• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কয়েক ঘন্টা আগে আমার সাথে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা


সোনালীনিউজ ডেস্ক জুন ৪, ২০১৯, ১২:১৩ পিএম
কয়েক ঘন্টা আগে আমার সাথে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা

গতকাল রাতে লালমনির হাট থেকে "মানিক ট্রাভেলস" ( ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৭৭৫৬)
এর এই এসি বাসে করে আমি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। বাস ৯ঃ৩০ এ ছাড়ার কথা থাকলেও বাস লেট করে ছাড়ে ১১ঃ৩০ এ। বলে রাখি আমার সিট ছিলো G-1, আমার পেছনে আর কোনো যাত্রী ছিলোনা। রাত্রে ৩ টায় বাসটি যাত্রাকালীন বিরতির জন্য বাগুরার একটি হোটেলে থামায়। তখন আমি বাসের নাম্বার প্লেট টার ছবি তুলে রাখি। এটা আমার অভ্যাস, আমি দূরের যাত্রার সময় যাত্রা বিরতিতে নেমে বাস এর নম্বর প্লেট এর ছবি তুলে রাখি যেন বাস ভুলে না যাই। যাত্রা বিরতি শেষে বাস আবার রওনা দিল। সকাল ৮ টার দিকে বাস টাংগাইলে এক পেট্রোল পাম্প এ দার করায় যাত্রীদের টয়লেটে এ যাওয়ার জন্য, আমিও নামলাম, টয়লেট থেকে বের হয়ে বাস এর দিকে তাকিয়ে দেখি বাস ছেড়ে দিচ্ছে, আমি দৌরে বাসের কাছে আসতে আসতেই বাস আমাকে রেখে চলে গেলো। আমার পকেটে মোবাইল ছাড়া কিছুই নেই। আমার ব্যাগ বাসের ভেতরে, এমনকি আমার মানিব্যাগটাও বাসে আমার ব্যাগের ভেতর। 

কি করি, মাথা কাজ করছে না, সিদ্ধান্ত নিলাম যেভাবেই হোক বাসটা আমাকে ধরতেই হবে। প্রথমে একটা এম্বুলেন্স থামানোর চেষ্টা করলাম, থামলোনা, তারপর "নাবিল ট্রাভেলস" এর একটি বাস থামলো, লাফ দিয়ে উঠে গেলাম বাসের ড্রাইভার আর হেল্পার কে খুলে বললাম ঘটনা, রাস্তা ফাকা থাকায় ড্রাইভার খুব টেনে বাস চালাতে লাগলো, এবার ড্রাইভার বলে ভাড়া দিবেন কি করে, আপনার কাছে তো টাকা নেই, আমার বিকাশে কিছু টাকা ছিলো, ড্রাইভার কে বললাম " মামা বিকাশ আছে? , হ্যা মামা আছে।, আমি ড্রাইভারের বিকাশে ভাড়া দিয়ে দিলাম ৩০০ টাকা। অবশেষে সাভারে এসে আমি মানিকের বাসটি ধরতে পারি।

বাসে ঢুকে দেখি, হুম, যা ভাবছিলাম তাই, আমার ব্যাগের পোস্টমর্টেম করা হয়ে গেছে, ব্যাগ আমার পেছনের সিটে ফেলে রাখা, দেখলাম আমার সানগ্লাস এর বক্স টা আমার সিটের পায়ের কাছে পরে আছে, আমার সিটের পাসের সিটে আরেকজন বসে আছে, উনি আগে বাসে ছিলেন না, উনি টাংগাইল থেকেই বাসে উঠেছে, ব্যাগে আমার মানিব্যাগ নাই, ব্যাগের ভেতরের পকেটে এক্সট্রা ২০০০ টাকা ছিলো সেটা নাই, পাওয়ার ব্যাংক নাই, এছাড়া ব্যাগের আর কিছু নেয়া হয়। এবার হেল্পার আর সুপারভাইজার কে ডাকলাম, আমি বললাম সবার ব্যাগ সার্চ করতে, কিন্তু আমার সন্দেহ ছিলো এটা হেল্পার ব্যাটার কাজ। 

