• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে সংলাপ ফলপ্রসূ হবে না


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ৩১, ২০১৮, ১১:০৬ পিএম
খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে সংলাপ ফলপ্রসূ হবে না

ঢাকা : খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে সংলাপ বা নির্বাচন কোনোটাই ফলপ্রসূ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি হিসেবে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ যাওয়ার আগের দিন এক মানববন্ধনে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।

দুর্নীতির দুই মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা বাতিল ও তার মুক্তির দাবিতে বুধবার (৩১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন করে বিএনপি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার একদিকে সংলাপের প্রস্তাব করছে, অন্যদিকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি করেছে- এই দুইটা সাংঘর্ষিক এবং তা কখনোই গণতান্ত্রিক কোনো আচরণের প্রতিফলন ঘটায় না। সংলাপের জন্য যে আন্তরিকতা দরকার, সেই আন্তরিকতা প্রমাণ করে না।’

প্রসঙ্গত, বিদেশ থেকে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের নামে আসা দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় জজ আদালত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল। তিন আসামির আপিল এবং দুদকের একটি রিভিশন আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন।

ওই রায় প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার খালেদা জিয়াকে ‘নির্বাচনের বাইরে রাখতে চায়’ বলেই আদালতে এমন রায় এসেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে এতিমখানা ট্রাস্ট মামলার রায়ের পর থেকেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি। তাকে বর্তমানে কারা তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে রাখা হয়েছে।

এদিকে মানববন্ধনে মির্জা ফখরুল বরেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, দেশনেত্রীকে কারাগারে রেখে এখানে কোনো সংলাপ বা কোনো নির্বাচন কখনোই ফলপ্রসূ হবে না। দেশনেত্রীর মুক্তি না হলে কোনো নির্বাচন অর্থবহ হবে না।’ জনগণের ভোটাধিকার ‘ফিরে পেতে’ চলমান আন্দোলন সুসংহত করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।

রাজধানীর তোপখানা রোড থেকে সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত সড়কের এক পাশে এক ঘণ্টার এই মানববন্ধনে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের রায় বাতিলের দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায় তাদের হাতে। মানববন্ধন থেকে ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, ‘ফরমায়েসি রায় মানি না মানব না’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা যায় বিএনপি নেতাকর্মীদের।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল মানববন্ধনে বলেন, ‘আমাদের ৭ দফা দাবি পুরোটাই মেনে নিতে হবে। সবার আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বাতিল করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে এবং জনগনের যে চাহিদা সেই চাহিদা পূরণ করতে হবে। ইভিএম দেওয়া চলবে না। সবার আগে শর্ত হচ্ছে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তার মুক্তি না হলে কোনো নির্বাচনই অর্থবহ হবে না।’

সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বলছি অনুগ্রহ করে গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসুন এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করুন। নির্বাচন দিচ্ছেন কিন্তু সেই নির্বাচনে একতরফাভাবে হেলিকপ্টারে করে জনগণের কাছে যাচ্ছেন। আর আমাদের নেত্রী কারাগারে, আমরা পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি, আমাদের কর্মীরা কোথাও দাঁড়াতে পারে না। এই অবস্থায় কখনোই একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন হতে পারে না।’

মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নজিরবিহীন ও অস্বাভাবিকভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটা উদ্দেশ্যমূলক। সরকার বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন করতে চাইছে। আমরা বলতে চাই, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন দেশনেত্রী ও বিএনপি বয়কট করেছিল, তার জন্য নির্বাচন হয় নাই।

আজকেও বলতে চাই, বেগম খালেদা জিয়া ও বিরোধী দল ছাড়া আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না, এদেশের মানুষ হতে দেবে না।’ ড. মোশাররফ আরও বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৭ দফা দাবি পূরণ না হলে দেশে ‘অরাজকতা ও অনিশ্চয়তা’ সৃষ্টি হবে এবং এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘এতোদিন মন্ত্রীরা বলে এসেছে যে, তারা সংলাপে বিশ্বাস করে না। এখন তারা বুঝতে পেরেছেন, সারা জাতির মনের কথা বুঝতে পেরেছেন, সেজন্য তারা এই সংলাপে রাজি হয়েছেন। আমরা তাদেরকে স্বাগত জানিয়েছি। আমরা একটা কথা বলব, সংলাপ, নির্বাচন ও আন্দোলন এক সাথে চলবে। আমরা এটার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করব। আমাদের সাফল্য যতদিন না আসবে, ততদিন আমাদের এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় এই মানববন্ধনে বক্তব্য দেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, রুহুল আলম চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, মশিউর রহমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মহানগর ঢাকার ইউনুস মৃধা, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, জিএম শামসুলে হক, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুব দলের মোরতাজুল করিম বাদরু, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, ছাত্র দলের আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ।

এছাড়া বিএনপির আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, ফরহাদ হালিম ডোনার, আসাদুজ্জামান রিপন, নূরে আরা সাফা, নাজিমউদ্দিন আলম, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, শামীমুর রহমান শামীম, শাম্মী আক্তার, হারুনুর রশীদ, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, নুরুল ইসলাম খান, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসানসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয় সকাল থেকে। প্রেস ক্লাবের পূর্ব দিকে জলকামানের গাড়ি, এপিসি ও প্রিজন ভ্যানও দেখা যায়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!