• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার সাজা হলে চ্যালেঞ্জে পড়বে বিএনপি


বিশেষ প্রতিনিধি আগস্ট ৯, ২০১৬, ১০:৫৩ এএম
খালেদা জিয়ার সাজা হলে চ্যালেঞ্জে পড়বে বিএনপি

ছয় বছরেরও বেশি সময় পর নতুন নেতৃত্বে সেজেছে বিএনপি। এই নতুন কমিটির হাতে সময় আছে ৭ থেকে ৯ মাস। এর মধ্যেই দলের চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে দায়ের করা একাধিক মামলার রায় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই রায়ের ফল কী হবে তা-ও বোঝা যাচ্ছে। তখন পার্টির কী হবে, সেটিই চিন্তা এবং চ্যালেঞ্জের বিষয় বলে মনে করছেন, বিশ্লেষকরা।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হলে এবং শেষ পর্যন্ত তাঁকে কারাগারে যেতে হলে যৌথ নেতৃত্বে দল পরিচালনার চিন্তা-ভাবনা চলছে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল মামলার দ্রুত গতি দেখে খালেদা জিয়ার সাজার বিষয়টি বিএনপির গণ্ডি পেরিয়ে বাইরেরও আলোচিত বিষয় এখন। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির সম্ভাব্য করণীয় জানতে গিয়ে দলটির নেতাদের কাছ থেকে যৌথ নেতৃত্বের ধারণাই পাওয়া গেছে। তবে এ প্রশ্নে দলীয় ফোরামে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা করেননি চেয়ারপারসন।

শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের মতে, এসব পরিস্থিতিতে কে নেতৃত্বে থাকবেন বা কী করা উচিত হবে সেটা আগেভাগে নির্ধারণ করা যায় না। পরিস্থিতিই বলে দেবে কী করতে হবে তখন। তাঁর মতে, যৌথ বা কালেক্টিভ সিদ্ধান্তে দল পরিচালিত হতে পারে; আবার চেয়ারপারসন ইচ্ছা করলে বিশেষ কয়েকজনকে দায়িত্বও দিয়ে যেতে পারেন। তবে বিএনপির মতো এত বড় একটি দলের নেতৃত্বে সাময়িক শূন্যতা সৃষ্টি হলেও তাতে দল শেষ হয়ে যাবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই ভিসি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়; কিন্তু তাতে মুক্তিযুদ্ধের গতি স্তব্ধ হয়নি।

অন্যদিকে, এমন একটি সময়ে বিএনপি এই নতুন নেতৃত্ব পেল, যখন দলটি ঘরে-বাইরে চরম বৈরী পরিস্থিতির শিকার। নেতাকর্মীরা মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত। কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম হতাশা। আন্দোলনের মাঠে বারবার ব্যর্থ হতে হচ্ছে তাদের। নতুন নির্বাচনের দাবি রয়ে গেছে এখনো অধরা।

ইতোমধ্যে দুর্নীতি মামলায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৭ বছরের সাজা এবং ২০ কোটি জরিমানা করেছেন আদালত। এই রায়ের পর যতটুকু আন্দোলন করার ছিল বিএনপি’র পক্ষ থেকে এর কিয়দংশও তারা দেখাতে পারেননি রাজনীতির মাঠে।

রাজনীতি বিশ্লেষকেরা বলছেন, বর্তমান এই পরিস্থিতিতে বিএনপির নতুন নেতৃত্বের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। কেবল সাংগঠনিক সক্ষমতা ফিরিয়ে আনাই নয়, পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীন দলের মোকাবেলায় দূরদর্শী সিদ্ধান্তও নিতে হবে তাদের। অন্যথায় পিছিয়ে পড়তে হবে টিকে থাকার লড়াইয়ে।

গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ও রাজনীতি বিশ্লেষক ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপির নতুন কমিটির হাতে সময় আছে ৭ থেকে ৯ মাস। এর মধ্যেই দলের চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে দায়ের করা একাধিক মামলার রায় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই রায়ের ফল কী হবে তা-ও বোঝা যাচ্ছে। তখন পার্টির কী হবে, সেটিই চিন্তা এবং চ্যালেঞ্জের বিষয়। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাজা হয়েছে। এর প্রতিবাদে দলের ভেতরে খুব একটা নড়চড় হয়নি। এতে করে ক্ষমতাসীন দলেরও সাহস বেড়েছে।

ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মাসখানেকের মধ্যেই বেগম খালেদা জিয়াকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ও কারাবন্দী নেতাদের মুক্তির দাবিতে রাস্তায় বেরিয়ে আসতে হবে। তার উচিত হবে, নতুন কমিটি নিয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই বৈঠক করা এবং নতুন করে দিকনির্দেশনা দেয়া। তিনি বলেন, নির্বাচন, আইন, কৃষি বিষয়সহ ২০টি খাত চিহ্নিত করে করণীয় নির্ধারণ করতে দলের নতুন উপদেষ্টাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় ভালো হোক-মন্দ হোক বিশাল কমিটি দিয়ে তেমন কোনো লাভ হবে না।

গত শনিবার বিশাল কলেবরের নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে বিএনপি। কমিটি গঠনে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে তরুণদের। নতুন করে পদ পেয়েছেন অনেকে। পদ পেয়ে যেমন খুশি নেতারা, তেমনি প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় আছে হতাশাও। হতাশা থেকে ক্ষোভেরও বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। কিছু নেতা চিন্তা করছেন পদত্যাগেরও। তবে দলটির হাইকমান্ড বলছে, কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়ায় কিংবা কমিটিতে জায়গা না হওয়ায় ক্ষোভ থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে এটি সাময়িক। সবাইকে সাথে নিয়েই বিএনপি এগিয়ে যাবে।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্টই বলেছেন, ষষ্ঠ কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেছেন। এই কমিটিকে নিয়েই বিএনপি আগামী তিন বছর রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করবে। তিনি বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের যখন একটি কমিটি করা হয়, তখন কিছুসংখ্যক যোগ্য মানুষও পদবঞ্চিত হন। এটা স্বাভাবিক। কারণ যোগ্য লোকের সংখ্যা থাকে বেশি, সবাইকে স্থান দেয়া দলের পক্ষে সম্ভব হয় না।

দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির নতুন মুখ আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শিক্ষক, পেশাজীবী, নারী, সংখ্যালঘু ও তরুণ নেতৃত্ব সবদিকের সমন্বয় ঘটেছে নতুন কমিটিতে। চমৎকার এবং সময়োপযোগী একটি কমিটির নজির এটি। তিনি বলেন, হতাশার আসলে কোনো জায়গা নেই। কারণ রাজনীতিবিদদের কঠিন সময় পার করার সক্ষমতা যেমনি থাকতে হয়, তেমনি ধৈর্যও ধারণ করতে হবে। তিনি জানান, নতুন কমিটি গঠনের ফলে সাংগঠনিক দুর্বলতাও কেটে যাবে। জেলাসহ সংগঠনের সব পর্যায়ে আস্তে আস্তে নতুন কমিটি হবে।

নতুন কমিটির রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জনগণকে সাথে নিয়ে চলমান অগণতান্ত্রিক অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ তৈরি করাই বিএনপির নতুন কমিটির সামনে মূল চ্যালেঞ্জ। গণতন্ত্রহীনতার কারণে জঙ্গিবাদসহ যেসব অশুভ শক্তির উত্থান ঘটেছে, কেবল একটি প্রতিনিধিত্বশীল সরকারই পারে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের নতুন উপদেষ্টা মো: জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে হটানোই বিএনপির নতুন কমিটির সামনে মূল চ্যালেঞ্জ। জনগণ এ সরকার থেকে মুক্তি চায়। জনগণকে সাথে নিয়েই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে বিএনপি।

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম বলেন, বিএনপি কঠিন সময় পার করছে। সঠিক ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে আগামী দিনে পথ চলতে হবে। সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে মাঠের শক্তি বাড়ানোর দিকে এখন থেকেই নজর দিতে হবে।

আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আদায় করাই এখন বিএনপির সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জের বিষয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!