• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কয়েক বছরেই শত কোটি টাকার মালিক শ্রমিকলীগ নেতা চুন্নু!


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১২, ২০১৯, ০৫:৩৭ পিএম
কয়েক বছরেই শত কোটি টাকার মালিক শ্রমিকলীগ নেতা চুন্নু!

ঢাকা: দেলোয়ার হোসেন চুন্নু। একসময় চালাতেন রিক্সা। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। করেন নানান অপকর্ম।  এরপর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পরই ক্ষমতা পালাবদলের সাথে তিনিও খোলস পাল্টে বনে যান আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন শ্রমীক লীগ নেতা। চাঁদাবাজী থেকে দখলবাজী সব কিছুতেই সমান পারদর্শী তিনি।

স্থানীয় এক কাউন্সিলরকে হাত করে ফার্মগেট এলাকায় গড়ে তুলেছেন একক রাজত্ব। মূলত ওই কাউন্সিলরই তার ক্ষমতার মূল উৎস বলে জানা যায়। 

২০০৮ সালের আগে বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও তিনি এখন শ্রমীকলীগের প্রভাবশালী নেতা।  সবসময় চলেন কোমরে অস্ত্র নিয়ে। তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন ফার্মগেটের লেগুনা জাতীয় সকল গাড়িগুলো। গতবছর ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া যখন ঘোষণা দেন ঢাকায় কোন লেগুনা চলবেনা ঠিক কয়েকদিনের মাথায় চুন্নু স্থানীয় এক নেতার মাধ্যমে ডিএমপি কমিশনারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পূনরায় চালু করেন ফার্মগেটের লেগুনা পরিবহন গুলো। 

আর এই লেগুনা থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমান  চাঁদা তুলেন দেলোয়ার হোসেন  চুন্নু। ফার্মগেটের লেগুনা চলতে হলে  প্রতিদিন চুন্নুকে প্রায় ৩-৪ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হয় বলে জানান কামাল নামের এক লেগুনা ড্রাইবার। কামাল বলেন, 'আমরা সকল লেগুনা মিলে প্রতিদিন প্রায় ৩-৪ লাখ টাকা চাঁদা দিই চুন্নুকে।  দেখেননা গত বছর পুলিশ লেগুনা চলা নিষিদ্ধ করে দেয় কিন্তু এর পরই চুন্নু ভাই ইরান ভাইয়ের মাধ্যমে আমাদের লেগুনা গুলা চলার ব্যবস্থা করে দেন। যার ফলে আগের থেকে এখন আমাদের ডাবল চাঁদা দিতে হয়'।

ফার্মগেটের ফুটপাতের প্রত্যেক দোকান থেকে চাঁদা তুলেন চুন্নু।  গতবছর ডিএনসিসির উচ্ছেদ অভিযানের পর চুন্নু আবার ফুটপাতে দোকান  বসার ব্যবস্থা করে দেন বলে জানান ফার্মগেটের সেজান পয়েন্টের সামনের একজন হকার। রহিম নামের ওই হকার বলেন, 'গতবছর যখন সিটি কর্পোরেশন সারা ঢাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালান তখন চুন্নু আমাদের বসার ব্যবস্থা করে দেন, উচ্ছেদ অভিযানের আগে আমরা দোকান প্রতি প্রতিদিন ৫০-১০০ টাকা চাঁদা দিলেও উচ্ছ্বদ অভিযানের পর আমরা দোকান প্রতি চাঁদা দিতে হয় ৮০-২০০ টাকা প্রর্যন্ত। আর প্রতিদিন বিকালে চুন্নু এবং সবুজ নামের এক লোক আমাদের থেকে চাঁদা নিয়ে যান'।

শুধুমাত্র ফুটপাত কিংবা লেগুনার চাঁদাই নয় দখলবাজিতেও সমানে পারদর্শী চুন্নু। ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডের গ্লোব সেন্টারে দেলোয়ার হোসেন চুন্নু যে রুমটিকে অফিস বানিয়েছেন সেটাও দখল করা বলে জানা গেছে। গ্লোব সেন্টারের বেশ কয়েকটি দোকান চুন্নু জোর করে দখল করে আছেন বলে জানাযায়।  গ্লোব সেন্টার ছাড়াও ইন্দিরা রোডের মাহবুব প্লাজায় ও কয়েকটি রুম চুন্নু জোর করে দখল করে আছেন বলে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা নিশ্চিত করেছেন।   

চুন্নুর গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ। খোঁজ নিয়ে জানাযায়, কয়েকবছর আগেও চুন্নুদের থাকার মত ঘর না থাকলেও কয়েকবছরের মধ্যেই তিন তলার আলিশান বাড়ি করেন চুন্নু। চুন্নুর বাবা দিনমুজুরের কাজ করলেও এখন চলেন নিজের প্রাইভেট গাড়িতে। মা মানুষের বাসায় কাজ করতেন বলেও জানাযায়।  

চুন্নুর গ্রামের বাড়িতে তিনতলার আলিশান বাড়ি ছাড়াও বাড়ির আশে পাশে কয়েক বিগা জমি কিনেন তিনি। চুন্নুর নিজ গ্রাম নয়াকান্তির মোড়ের বাসিন্দা আব্দুল বারেক জানান, 'জুয়াড়ি মন্নাফ বেপারির ছেলে দেলোয়ার হোসেন চুন্নু একসময় রিক্সা চালাতেন পরে বিএনপির রাজনীতির জড়িত হোন, পরে ২০০৮ সালে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আশার পরই তিনি আংগুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যান। এখন গ্রামে আসলে তিনি কোমরে অস্ত্র নিয়ে ঘুরেন কেউ তার বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে সাহস পাননা। গ্রামের বাড়িতে প্রায় ৬-৭ কোটি টাকা ব্যায়ে তিন তলার আলিশান বাড়ি ছাড়াও কয়েক বিগা জমি কিনেন চুন্নু। শুনেছি ঢাকায়ও তিনি অনেক প্রভাবশালী নিজের ফ্লাট-গাড়ি সবই আছে তার'।

এই বিষয়ে জানতে চুন্নুর সাথে কথা বলতে তার অফিসে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি তার মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!