• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খেলাপি কমাতে মন্দ ঋণ বেচাকেনার সুযোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৯, ০১:১৩ পিএম
খেলাপি কমাতে মন্দ ঋণ বেচাকেনার সুযোগ

ঢাকা : ব্যাংক খাতে মন্দ ঋণ বেচাকেনার সুযোগ আসছে। মূলত উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণ কমাতে ঋণ বেচাকেনার এই সুযোগ দিতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে ঋণখেলাপি ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান যাতে আদালতে গিয়ে সহজে কোনো ধরনের স্থগিতাদেশ নিতে না পারেন সেটিও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

সূত্রগুলো বলছে, নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ আর বাড়বে না। ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে তিনি এরই মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেন সরকারি বেসরকারি তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে। তারই আলোকে আগামীকাল আনুষ্ঠানিকভাবে একটি পরামর্শক সভা ডেকেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। বেলা ৩টায় ডাকা বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়, আইনজ্ঞ, ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতনরা থাকবেন। বৈঠক উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ একটি প্রস্তাবনা তৈরির কাজ করছে। তাছাড়া মন্দ ঋণ কমাতে কী কী বাধা সামনে আসে সেগুলো মতামত আকারে উপস্থাপন করবেন সরকারি-বেসরকারি তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা।

ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণ ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৮৩ হাজার কোটি টাকাই মন্দ। অর্থাৎ মোট খেলাপি ঋণের ৮৪ শতাংশই মন্দ। এর মধ্যে সরকারি ছয় ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের রয়েছে ৪০ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। সরকারি এ ছয় ব্যাংকের মন্দ ঋণের হার তাদের মোট ৪৮ হাজার ৮০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের প্রায় ৮৫ ভাগ।

তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। আর বছর ব্যবধানে বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। অবলোপনকৃত ঋণ যোগ করলে এর পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। এদিকে বড় অঙ্কের এই ঋণ আদায়ে বড় বাধা আইন। অনেক ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান আদালতে গিয়ে অর্থ পরিশোধে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক এবং তফসিলি ব্যাংকগুলো নানাবিধ পদক্ষেপের কথা বললেও কার্যত কমছে না খেলাপি ঋণ। কিন্তু ব্যাংকাররা বলছেন, ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ কমে যাবে। কারণ নতুন ব্যাংকগুলো নিজেদের আর্থিক অবস্থান ভালো দেখাতে বিশেষ সুবিধা দিয়ে গ্রাহকের ঋণ নিয়মিত করে থাকে।

জানা গেছে, খেলাপি ঋণের এই উচ্চ হার ব্যাংকের আর্থিক সূচকের কেবল অবনতিই করছে না। বাড়িয়ে দিচ্ছে ব্যাংকের সুদহার। অনেক ব্যাংক নির্ধারিত নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) রাখতেও ব্যর্থ হচ্ছে। মূলধন ঘাটতিতে পড়ছে কিছু ব্যাংক। এমন প্রেক্ষাপটে দেশি ও বিদেশি সংস্থা ও ব্যক্তিমহল থেকে বারবার সমালোচনা আসছে।

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণের এই নাজুক চিত্র পাল্টাতে এবার মন্দ ঋণ বেচাকেনার সুযোগ উন্মুক্ত করে দিতে চায়। তার জন্য একটি রূপ নকশা তৈরি করা হচ্ছে। এটি কার্যকর হলে, বিধি মোতাবেক, ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠানের দায় কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান কিনে নিতে পারবেন। কিনে নিয়ে ব্যাংকের দায় পরিশোধ করে দেবেন। ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওই কারখানা কিংবা প্রতিষ্ঠান চাইলে সচল করতে পারবেন। সেটি না করতে চাইলে কোম্পানির সম্পত্তি ও যন্ত্রপাতিগুলো বিক্রি করে দিতে পারবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের অনেক দেশে মন্দ ঋণ বেচাকেনার পদ্ধতি কার্যকর রয়েছে। এতে ব্যাংকের খাতায় খেলাপি ঋণ কমে যায়। তবে এর মাধ্যমে যাতে কোনো ভালো গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটি বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। কারণ অনেক ভালো উদ্যোক্তা বা বিনিয়োগকারী সাময়িক অসুবিধায় কিংবা ব্যবসায়িক কারণে ঋণখেলাপি হয়ে যেতে পারে। সেটিকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে কেউ যাতে ফায়দা নিতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে।

তাছাড়া এককালীন ডাউন পেমেন্ট বাড়ানোর মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায়ের কথা ভাবছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাধারণত তাছাড়া যারাই উচ্চ আদালতে রিট করবেন তাদের আগে পাওনা অর্থের অর্ধেক পরিশোধ করে নিতে হবে।

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, খেলাপি ঋণের উচ্চ পরিমাণ ও হারের কারণ ব্যাংক খাতে সুশাসনের ঘাটতি। এই ঘাটতি এক সময় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ছিলো। বেসরকারি ব্যাংকগুলো তার মূলধন ঘাটতির ভয়ে ঋণ বিতরণে সতর্ক থাকত। কিন্তু বর্তমানে সেটিও নেই। ফলে সার্বিকভাবে খেলাপি ঋণ কমাতে তদারকি এবং পদক্ষেপে ঘাটতি রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ভোক্তাঋণ আদায়ে কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে ক্রেডিট কার্ডসহ ছোট ছোট ঋণ ব্যাংকের পক্ষে আদায় করতে এসব প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তবে তারা কেবল ঋণ আদায় করে ব্যাংক থেকে একটি কমিশন পেয়ে থাকে। কিন্তু ঋণ বেচাকেনা হয় না।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!