্রের অন্তত ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ করেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এনইপিসি। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চায়না এক্সিম ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় নির্মাণ করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি (এনডব্লিপিজিসিএল) এবং চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি) মিলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। তাছাড়া জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে মাতারবাড়িতে নির্মাণ করা হচ্ছে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের কয়লাচালিত কেন্দ্র। গত আগস্টে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে জাপানের সুমিতমোরের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি করে রাষ্ট্রীয় কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ভ‚মি উন্নয়নের কাজ প্রায় শেষপর্যায়ে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সঙ্গে ৭ কিলোমিটারের একটি চ্যানেলও খনন করা হবে। ওই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া সেখানে একটি কয়লাবন্দর নির্মাণ করার জন্যও সমীক্ষা করা হচ্ছে। সরকারের ভবিষ্যত পরিকল্পনায় ১০ হাজার মেগাওয়াটের কয়লা খালাসে উপযুক্ত বন্দর নির্মাণ করার কথা বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য গতবছরের মার্চে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র আহ্বানের পর গুলশান ট্র্যাজেডিতে জাপানি নাগরিক নিহত হলে প্রকল্পের কাজ কিছুটা পিছিয়ে যায়। কেন্দ্রটি ২০২৪ সালে উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে।

ইতিমধ্যে কেন্দ্রটির ভূমি উন্নয়নের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। ভূমি উন্নয়নের পর কেন্দ্রের নক্সার কাজে হাত দেয়া হবে। আর নক্সা অনুযায়ীই যন্ত্রপাতি কেনা হবে। আর নক্সা করার সময়ই কেন্দ্রের ফাউন্ডেশনের কাজেও হাত দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে নক্সা প্রণয়ন, যন্ত্রাংশ আমদানি আর কেন্দ্রের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করা হবে। আশা করা হচ্ছে ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে। আর ২০২৪ সালে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসবে।

সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানি (বিআইএফসিএল) পরিবেশবাদীদের প্রতিবাদের মধ্যেই সুন্দরবনের পাশে রামপাল এলাকায় এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। তাতে ভারতের কোম্পানি হেবি ইলেক্ট্রিক ভেল কোম্পানিটির নির্মাণ ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে। তবে অভিযোগ উঠেছে- প্রকল্প এলাকায় যে মাটি ভরাট করা হয়েছে, তা অত্যন্ত নিম্নমানের। এমন পরিস্থিতিতে প্রকল্প এলাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে হলে ওপরের মাটি কেটে ফেলতে হবে। তাছাড়া প্রকল্প এলাকায় ২৮ হাজার পাইলিং করতে হবে। অথচ পায়রাতে ৮ হাজার পাইলিং করা হয়েছে। রামপালে ৩ গুণের বেশি পাইলিং লাগায় খরচ বাড়বে। এরই মধ্যে আবার রডের দাম ৪২ ভাগ বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বড় সংকটের মুখোমুখি হয়েছে।

এদিকে দেশের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী জানান, সরকার জ্বালানি সংকট মোকাবেলার জন্য এলএনজি আমদানি করছে। এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বিষয়েও জোর দিতে হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!