• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

খুনি হাসানের কোমরেই ছিল ধারালো ছুরি


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১৭, ২০১৯, ১০:১০ এএম
খুনি হাসানের কোমরেই ছিল ধারালো ছুরি

ঢাকা : কোমরে ধারালো ছুরি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় আবুল হাসান। টার্গেট ছিল ফারুককে যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই আঘাতের। কিন্তু ফারুক হাজিরা দিতে ঢাকা থেকে সরাসরি আদালতে আসায় সে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। কিন্তু মেজাজ ঠিক রাখতে পারেনি হাসান, কাঠগড়ায় ওঠার পরই সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে আঘাত করে বসে মামাতো ভাই ফারুককে। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি, বিচারকের খাসকামরায় গিয়েও উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে আবুল হাসান।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, হাসানের নানা ও ফারুকের দাদা হাজি আবদুল করিমের (৭৫) সম্পত্তি নিয়ে ছেলেমেয়েদের মধ্যে চরম বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে বেশ কয়েকবার ঝগড়াঝাটিও হয়। 

গত ২০১৩ সালের ২৬ আগস্ট তাদের মধ্যে মারামারি হলে হাজি আবদুল করিম নিহত হন। পরে এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আসামি করে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ থানায় মামলা করেন বৃদ্ধের স্ত্রী সাফিয়া বেগম।

এতে আসামি ফারুক গ্রেফতারের পর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে জানান, হত্যাকান্ডে হাসানও জড়িত ছিল। এরপর আটজনের নাম উল্লেখ করে চার্জশিট দেয় পুলিশ। ফারুককে ৪ নম্বর ও হাসানকে ৬ নম্বর আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এরপর থেকে আসামিরা আত্মগোপনে চলে যায়। জামিন পেয়ে ফারুকও পালিয়ে যান ঢাকায়। তবে নানা কারণে মামলার গত ছয় বছরে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।

মামলার ঘানি টানতে গিয়ে দিনমজুর দুই পরিবারই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এদিকে পুলিশের কাছে নিজের নাম বলায় মামাতো ভাই ফারুকের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয় হাসান। দুজনের মাঝে দেখা দেয় চরম বিরোধ। এক সময় প্রতিশোধ নিতে হাসান মরিয়া হয়ে ওঠে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এক সময় ফারুকের সঙ্গে ভালো সম্পর্কও গড়ে তুলে সে। ফোনে তাদের যোগাযোগও বাড়ে। তবে ফারুক ঢাকা থাকায় নিয়মিত হাজিরা দিতেন না, প্রায়ই গড়হাজিরা থাকত। গত সোমবারও তিনি মামলায় হাজিরা দিতে চাননি। কিন্তু মামলায় হাজির না হলে জামিন বাতিল হবে- এমন মিথ্যা ভয় দেখিয়ে ফারুকের আদালতে আসা নিশ্চিত করে হাসান।

ফোনে তাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হলেও অবশেষে রাজি হন ফারুক। এ সুযোগে তাকে হত্যার সব পরিকল্পনা করে রাখে হাসান। আদালতে আসার সময় বাড়ি থেকেই ছুরিটি নিয়ে আসে। টার্গেট ছিল মামাতো ভাইকে যেখানে পাবে সেখানেই হত্যার। কিন্তু ফারুক ঢাকা থেকে সরাসরি আদালতে চলে যান। এ সময়ও তাদের মধ্যে বেশ তর্ক-বিতর্ক হয়। একপর্যায়ে ডাক এলে তারা কাঠগড়ায় যান। তখন বিচারকের সামনেই ফারুকের ওপর অতর্কিতে হামলা করে বসে হাসান। ছুরি দিয়ে দুটি আঘাত করার পর ফারুক কাঠগড়া থেকে বের হয়ে আত্মরক্ষার জন্য বিচারকের খাসকামরায় গিয়ে আশ্রয় নেন।

সেখানে গিয়েও রক্ষা পাননি। টেবিলের ওপর ফেলেই তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে ঘাতক। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তাকে ওই কক্ষের মেঝেতে ফেলেও আঘাত করা হয়। তখন আদালতে অন্য একটি মামলার হাজিরা দিতে আসা কুমিল্লার বাঙ্গরা থানার এএসআই ফিরোজ এগিয়ে গিয়ে হাসানকে আটক করেন। এ সময় আদালত কক্ষে বিচারক, আইনজীবী ও অন্য আসামিদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভয়ে সবাই ছোটাছুটি শুরু করেন। পরে গুরুতর জখম ফারুককে কুমিল্লা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ব্যাপারে ঘাতক হাসানের বাবা অহিদ উল্লাহ বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে আমাদের বাড়ি অনেক দূরে। হত্যাকান্ডের দিন আমার ছেলে হাসান ওই গ্রামে (কান্দিগ্রাম) ছিল না। অথচ মামলায় তাকে জড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে হাসানের মনে জেদ ছিল। তবে এমন ঘটনা ঘটাবে তা কেউই ভাবিনি।’ 

কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ছালাহ উদ্দিন জানান, হাসানকে একমাত্র আসামি করে বাঙ্গরা থানার এএসআই ফিরোজ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে।

তবে আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, একটি হত্যা মামলায় আসামি করায় ক্ষোভ থেকে পরিকল্পিতভাবেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে হাসান।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘এজলাস কক্ষে এমন ঘটনা অনাকাঙ্খিত। এ রকম জায়গায় কীভাবে একজন মানুষ ধারালো অস্ত্র নিয়ে আসতে পারে, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এতে নিরাপত্তাগত দিক থেকে কোনো গাফিলতি থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!