ব্যাগ সার্চ করার আগে আমি বাস এর পেছনের অন্যান্য সিট গুলি সার্চ করতে শুরু করলাম, আমার ধারনা ছিলো হেল্পার যদি এই কাজ করে তাহলে ও হয়তো বাসের কোনো চিপায় এগুলি লুকায় রাখবে। আমার ধারনা সত্যি হলো মানিব্যাগ আর পাওয়ার ব্যাংক আবিষ্কার করলাম বাসের পেছনের দিকে বাংকারে( সিটের উপরে ব্যাগ রাখার যায়গায়) মানিব্যাগ আছে কিন্তু ব্যাগে টাকা নাই,। এবার সুপার ভাইজার কে চাপ দিতেই ওর অবস্থা কাহিল বুঝলাম এটা ওর কাজ না। কারন ওর কথাতে সত্যতা পাচ্ছিলাম, তবে হ্যা দোষ টা তারই, তার বাস ছাড়ার আগে অবশ্যই দেখে নেয়া উচিৎ ছিলো সব যাত্রী বাসে ঊঠেছে কিনা। কাহিনি হলো সে টাংগাইলে সেই পেট্রোল পাম্প থেকে আরেকজন যাত্রী বাসে তুলেছে, বাসে আমরা সর্বমোট যাত্রী ছিলাম ২২ জন। নতুন যাত্রী তুলে সে মাথা গুনে ২২ জন মিলিয়ে বাস ছেড়ে দিয়েছে, আমি যে বাসে নাই সেটা আর তার মনে নাই। আর এই সুযোগ এ আমার সব চুরি করা হয়েছে, প্রথমে আমার সিটের পাশে যে নতুন যাত্রী বসে ছিলো তাকে সন্দেহ করছিলাম, কিন্তু উনি নিজে থেকেই আমাকে তার ব্যাগ খুলে দেখালেন এবং আমাকেও সহযোগিতা করলেন। 

কিন্তু আমার কথা হলো এসি বাসে এভাবে মাঝ রাস্তা থেকে লোকাল যাত্রী তুলবে কেন? শেষ মেশ চাকরি বাচানোর ভয়ে সুপারভাইজার আমাকে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হলো। আমার ব্যাগে ছিলো ২০০০ টাকা, মানিব্যাগে ছিলো ৩০০ টাকা আর আমি ৩০০ টাকা বাস ভারা দিতে সাভার এসে বাস ধরলাম, মোট = ২৬০০ টাকা আমার ক্ষতি হলো। শেষে সুপারভাইজার ১৫০০ টাকা আমাকে দিয়ে আমার হাতে পাতে ধরে মাফ চাওয়া শুরু করলো। সে না হয় মাফ করলাম, কিন্তু যদি আমার পুরো ব্যাগ টাই হারিয়ে যেতো, সেটার ক্ষতিপূরণ কিভাবে দিতো? আমার ব্যাগে, এটিএম কার্ড, চেক বুক, ন্যাশনাল আইডি কার্ড, সহো আরো গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিলো এগুলির ক্ষতিপূরণ কি টাকা দিয়ে হোতো?? আল্লাহ আমার সহায় ছিল জন্য আমি সাভার এসে বাস টাকে ধরতে পারছি, যদি সাভার এসে ধরতে না পারতাম,? যদি অন্য কোনো লোক তার আগেই ব্যাগ নিয়ে নেমে যেত? তখন কি করতাম আমি? আমার কিছুই করার ছিলোনা। কারন আমি যে অই বাসের যাত্রী তার কোন প্রমান আমার কাছে ছিলো না। আমার বাসের টিকিট টা পর্যন্ত ছিলো ব্যাগের ভেতরে। শুধু নম্বর প্লেটের ছবি তোলা ছিলো, যেটা কিয়া আমি কখনই প্রমান করতে পারতাম না যে আমি ওই বাসের যাত্রী। তাই বাসে এই ঈদে যারা দূরে যাচ্ছেন, তারা অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করে চলবেন।

