• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

খালেদার মুক্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাকে জোবাইদার ফোন


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ১১, ২০১৯, ১২:৪৫ পিএম
খালেদার মুক্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাকে জোবাইদার ফোন

ঢাকা : রাজপথ শীতল, রাজনীতিতেও দৃশ্যত সুনসান অবস্থা বিরাজ করছে। তবে পর্দার অন্তরালে বড় দুই দলের মধ্যে চলছে আলোচনা। এ আলোচনা সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তিকে ঘিরে। রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে মুক্তি পাচ্ছেন খালেদা জিয়া। প্রক্রিয়াটা কী তা এখনো অস্পষ্ট।

রোববার (১০ মার্চ) খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশেষায়িত হাসপাতাল ছাড়া চিকিৎসাসেবা নেবেন না বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।

নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। বার্তা আদান-প্রদানের সিঁড়ি হিসেবে ভূমিকা রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি।

ওই সূত্রের দাবি- খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য উচ্চমহল থেকে কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। শর্তের মধ্যে রয়েছে, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী প্রার্থীদের শপথ। বিজয়ীরা শপথ নিলে খালেদার মুক্তির পথ খোলাসা হবে বলে আভাস মিলেছে।

বিএনপি ও তাদের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় জাতীয় নির্বাচন দাবি করে আসছে। একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছে। নীতিগত এই সিদ্ধান্তের বিপরীতে অবস্থান নেওয়ার জন্য বিজয়ী সংসদ সদস্য সুলতান মো. মনসুরকে বহিষ্কার করেছে গণফোরাম ও ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপিও সারা দেশে দলের অন্তত শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করেছে।

বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থকদের কাছে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি। কৌশল নিয়ে আলোচনাও চলছে নীতিনির্ধারণী ফোরামে। বিএনপির প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা ও জিয়া পরিবারের সদস্যরা কূটনীতিকদের মাধ্যমে এবং সরাসরি সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন। শাশুড়ির মুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন উপদেষ্টার সঙ্গে সম্প্রতি ফোনে কথা বলেছেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান।

এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিশেষ আদালত। কারাগারে থাকা অবস্থায় এই মামলায় উচ্চ আদালত তার সাজা আরো পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছর করেছেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের আরেকটি মামলায় তার সাজা হয়েছে সাত বছর। যে মামলায় খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন, সেটিতে গ্রেফতারের দেড় মাসের মাথায় জামিন মিললেও তার মুক্তির পথে বাদ সেধেছে আরো ৩৫ মামলা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আইনি লড়াই করে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। তার যুক্তি ও বিশ্লেষণ হলো বিচার বিভাগ সরকারের নিয়ন্ত্রণে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী না চাইলে খালেদা জিয়ার জামিন বা মুক্তি মিলবে না। একই মন্তব্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরেরও। তিনি বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুক্তির বিষয়টি এখন রাজনীতিক সিদ্ধান্তের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দলের সিনিয়র এক নেতা বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে বিএনপির লক্ষ্য হলো- আইনি লড়াই জোরদার, রাজপথে আন্দোলন, সরকারের সঙ্গে দেনদরবার ও প্রভাবশালী বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে কূটনৈতিক পর্যায় থেকে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি। এজন্য সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই দফা বৈঠকে খালেদা জিয়ার মুক্তির পথ সন্ধানে করণীয় নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। সেখানে নানা প্রস্তাব উঠে আসে। এছাড়া নির্বাচনের পর খালেদা জিয়ার সিনিয়র আইনজীবী প্যানেলের সদস্যরা কয়েক দফা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন।

বিএনপির মধ্যসারির প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতি নিয়ে নানা মহলে গুজব ওঠা অস্বাভাবিক নয়। নির্বাচনের আগে এমন গুঞ্জন ছিল যে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন। এরপর নির্বাচনের পর এখন আলোচনা হচ্ছে নির্বাচিত এমপিরা শপথ নিলে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। নির্বাচনের আগে যে কথা উঠেছিল তার কোনো ভিত্তি বাস্তবে দেখা যায়নি। আর এখন যে আলোচনা আছে এর কোনো ভিত্তি আছে কি না সময় বলে দেবে। কারণ, গবেষকদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী গুজবের শতকরা ৭৫ ভাগ সত্য হয়।

বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে এই মুহূর্তে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। সীমাহীন কষ্টের মধ্যে এখন খালেদা জিয়া দিন কাটাচ্ছেন। এভাবে আর কিছু দিন থাকলে তাকে সুস্থভাবে আর নাও ফিরে পাওয়া যেতে পারে। এজন্য প্যারোলে মুক্ত করতে সরকারের কাছে একটি প্রার্থনা করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!