• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার মুক্তি-কৌশল নিয়ে পরিবার ও বিএনপিতে যে বিরোধ


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৮, ২০২০, ১১:২১ এএম
খালেদা জিয়ার মুক্তি-কৌশল নিয়ে পরিবার ও বিএনপিতে যে বিরোধ

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাসের দুই বছর পূর্ণ হবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। বিএনপির পুরো ব্যস্ততা এখন আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। নির্বাচনোত্তর সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় দলীয় প্রধানের কারাগারের দুই বছর কীভাবে পালিত হবে—তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি।

যদিও কারাগারে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চরমভাবে বিঘ্নিত হওয়ার অভিযোগ এনে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তার মুক্তির আবেদন করার কথা ভাবছে তারা। তবে পরিবারের এই চিন্তার সঙ্গে একমত নয় বিএনপি। বিষয়টিকে ‘পারিবারিক’ সিদ্ধান্ত হিসেবেই দেখছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবারের পক্ষ থেকে মুক্তির বিষয়ে বিশেষ আবেদনের কথা বলা হলেও দলের অবস্থান ভিন্ন। বিশেষ করে স্বয়ং খালেদা জিয়ার অনুমোদন ছাড়া কোনও উদ্যোগের সঙ্গেই দলকে সম্পৃক্ত করার বিপক্ষে নেতারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটা তো বেগম জিয়ার শারীরিক বিষয়, এটা তো দলের কোনও সিদ্ধান্ত হতে পারে না। তার চিকিৎসা, তার শারীরিক অবস্থার যে অবনতি, তা একান্তই পারিবারিক। এটা তো রাজনৈতিক বিষয় হতে পারে না, দলেরও সিদ্ধান্ত হতে পারে না। তার পরিবার যেভাবে ভালো মনে করবে, সেভাবে করতেই পারে।

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও মুক্তি নিয়ে তার পরিবারের বিশেষ আবেদনের বিষয়টি দলীয় কোনও বিষয় নয়। এটা তার শারীরিক ব্যাপার, রাজনৈতিক বিষয় নয়। দেড় বছর ধরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমাদের দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয় না। ফলে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা কী জানি না। পরিবারের সদস্যরা বিশেষ আবেদন চান, তারাই বলতে পারবেন তার স্বাস্থ্যের অবস্থা। এটা সম্পূর্ণ তার পরিবার ও বেগম জিয়ার ব্যাপার।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তার বোন সেলিমা ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের পরিবারের সদস্যরা বিশেষ আবেদনের কথা ভাবছেন। তবে কবে নাগাদ করা হবে, তা ঠিক করা হয়নি।

আবেদন করার অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিকালে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দর বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে আমি কোনও কথা বলবো না।

২৪ জানুয়ারি বিএসএমএমইউয়ে খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার।

তিনি বলেন, পরিবারের বক্তব্য ছিল আবেদন করা হবে কিনা, তা নিয়ে তারা ভাবছেন। এখন পর্যন্ত ওই বিষয়টির কোনও অগ্রগতি আমাকে জানানো হয়নি।

খালেদা জিয়া আপস করে জেল থেকে বেরুবেন না বলে মনে করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তার মতে, এটা কেবল নিয়মিত জামিনের মধ্য দিয়েই হতে হবে। 
তিনি বলেন, বিএনপি তো রাজপথে ব্যর্থ হয়েছে। এখন আপিল রিভিউ করতে হবে। এজন্য ড. কামাল হোসেন ও মঈনুল হোসেনসহ সিনিয়র আইনজীবীদের শুনানিতে নিতে হবে। উদ্যোগ নিতে হবে বিএনপিকেই।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আইনে যা আছে তা-ই হবে। খালেদা জিয়া তো অসুস্থ। ফলে তার দণ্ডাদেশ সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করে তার ইচ্ছামতো দেশে-বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সুযোগ দেওয়া হোক। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) অনুযায়ী তার জীবন রক্ষার্থে এবং যেহেতু তিনি বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, অত্যন্ত জনপ্রিয় নেত্রী, সাবেক রাষ্ট্রপতির স্ত্রী—এসব বিবেচনা করে তাকে মুক্তি দেওয়া হোক।

এদিকে, খালেদা জিয়ার কারাবাসের দুই বছর হচ্ছে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। দলীয়ভাবে একে সামনে রেখে কোনও কর্মপরিকল্পনা করা হয়নি। দলের কয়েকজন নেতা জানান, তারা দুই বছর ধরে তাদের দলীয় প্রধানের মুক্তি-আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন।

স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানান, দলীয় চেয়ারপারসনের কারাবাসের দুই বছর পূর্তিতে কী করা হবে, মুক্তির বিষয়টিকে কোনোদিক থেকে বিবেচনা করা হবে, তা এখনও বিস্তারিত পরিসরে আলোচনা হয়নি।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দেন আদালত। ওই দিনই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ বাতিল চেয়ে করা আপিলে সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন উচ্চ আদালত। বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা চলছে। দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে গত ১ এপ্রিল বিএসএমএমইউয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সোনালীনিউজ/টিআই

Wordbridge School
Link copied!