#যা_যা_করবেনঃ
১ঃ বাসের টিকিটের একটা ছবি তুলে রাখবেন, যেন টিকিট কোনো কারনে হারিয়ে গেলেও আপনার কাছে একটা প্রমান থাকে।

২ঃ যে বাসে যাচ্ছেন বাসে ওঠার পরে সুপারভাইজার এর নম্বর টা নিয়ে রাখেন, যেনো এমন পরিস্থিতিতে আপনি সরাসরি সুপারভাইজার কে কল দিতে পারেন।

৩ঃ যাত্রা বিরতিতে বাস থেকে নামলে অন্ততপক্ষে মানিব্যাগটা সাথে রাখুন। বাসের নম্বর প্লেটের ছবি তুলে রাখুন।

৪ঃ বাসের টিকিট টাও মানিব্যাগেই রাখার চেষ্টা করুন।

৫ঃ কিছু টাকা মানিব্যাগ ছাড়াও প্যান্টের কোনো গোপন পকেটে রাখার চেষ্টা করুন। কারন এরকম বিপদে সাথে টাকা থাকলে সবথেকে দ্রুত সমাধানে যেতে পারবেন।ক্যাশ টাকা রাখবেন, আজ যদি ড্রাইভারের বিকাশ না থাকতো তাহলে আমার বিকাশে টাকা থাকা সর্তেও আমি আরেক ঝামেলায় পরতাম, নাবিলের বাস ভাড়া দিতে পারতাম না।

৬ঃ মাথা ঠান্ডা রাখুন ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিন। সিদ্ধান্ত নিতে যতো দেরি করবেন, পরিস্থিতি ততই আপনার আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে, ওরা হয়তো কখনই চিন্তা করে নাই যে, বাস ঢাকা পৌছনোর আগেই আমি বাসটা ধরতে পারবো।

৭ঃ সাবধানতা অবলম্বন করুন। আপনি হয়তো যে বিষয় টা গুরুত্বই দিবেন না, বিপদ সেখান থেকেই আস্তে পারে। মাত্র ৫ মিনিটের জন্য বাস থেকে নেমে আমি এমন বিপদে পড়বো এটা সত্যি আমার কল্পনার বাইরে ছিলো।

৮ঃ উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগান।

#যা_যা_করবেন_না

১ঃ ভয় পাবেন না, বা নার্ভাস হয়ে কান্না কাটি শুরু করবেন না। মাথা ঠান্ডা রেখে ভাবুন ওই পরিস্থিতিতে আপনার কি করা উচিৎ।

২ঃ ওই পরিস্থিতিতে অন্যের উপর ভরসা করে বসে থাকবেন না, নিজে কিছু করে সমাধানের পথ বের করার চেষ্টা করুন। এমনটা হতে পারে ওই অবস্থায় আপনি যাকে বিপদের বন্ধু ভাবছেন তাকে সাথে সাথে কাছে পাবেন না, হয়তো তার ফোন বন্ধ হতে পারে, হয়তো তারও সে মুহুর্তে আসার সুযোগ বা ইচ্ছা কোনোটাই নাও থাকতে পারে। অথবা সবার উপর ঘুম সত্য মনে করে আপনার সমস্যার কথা শুনে ফোন বন্ধ করে ঘুমিয়েও যেতে পারে। তখন এই বিষয় গুলি আরও বেশি মাথা খারাপের কারন হতে পারে। অভিগ্যতা থেকেই বলছি। আত্মনির্ভরশীলত হয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। একান্তই যদি না পারেন তখন অন্যের সরনাপন্ন হোন।

ভালো থাকবেন

(ফেসবুক থেকে নেওয়া)

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!